বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) নতুন জাতের ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ উদ্ভাবন করেছে। এই জাতের ধান গোপালগঞ্জে এই প্রথম আবাদ করে কৃষক বাজিমাত করে দিয়েছে। দেশে প্রচলিত যে কোন হাইব্রিড ধানের জাতের তুলনায় ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ অনেক বেশি ফলন দিয়েছে।
এই জাতের ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সেই সাথে এ জাতের ধান আবাদ করে কৃষক অধিক লাভের আশা করছেন। গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ হেক্টরে সাড়ে ১০ টন ফলন দিয়েছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে ৫০ টি প্রদর্শনী প্লটে কৃষক ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ এর আবাদ করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা , কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষক ও পরিসংখ্যান বিভাগের কর্মকর্তার সামনে প্রদর্শনী প্লট থেকে ধান কেটে মাড়াই- পরিমাপ করা হয়। সেখানে হেক্টর প্রতি সাড়ে ১০ টন ফলন পাওয়া গেছে। এই জাতের ধান কৃষিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী গ্রামের কৃষক নাজমুল মোল্লা, রমজান সরদার, জাহাঙ্গীর গাজী, আরিফ গাজী ও মিজান মোল্লা বলেন, আমরা এর আগে হীরা হাইব্রিড ধান-২, এসএল-৮ সহ আরো অনেক জাতের হাইব্রিড ধানের আবাদ করেছি। ওইসব জাতে হেক্টরে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টন ফলন পেয়েছি। কিন্তু ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ চাষাবাদ করে শতাংশে ১ মনের বেশি ধান ফলন পেয়েছি।সে হিসাবে হেক্টরে এ ধান সাড়ে ১০ টন ফলন দিয়েছে।এই ধান হেক্টরে ২ টন বেশি ফলন দিয়েছে। এ ধানের চাল লম্বা। প্রতিটি ছড়ায় ধানের পরিমানও বেশি পেয়েছি। এত ধান আগে জমিতে ফলেনি। এ ধান চাষাবাদে সেচ ও সার খরচ কম লেগেছে। এ ধানে তেমন কোন রোগ বালাই নেই। তাই কম খরচে বেশি ধান উৎপাদন করতে পেরে আমরা লাভবান হয়েছি। আমাদের দেখাদেখি অনেকেই আগামী বছর এ জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নিলফা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ধানটি হাইব্রিড। আবার লম্বা-চিকন। নতুন এ জাতের ধান ফলনও বেশি দিয়েছে। বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই আগামী বছর এ জাতের ধান আবাদ করবো।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন চন্দ্র দাস বলেন, এ ধানের জীবন কাল ১৪৫ দিন থেকে ১৪৮ দিন। ১ হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন ২৪.৩ গ্রাম। ধানের আকৃতি লম্বা চিকন ও ভাত ঝরঝরে। চালে অ্যামাইলোজ ২৩.৩% এবং প্রোটিন ৯.২%। দানার পুষ্টতা ৮৮.৬%। ভাল পরিচর্যা পেলে এ জাতের ধান ১১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। তাই বাংলাদেশর কৃষিতে এ ধান সমৃদ্ধির আশা জাগিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আঃ কাদের সরদার বলেন, গোপালগঞ্জে অন্তত ৭৮% জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়। গোপালগঞ্জে প্রথম আবাদে এ ধান বাজিমাত করেছে। হাওর অঞ্চলসহ অনেক নিম্নজলাভূমি বেষ্টিত জেলায় হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়ে থাকে। ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ জাতের আবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধানের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ ধান অবদান রাখবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম