ময়মনসিংহের ফুলপুরে শিক্ষক সংকটের কারণে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বড় ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা যায়, ফুলপুরে মোট ১১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংহেশ্বর ইউনিয়নের পুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বওলা ইউনিয়নের আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান অবস্থা খুবই নাজুক। প্রায় দুই বছর ধরে মাত্র দুজন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে এসব বিদ্যালয়। শিক্ষক সংকটের কারণে বড় ছাত্র ছাত্রী দিয়ে তারা পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির রুনা আক্তার ও তৃষা আক্তার নামে দুজন ছাত্রী প্রাক-প্রাথমিকে ক্লাস নিচ্ছে। এসময় কথা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান পান্নার সাথে। তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনজন সহকারী শিক্ষকের পদ খালি। শিক্ষক সংকটের কারণে আমরা ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি। এখন শিক্ষার্থী ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বার বার জানালেও আমাদেরকে শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় দেখা যায়, যেখানে ৪ জন শিক্ষক আছেন সেখানে আরও ১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা বা উপজেলা সদর থেকে একটু দূরে হওয়ায় এখানে তিনটি পদ খালি থাকলেও ১জন শিক্ষকও দেওয়া হয় না।
আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস পরিচালনার কথা উল্লেখ করে বলেন, আগের উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট বলেছিলাম, ম্যাডাম, আমার মাত্র একজন শিক্ষক। ক্লাস চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
জবাবে তিনি বলেন, একজন দিয়েই চালিয়ে যান। এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বদলালেও আমাদের ভাগ্য বদলায়নি। একই কথা বলেন পুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিউলী আক্তার। তিনি জানান, এখানে প্রধান শিক্ষকসহ তিনটি পদ খালি। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বার বার জানিয়েও আমরা কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। এরফলে পাঠদানে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। সুজন নামে একজন ছাত্র অভিভাবক বলেন, শিক্ষক সংকটের ফলে ছাত্র দিয়ে ছাত্র পড়ানোর কারণে আমাদের কোমলমতি শিশুদের ফাউন্ডেশন গড়ছে না। ভিত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা সদস্য রুস্তম আলী ভুলন বলেন, অচিরেই শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ না দিলে ভেঙে পড়বে শিক্ষা ব্যবস্থা। খবর নিয়ে জানা যায়, শুধু এই তিনটি নয়, এসব বিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ১ জন, ২ জন করে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্যাহ আল বাকী বলেন, অল্প কিছু দিন হলো এ উপজেলায় আমার নিয়োগ হয়েছে। আমি আসার পর যাচাই বাছাইপূর্বক শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দানের জন্য আমরা তথ্য পাঠিয়েছি। আশা করা যায়, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই শূন্য পদে আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবো।
বিডি প্রতিদিন/এএ