গাজীপুরের পূবাইলের ইফতি হত্যার রহস্য ৬ বছর পর উদঘাটন করল গাজীপুর পিবিআই। এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার উত্তরআদিপুত গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে মৃদুল হাসান (৩০) ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী পূর্ব থানার শিলমুন মন্ডলবাড়ী এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে ফরিদ আহম্মেদ (৩২)।
নিহত ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ইফতি (২০) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পূবাইল থানা এলাকার হারবাইদ পূর্বপাড়া এলাকার মৃত শামসুদ্দিন আহমেদের ছেলে। তিনি রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করতো। তিনি হারবাইদ পূর্বপাড়া এলাকায় নিজেদের নির্মাণাধীন বিল্ডিং দেখাশুনা করতো।পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ইফতি টঙ্গীর হারবাইদ এলাকায় তাদের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের ভেতরে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা ইফতিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দ্বারা কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করে চলে যায়। সকাল ৭টার দিকে ইফতির মা তার (ইফতির) ফোন বন্ধ পেয়ে পাশের বাসা হারবাইদ পূর্বপাড়ার সেলিনা খাতুনকে ফোন দিয়ে তার ছেলে ইফতিকে ডেকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। সেলিনা খাতুন নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের ভেতরে প্রবেশ করে ইফতির গলা কাটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে। সেলিনা খাতুন সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশ ও নিহতের মাকে বিষয়টি জানায়। এ খবর পেয়ে ইফতির পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ইফতির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় গত ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর নিহত ইফতির মামা মো: মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে জিএমপির পূবাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করেন। রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। পরে গাজীপুর পিবিআই’র উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করেন। পিবিআই’র একটি টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মৃদুল হাসানকে গত ২৭ আগস্ট বিকালে ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে এবং ফরিদ আহম্মেদকে একই তারিখে সন্ধ্যায় টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই’কে জানায়, গ্রেফতারকৃতরা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। ঘটনার কিছুদিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামিসহ তাদের সহযোগী আসামিরা ঘটনাস্থলে নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে এসে ইফতির মামা মো. মিজানুর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে। ভুক্তভোগীর মামা ওই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা বিভিন্ন প্রকারে হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিসহ সহযোগী আসামিরা ঘটনার দিন রাতে হারবাইদ এলাকায় একটি নির্জনস্থানে বসে মাদক সেবন করার পর ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে ইফতিকে মশারি টানিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে। তারা ইফতিকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে করে হত্যা করে তার মোবাইল নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, থানা পুলিশ কর্তৃক তদন্তধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে ঘটনার সঙ্গে সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসামিদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। নির্মাণাধীন ভবনের চাঁদা না দেওয়ার কারণে তারা ভুক্তভোগীকে হত্যা করে। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২৮ আগস্ট (সোমবার) গাজীপুর আদালতে সোপর্দ করা হলে ইফতিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে আসামিরা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল