৫ আগস্ট, ২০২৩ ১২:৩৯

অনেকটাই দৃশ্যমান দেশের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

অনেকটাই দৃশ্যমান দেশের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

যমুনার নদীর ওপর দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর’ নির্মাণ কাজ চলেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের দুই প্রান্তে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এই সেতুর নির্মাণ কাজ। সবমিলিয়ে এই প্রল্পের প্রায় ৬১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তা জানিয়েছেন। 

নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উত্তর পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। শত শত শ্রমিক বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ পাইলিংয়ের কাজ করছেন, কেউ স্পেনের কাজ করছেন। আবার কাউকে ঢালাইয়ের কাজ করতে দেখা গেছে। 

ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এই রেলসেতুর দুইপাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেণ্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ৫০টি পিলারের ওপর বসবে ৪৯টি স্প্যান। ইতোমধ্যে ৩২টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। আর স্প্যান বসেছে ২২টি। সবমিলিয়ে প্রকল্প কাজের ৬১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

জাপানি আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই ও টিওএ করপোরেশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বাস্তবায়ন করছে।

ওভার ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সাইড ইঞ্জিনিয়ার সামিউল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশে কাজ হচ্ছে। দিন রাত কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কাজ দেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট। এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো শ্রমিক বা কর্মকর্তারা বড় ধরনের কোনো আঘাত পাননি। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে।

ইঞ্জিনিয়ার মো. রবিউল আলম বলেন, এই রেল সেতু চালু হলে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ২২টি জেলার সঙ্গে ট্রেন চলাচল আরও সহজ হবে। একই সঙ্গে এটি আন্তঃএশিয়া রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবে কাজ করবে। এ রেলসেতু দেশের উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও সেতুটি উদ্বোধনের পর স্থানীয়দের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেড়ে যাবে।

টাঙ্গাইল-২ (ভূয়াপুর-গোপালপুর) সংসদ সদস্য তানবীর হাসান ছোট মনির জানান, টাঙ্গাইলবাসীর একটা স্বপ্নের প্রজেক্ট ইকোনমিক জোন। এই রেল সেতুর উত্তর পূর্ব পাশে ইকোনমিক জোন নির্মাণের জন্য কাজ চলছে। এখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মস্থানের জায়গা হবে। এই রেল সেতু নির্মাণ হলে যে কোনো জায়গা থেকে সহজেই পণ্য পরিবহন সহজ হবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চালের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের রেল সেতু একটি সেতু বন্ধন করে দিবে। 

বঙ্গবন্ধু সেতু ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুর কাজ শেষ হলে ১২০ কিলোমিটার গতিতে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এতে মানুষের যাতায়াত যেমন সহজ হবে তেমনই উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ খুলবে সম্ভাবনার নানামুখী দুয়ার। এই ভাবে কাজের গতি অব্যাহত থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেতুটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর