চাঁদপুরের হাইমচরে ভাড়াটিয়া লোকদের মাধ্যমে আপন ছেলে মো: আরিফ হোসেনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৪৩) ও আসামি মো: জয়নাল গাজীকে (২৪) মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামি ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও মাহবুব মোল্লাকে (২৬) আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সাথে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বুধবার দুপুরে চাঁদপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় প্রদান করেন। হত্যার শিকার আরিফ হোসেন জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউপির মাছুম খান বাড়ীর মিজানুর রহমান খানের ছেলে এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুকি বেগমের ছেলে। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো: জয়নাল গাজী ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়ার গাজী বাড়ীর গণি গাজীর ছেলে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের ইউছুফ মোল্লা ও মাহবুব মোল্লা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সাথে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এই বিষয়ে মা ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজি বাড়ীর আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউ এর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগিদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে কেটে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায়, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসে এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার পর সকাল ৯টায় আরিফের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ওইদিন আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী এপিপি বদিউজ্জামান কিরন জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন সময়ে আদালত ২০ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক এই রায় প্রদান।
আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে থাকলেও রায় প্রদানকালে সকল আসামি অনুপস্থিতিতে ছিল। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো: জয়নাল আবেদীন।
বিডি প্রতিদিন/এএ