রংপুরে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নগরীর ৩৩ টি ওয়ার্ড এবং ৮ উপজেলার সড়ক, মহা-সড়কের অনেক স্থানে হাটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত দিয়ে শুরু হলেও রাত ১০ টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয় এই অঞ্চলে।
শনিবার রাত ১২ টা থেকে রবিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত রংপুরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৬২ মিলিমিটার। টানা বৃষ্টির ফলে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা কাজের অভাবে কষ্টে রয়েছেন। নগরীর অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও ক্রেতা ছিল শূন্যের কোঠায়। নগরীর প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খালের দুইকূল উপচিয়ে পানি আশে পাশের বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে কৃষকরা।
অধিকাংশ কৃষকের ক্ষেতের শাকসবজি তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না সরলে শাক সবজির আবাদ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।নগরীর চব্বিশ হাজারি এলাকার চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, শাকসবজির আবাদ নষ্ট হলে তাকে পথে বসতে হবে।
দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে নগরীর কামাল কাছনা, শাহিপাড়া, খাসবাগ, মুন্সিপাড়া, কামার পাড়া, শালবনসহ নগরীর দেড়শতাধিক পাড়া মহল্লার নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের পানি মাড়িয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে।
নগরীর প্রধান সড়ক জাহাজ কোম্পানি মোড়, টাউনহল চত্বর, কাচারি বাজার, গ্রান্ড হোটেল মোড়, স্টেশন রোডের অনেকস্থানে পানি উঠায় যান-বাহন এবং পথচারি চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। নগরী অটো, রিকশার চলাচল ছিল সামান্য। শ্রমজীবী মানুষেরা কাজ না পেয়ে ছিল বেকায়দায়।
এদিকে বৃষ্টিতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত শ্যামাসুন্দরী ও কেডিখাল দুকূল উপচিয়ে পানি নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা রয়েছে দুর্ভোগে। এছাড়া কুকরুল বিল, চিকলি বিলসহ অসংখ্য পুকুর পানিতে টই টুম্বর অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় মাছ ভেসে যেতে পারে।
এদিকে তিস্তার পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করায় নদীর তীরবর্তি এলাকার বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রবিবার দুপুর ১২ টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ২ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫০ সেন্টিমিটার। অপরদিকে রংপুরের কাউনিয় পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ওই পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমা। দুপুর ১২ টায় পানির প্রবাহ ছিল ২৮ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, রাত ১২ টা থেকে রবিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত রংপুরে ১৬২ মিলি মিটার দিনাজপুরে ৩১৮.৪ মিলিমিটার সৈয়দপুরে ৪১৫ দশমিক ৪ মিমিটার নীলফামারীর ডিমলায় ২০৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার পঞ্চগড়ে ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন