কিশোরগঞ্জে দর্জি কারিগর সোহান আহমেদ আলিফ (২৩) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশের হাতে গ্রেফতার নিহতের বন্ধু মাসুদ (২৪) এ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। রবিবার বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল আমিনের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এর আগে রবিবার সকালে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের ভাস্করখিলা গ্রাম থেকে মাসুদকে গ্রেফতার করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেফতার মাসুদ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে। রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মাসুদ ও আলিফ একই এলাকার এবং তারা পরস্পর বন্ধু। তারা একসঙ্গে মাদক সেবন করতেন। সম্প্রতি মাসুদ তার বোনের ছেলের জন্য রূপার বিছা কিনেন। মাসুদের বোনের ছেলের জন্য কেনা ওই রূপার বিছা এবং নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা চুরির জন্য সোহান আহমেদ আলিফকে সন্দেহ করেন। আলিফকে অনেকবার বলার পরও চুরির বিষয় স্বীকার করেনি। পরে বোনের ছেলের জন্য কেনা রূপার বিছা ও নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা উদ্ধারের জন্য গত ২০ মার্চ দোকান থেকে মো. অন্তরকে দিয়ে আলিফকে ডেকে নিয়ে যায় মাসুদ। রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের মতি মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে তারা ঘুমের ওষুধ দিয়ে তৈরি ঝাকি নামক মাদক সেবন করে। এ সময় মাসুদ কৌশলে কম মাদক সেবন করে। পরে আলিফকে নিয়ে উলুহাটির বন্দে নিয়ে যায় মাসুদ ও তার সহযোগীরা। উলুহাটির বন্দে নিয়ে গিয়ে আলিফকে রেন্ট্রি গাছের ডাল ভেঙে পিটানো শুরু করে মাসুদ। চুরি করা রূপার বিছা দিতে বললে আলিফ অস্বীকৃতি জানালে বেধড়ক পিটায় মাসুদ ও তার সহযোগীরা। বেধড়ক মারধরের ফলে আলিফ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আলিফের মৃত্যু হলে আসামিরা বাড়ি থেকে দুটি কোদাল এনে মাটি খুঁড়ে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মাটিতে পুতে রাখে। মাসুদকে গ্রেফতারের পর তার দেখানো মতে হত্যার পূর্বে সেবনকৃত ঘুমের ট্যাবলেটের খালি পাতা, খালি কাশির সিরাপের বোতল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাঠি ও লাশ গুম করার জন্য গর্ত খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত দুটি কোদাল উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।এর আগে পরিবারের লোকজন সোহান আহমেদ আলিফকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে গত ২৮ মার্চ তার মা হাওয়া আক্তার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গত বুধবার সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের উলুহাটির বন্দে গাউসুল আজম গোরস্তানের বরাদ্দকৃত জায়গা থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিখোঁজ আলিফের মা লাশের পরনে কালো রঙের জিনস প্যান্ট ও কোমরে কালো রঙের বেল্ট দেখে নিশ্চিত হন এটি তার ছেলের মরদেহ। গত বৃহস্পতিবার মা হাওয়া আক্তার বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ ছয়-সাতজনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই পুলিশ এজাহারনামীয় আসামি হুমায়ুন ও আনন্দকে গ্রেফতার করে।
বিডি প্রতিদিন/এএম