নাটোরের সিংড়ার সালমা খাতুন নামে এক তরুণী ইউটিউবে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) তৈরির ভিডিও দেখে নিজেই উৎপাদন করার উদ্যোগ নেন। নিজের উৎপাদিত কেঁচো সার জমিতে ব্যবহারে ফসলের ফলন বেড়ে যায়। যা দেখে আশপাশের কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হন (ভার্মি কম্পোস্ট) জৈব সার ব্যবহারে। এতে জমিতে সারের বাড়তি খরচ যেমন বাঁচে তেমনি বাড়ির প্রাকৃতিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নতুন দুয়ার খুলে যায়। দ্বিমুখী সুবিধায় এ সারের চাহিদা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই বানিজ্যকভাবে (ভার্মি কম্পোস্ট) জৈব সার তৈরি শুরু করেন। তা নিজেদের চাষাবাদে ব্যবহার করেন। আবার প্রতি মাসে অন্তত ২৫ হাজার টাকার সার বিক্রি করেন। এতে বছরে আয় হয় অন্তত দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন সালমা পুরোদস্তুর স্বাবলম্বী ।
প্রথমে স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও উপজেলা কৃষি অফিসের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে আগ্রহী হয়ে পরবর্তীতে নিজে আরও বড় পরিসরে সার উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। ইতোমধ্যে বছরে ৩০ টন সার বিক্রি করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছেন তিনি। সালমা খাতুনের মাধ্যমে আশপাশের সব কৃষক এখন জৈব সার উৎপাদন করতে আগ্রহী।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ৫ নং চামারী ইউনিয়নের মহিষমারী গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া সালমা আক্তারের গল্প এটি। জমিতে এ সার ব্যবহারের মাধ্যমে বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখতে এলাকার কৃষকরা তার উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছেন। কৃষক বাবা সানোয়ার হোসেন এবং গৃহিণী মা ময়জান বেগমের একমাত্র কন্যা সালমা। সালমা এসএসসি পাশ করেন বিলদহর কারিগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং এইচএসসি পাশ করেন টেকনিক্যাল বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজ। বর্তমানে সে উদ্যোক্তার পাশাপাশি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর কিশোরী প্রকল্পের আবৃতি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
উপজেলা কৃষি অফিসের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে আগ্রহী হয়ে পরবর্তীতে নিজে আরও বড় পরিসরে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। ইতোমধ্যে বছরে ১০ টন সার বিক্রি করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছেন। সালমার মাধ্যমে আশপাশের সব কৃষক এখন জৈব সার উৎপাদন করতে আগ্রহী।
সালমার বর্তমানে মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে প্রায় ২৫/৩০ মন ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদন করেন। যা ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। নাটোর জেলার বাইরের অনেক কৃষক সালমার এই জৈব সার কিনে নেন। সালমার দেখাদেখি রেনুকা, হাজেরা, সালমা, বিউটি, বুলবুলি, মাসুমা, শাহিনুরসহ ৮/১০ জন এ কাজে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
সালমা জানান, ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে অনলাইন বিজনেস শুরুর চিন্তা করি। এসময় ইউটিউবে ভিডিও দেখে জৈব সার তৈরির কাজে উৎসাহ পান। তারপর কৃষি অফিস থেকে দুদিনের ট্রেনিং করে কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করেন।
তিনি আরো বলেন, কম্পোস্ট সার তৈরির কাজে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সেলিম রেজা স্যারের সহযোগিতা পেয়েছি। তার অনুপ্রেরণায় এ কাজে উৎসাহ পেয়েছি। এখন আমার ৬০টি কম্পোস্ট সার তৈরির হাড়ি বা চাড়ি রয়েছে। আমি নিজেকে একজন সফল নারী এবং উদ্যোক্তা মনে করি।
চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান স্বপন মোল্লা বলেন, সালমা একজন নারী উদ্যোক্তা। তার কাজে অন্যদের ও অনুপ্রেরণা জোগাবে। নারীরা এভাবেই পরিবার ও সমাজ উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। চামারী ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা আমরা করতে প্রস্তুত।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সেলিম রেজা বলেন, সালমা একজন সফল উদ্যোক্তা। সে কম্পোস্ট সার তৈরি করে আসছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ তাকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
বিডি প্রতিদিন/এএ