২৬ মে, ২০২৩ ১৬:২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা

দেশে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এজন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বলা হয় আমের রাজধানী। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নামতে শুরু করেছে গাছপাকা আম। চলতি মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আম বাজারজাত হওয়া শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, আবহাওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য স্থানে আম বাজারে আসলেও, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম দেরিতে বাজারজাত শুরু হয়েছে। বর্তমানে গুটি ও গোপালভোগ আম কিছুটা নামলেও পুরোপুরি বাজারে পাওয়া যাবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই। এদিকে গত দুই বছরের মতো এবারও গাছ থেকে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেনি জেলা প্রশাসন। ফলে পরিপক্ব আম পাবেন ক্রেতরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবার ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৬০ লাখ গাছে আম চাষাবাদ করা হচ্ছে। চলতি আম মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। সূত্র মতে, প্রতি কেজি আম ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলে জেলায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আম বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর জেলায় ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছিল এবং আম উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া ২০২১ সালে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং ২০২০ সালে ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। তবে এবার আম বাণিজ্যে গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা বৃদ্ধির আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা আম বাণিজ্যের আশা করছেন তারা। 

এদিকে আম চাষি ও বাগান মালিকরা জানান, গত বছর আমের ফলন কম হলেও বাগান মালিকসহ ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দাম পেয়েছিল। কিন্তু এবছর বড় গাছের তুলনায় ছোট গাছে প্রচুর মুকুল আসলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে তুলনামূলক কম ফলন হয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টিতে আমের ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত গাছে যে আম আছে সেগুলো টিকে থাকলে ন্যায্য দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন তারা। অন্যদিকে আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের সরলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফরিয়ারা আমের ওজন বেশি নিয়ে থাকেন। ফলে আম বাগান মালিকরা বাজারে ওজন নিয়ে ব্যপক বিড়ম্বনায় পড়েন। তারা বলেন, জেলার যতগুলো আমের বাজার আছে সবগুলোতেই ৪০ কেজিতে এক মণ ধরা হয়। কিন্তু কোন কোন বাজারে ৪৫-৫২ কেজিতে এক মণ ধরেন ব্যবসায়ীরা। এবারও তা হলে লোকসানের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে এখনও আম বাজার জমজমাট না হলেও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাহারি আমে হাট-বাজার ভরে উঠবে বলে মনে করছেন আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা। চলতি মৌসুমে প্রায় পাঁচ লাখ লোক কর্মমুখর হয়ে উঠবে আমকে ঘিরে। 

ইতোমধ্যে জেলার বৃহৎ আমের মোকাম কানসাট, ভোলাহাট, রহনপুর ও সদরের পুরাতন তহাবাজারে প্রস্তুত করে ফেলেছেন আমের আড়ৎ, আবার কেউ আমের টুকররি, সুতলি, পেপারসহ খড় (ঘাস) মজুদ করছেন। এই আম নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ আগামী ৩-৪ মাস ব্যস্ত সময় পার করবেন। আম ব্যবসায়ীদের মতে, প্রথমে আসবে গোপালভোগ, তারপর গুটি থেকে ক্ষিরসাপাত এবং সবশেষে আসবে আশ্বিনা জাতের আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত বাহারি আমগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ফজলি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, অমর্তভোগ, ত্রিফলা, বৌ-ভুলানী, বৌ-পটানী, ভাদুরী, ক্ষীরসাপাত, আশ্বিনা, জয়েন্তি, জয়না, গুটি, কিষানভোগ, হিমসাগর, মোহনভোগ, মিশরীভোগ, কুয়াপাহাড়ী, সূর্যপুরী, ক্ষুদিক্ষীরসা, লতাবোম্বাই, আলমশাহী, কহিতুর, গোলাপখাস,  আলফানসো, কালিভোগ, কালাপাহাড়, সাহাপসন্দ, মোহনপসন্দ, সিন্দুরী, চৌষা, কালুয়া, ধুলুয়া, দারভাঙ্গা, লক্ষণভোগ, আশ্বিনা, রাজভোগ, বৃন্দাবনি, দুধিয়া, টিক্কা ফরাস, তোতাপুরি, কাঁচামিঠা, হাজীপুরি ইত্যাদি। এছাড়া ভারতীয় জাতের মধ্যে রয়েছে আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশ্র স্পেশাল, ইন্ডিয়ান চোষা, ভারতী, হরদেমনি, রত্না, সরিখাস, মেঘলালণ্ঠন, বিশ্বনাথ চ্যাটার্জি, ভাসতারা, সিন্ধু, চম্পা, সুবর্ণ, নীলউদ্দীন, রাংগোয়াই, অরুনা, আলীপুরী, বেনীসান, নীলাম্বরী, দশরী, কাজলা ও মায়ানমারের-মায়ানমার স্পেশাল, বারি-১, বারি-২, কাটিমন, মিনথলিন ও থাই। 

এই প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, চলতি বছর আমের জন্য অন ইয়ার বা বেশি ফলনের বছর। এবার বাগানের ৯০ ভাগ গাছে আমের মুকুল এসেছিল, আমের ফলনও ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার আমের লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে গড়ে প্রতি কেজি আম ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলে জেলায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

 


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর