৩০ মে, ২০২৩ ২০:৩২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৬ মাসে ১ লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার

এম এ শাহীন, সিদ্ধিরগঞ্জ


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৬ মাসে ১ লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার

বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন সারাদেশে মাদক পাচারের প্রধান রুট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত এ রুট দিয়ে যাত্রাবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মাদক পাচার ঠেকাতে পুলিশ একের পর এক অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে ধরা পড়ছেন অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী, সেই সঙ্গে উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। এতো অভিযানের পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মাদকদ্রব্য পাচার যেন বন্ধ যাচ্ছে না।

এদিকে গত ৬ মাসের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুধু নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও বন্দর অংশে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে সর্বমোট ১ লাখ ৪ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাটলেট উদ্ধার করেন। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় ৪৩ কেজি গাঁজা। এসব অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ১৫ জন মাদক ব্যবসায়ী। যাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে স্ব স্ব থানায় মাদক মামলা দায়ের করা হয়।                                      

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ফেনী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ভারত সীমান্তবর্তী জেলা ও কক্সবাজার মায়ানমার সীমান্তবর্তী জেলা। এসব জেলাগুলো অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রচুর মাদকদ্রব্য প্রবেশ করছে বলে জানা যায়। এসব মাদকদ্রব্য ঠেকাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মাদকদ্রব্য বহন করে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ইয়াবা পাচারকারীদের সর্বশেষ পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম নামি-দামি বিভিন্ন ব্যান্ডের প্রাইভেটকার, বিলাশ বহুল গাড়ী, টাই স্যুট পরে ভদ্রলোক সেজে তারা আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারি এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে সূত্রে জানা যায়।  

তবে এসব মাদকদ্রব্য ঠেকাতে তৎপর নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন। জানা যায়, গত ৬ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ তিনি এ পর্যন্ত ১০টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। এসব অভিযানের মধ্যে গত বছরের ২৮ নভেম্বর ৪৩ কেজি গাঁজা, ১৮ ডিসেম্বর ৩৬ হাজার ইয়াবা, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ৩ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ৫ হাজার পিস ইয়াবা, ১ মার্চ ৯ হাজার পিস ইয়াবা, ৯ মার্চ ১০ হাজার পিস ইয়াবা, ৩ এপ্রিল ২৩ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা, ৯ এপ্রিল ১০ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবা, ২১ মে ২ হাজার পিস ইয়াবা, ২২ মে ৪ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়। তার এসব অভিযানে মাদকদ্রব্যসহ সর্বমোট ১৫ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছেন।

এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা উৎপাদন হয়ে তা বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রতিটি পথে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি বাড়িয়ে এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার রুটে নিয়মিত তল্লাশি চৌকি বসানো হলে সারাদেশে মাদক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেকটা কম থাকবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্য পাচারের তুলনায় কম। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি কঠোর নজরদারিতে রাখলে মাদকের এই বিশাল বহর ঢাকা হয়ে সারাদেশে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে না।

অভিযানের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি পালন করছি। আমরা মাদকদ্রব্য পাচার হওয়ার যেকোনো খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও চেকপোস্ট বসিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের এমন অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর