ভাল ফলাফলের আশায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সারা দিয়ে নিজেদের ব্যবহৃত স্মার্ট মোবাইল ফোন বিদ্যালয়ে জমা দিয়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। তবে মোবাইল ফোন জমা দেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
বিদ্যালয়ে এ বছর মোট ১৫৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। স্মার্ট ফোন আসক্তি থেকে বের হয়ে ভাল ফলাফলের আশায় পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছে এ সকল শিক্ষার্থীরা। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে মোবাইল ফোন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৫৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল অনেক খারাপ ছিল। বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেমিনারের মাধ্যমে জানা যায়, ফলাফল খারাপ হওয়া শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ স্মার্ট ফোনে আসক্ত ছিলো। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় স্মার্ট ফোনে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ফ্রি-ফায়ার, পাবজিসহ অনলাইন সকল মাধ্যমে সময় ব্যয় করতো। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসের মধ্যেও মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। এছাড়াও প্রতিটি অভিভাবকের দাবি তাদের ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগ সময় মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বার বার বলার পর দুই একবার পড়ার টেবিলে বসলেও মোবাইল ব্যবহার করতো।
চলমান টেস্ট পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সেমিনার করেন। সেমিনারে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন স্মার্ট আসক্তির কুফল সম্পর্কে। প্রধান শিক্ষকের পরামর্শ শুনে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় নিজেদের ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন বিদ্যালয়ে জমা দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, সোহেল রানা, শাহিন আলমসহ প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী জানায়, দীর্ঘদিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে তারা স্মার্ট ফোনে আসক্ত হয়েছিল। সারাক্ষণ ফেসবুক, ইউটিউব, গেমসহ অনলাইনে সময় পার করতো। বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় এ কারণেই তাদের ফলাফল খারাপ হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে তারা ৪০ জন বন্ধু বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন জমা দিয়েছে। মোবাইল ফোন জমা দেওয়ার পর থেকে একটু একটু খারাপ লাগলেও এখন পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে তারা।
অভিভাবক আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রায় এক বছর আগে অনলাইন ক্লাস করার কথা বলে আমার ছেলে আমার কাছ থেকে একটি স্মার্ট ফোন কিনে নেয়। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হয়েও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঋণ করে একটি মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলাম। মোবাইল ফোন দেওয়ার পর থেকেই আমার ছেলে মোবাইলে নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকতো। ঠিকমত খাবারও খেতো না। সারাক্ষণ দেখতাম মোবাইল নিয়ে কি যেন করছে। পড়ার টেবিলে খুব কম বসতো। অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়ে বিদ্যালয়ে মোবাইল জমা দিতে বলেছিলাম। মোবাইল জমা দেওয়ার পর থেকে পড়াশোনায় বেশ সময় দিচ্ছে আমার সন্তান। আশা করি এসএসসিতে ভাল ফলাফল করবে।
প্রধান শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান জানান, আমার বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী আমার কাছে আমার সন্তানের মতো। সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি তাদের ভাল মানুষ হিসাবে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার। এবারের ১৫৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে টেস্ট পরীক্ষায় প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল তুলনামূলক ভালো না। এর কারণ বের করতে গিয়ে দেখি প্রায় ছাত্রই মোবাইল আসক্ত। স্মার্ট ফোনে আসক্তি কমিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে তাদের মোবাইল ফোন বিদ্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান করেছিলাম।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামন বলেন, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন, মাদকসহ সকল অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে প্রতিনিয়ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভা-সেমিনারের পাশাপাশি খেলাধুলার আয়োজন করা হচ্ছে। ভাল ফলাফলের আশায় যে সকল শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন জমা দিয়েছে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।
বিডি প্রতিদিন/এমআই