ঘূর্ণিঝড় মোখা গভীর ক্ষত রেখে গেছে কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ এলাকায়। গত তিনদিন ধরে বিদ্যুতহীন এই দুই দ্বীপ এলাকা। ফলে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। অনেক দূর থেকে পানি এনে কোনোরকম পানির তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন এই দুই অঞ্চলের মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই সব ইউনিয়নে বসবাস করেন অন্তত ৪ লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড় মোখার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেন্টমার্টিনদ্বীপ, সাবরাং ও বাহাড়ছড়া। এরই মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই দুই দ্বীপের মধ্যে শাহপরীর দ্বীপে বসবাস করেন ৪০ হাজার ও সেন্টমার্টিনে বসবাস করেন ১০ হাজার মানুষ।
শাহপরীর দ্বীপের ৯নং ওয়ার্ডে বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা জামাল হোছন বলেন, এই এলাকায় প্রায় ২ হাজার পরিবার বসবাস করেন। ঘূর্ণিঝড়ে এই ওয়ার্ডটি একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এখানে সবচেয়ে বেশি খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভ্যানগাড়ি করে দুই কিলোমিটার দূরে একটি টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে হচ্ছে।তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। ফলে অনেকে পানি তুলতে পারছে না। সাবরাং ইউনিয়নে ডিপ টিউবওয়েলের সংখ্যাও কম। ফলে পানি আনতে এক-দুই কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। টেকনাফ উপজেলাটি সাগর ঘেঁষা হওয়ায় যেখানে-সেখানে পানি উঠে না। অনেক জায়গায় পানি উঠলেও তা লবণ মিশ্রিত। এই দ্বীপের মানুষ খুবই ভোগান্তিতে রয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার আনোয়ারা বেগম বলেন, ছোট ঘরটি ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে নিয়ে গেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে ৫ সন্তান নিয়ে আছি। তিনদিন কলা, মুড়ি খেয়ে দিনযাপন করছি। ছেলে-মেয়েদের পাশের এক প্রতিবেশীর কাছে রেখে দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনেন আনোয়ারা।
তিনি আরো বলেন, বেড়িবাঁধ থেকে দুই কিলোমিটার দূরে একটি ডিপ টিউবওয়েল থেকে ১০ লিটার পানি এনেছি। দীর্ঘ লাইন ঠেলে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে পানি আনতে হয়েছে। এখন খাবার বলতে শুকনা খাবার আর পানি। প্রশাসনের কেউ এখনো পর্যন্ত সহযোগিতা করতে আসেনি।
শাহপরীর দ্বীপ ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার পর সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। এই এলাকায় তিনধরে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে আমার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শাহপরীর দ্বীপে। তার মধ্যে জালিয়াপাড়া জেলে পরিবার গুলো খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে থেকে জালিয়াপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় পানির সংকট ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পর এই সংকট আরও বেড়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপের ১২০০ ঘর ও কটেজ ভেঙ্গে গেছে। তার মধ্যে ১ হাজার বসতঘর। দ্বীপের ২ হাজারের বেশি গাছ ভেঙ্গে গেছে। দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, মাঝেরপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচের রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এখন বিদ্যুৎ না থাকায় দ্বীপে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসক দ্বীপ পরিদর্শনে এসে শুকানো খাবার বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতায় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ