সকালে ঘাসের ডগার শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের শিশির আর সন্ধ্যায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরছে বগুড়ার শহর ও গ্রাম। ফলে শীত নিবারনে গ্রামবাসী আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোষকের দোকানে। যে কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষকের কারিগরদের।
শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বগুড়া শহরের লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায় এসব শীত বস্ত্রের। বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি।
বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুড়ে দেখা গেছে, পোশাক মার্কেটে শীতের গরম কাপড় কেনার ধুম এখনো পড়েনি। স্বাভাবিক কাপড় ক্রয় করতে এসেছেন ক্রেতারা। তবে প্রতিটি দোকানিরা বলছেন, শীতের বেচা-কেনা এখনো শুরু হয়নি। আরো কিছু দিন পর জমে উঠবে শীতের কেনাবেচা।
শীতের গরম কাপড়ের তেমন চাহিদা না থাকলেও তুলা বাজারে শুরু হয়েছে তুলার বেচা কেনা আর লেপ তৈরির ধুম। ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী হরেক রকমের তুলা দিয়ে তৈরি করছেন ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের লেপ। লেপ তৈরির কারিগররা বলছেন শীতের তীব্রতা শুরু হলে লেপ তৈরির ব্যস্ততা আরো বেড়ে যাবে। প্রতি বছরের এ সময়টায় আমাদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।
বগুড়া শহরের কাঁঠালতলা ৩নং রেলঘুমটির পিন্টু ট্রেডার্সের লেপ তৈরির কারিগর শফিকুল ইসলাম জানান, বড় আকারের লেপ তৈরির মজুরী ৩৫০ টাকা আর মাঝারি আকারের লেপ তৈরির মজুরী ২০০ টাকা। তুলা, কাপড়, কভার এবং মজুরীসহ একটি বড় লেপ তৈরিতে মোট খরচ পড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা। আর মাঝারী আকারের লেপে মোট খরচ পড়ে ১ হাজার ৫০০টাকা। এখন তারা সারাদিনে ৭-৮টি লেপ তৈরি করেন। তিনি আরো বলেন, ভালো মানের তুলা ২৫০ টাকা প্রতি কেজি। আর গার্মেন্টেস এর বিভিন্ন রকমের তুলা ৫০-১০০ টাকা প্রতি কেজি। ১টি বড় লেপ তৈরি করতে ৪ কেজি তুলার প্রয়োজন হয়। আর মাঝারী আকারের লেপে আড়াই কেজি তুলা লাগে। বড় আকারের লেপে ১০ গজ লাল কাপড়ের প্রয়োজন হয়। আর বেশিরভাগ লেপ লাল কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়।
লেপ তৈরি করতে আসা শহরের চারমাথা নিশ্চিন্তপুর এলাকার শিউলি বেগম বলেন, বাড়িতে যে লেপ আছে তা দিয়ে আগের লোকসংখ্যার চাহিদা পূরণ হয়েছে। তবে কিছু দিন আগে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। জামাই বাড়িতে নতুন লেপ দিতে হবে তাই শীত শুরুর আগে-ভাগেই পছন্দমত লেপ তৈরি করে নিচ্ছি।
তুলা ব্যবসায়ী ফজলে রাব্বি বলেন, এখন শীতের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। শীতের প্রভাব এখনো তেমন পড়েনি। তবে শীতের পূর্ব প্রস্তুতির জন্য লোকজন আগাম লেপ তৈরি করছেন। আরো কয়েকদিন পর কাজ বেশি হবে। আমার দোকানে কারপাল, উল, কাপার্স, শিমুল ও গার্মেন্টেস এর কালার জাতের তুলা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, শীতের শুরু থেকে অন্তত ৪টি মাস লেপ-তোষক বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এ সময় সবচেয়ে বেশি লেপ বিক্রি হয়ে থাকে। যে কারণে চাহিদার কথা মাথায় রেখে লেপ সেলাইকর্মীদের সংখ্যাও বাড়াতে হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম