বগুড়ার ১২ থানার কার্যক্রম শুরু হলেও গতি ফেরেনি এখনও। শুধুমাত্র কয়েক ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে থানার কার্যক্রম। এদিকে বগুড়া সদর থানা থেকে লুট হওয়া ৩৭টি অস্ত্রের মধ্যে ১১টি উদ্ধার হলেও বাকি ২৬টি অস্ত্রের হদিস পাচ্ছে না পুলিশ। তারা বলছেন, লুট হওয়া আরো ২৬টি অস্ত্র শিগগিরই উদ্ধার করা হবে।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিন বিকেলেই বগুড়া সদর থানা, সার্কেল অফিস, ট্রাফিক পুলিশ বক্স, সদর পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রাফিক অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় শতশত গাড়ি। গণবিক্ষোভের মুখে থানা রেখে নিরাপদে চলে যায় পুলিশ। থানা মোড়ের এ স্থানটিতে এখনও ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজ চলছে। আগুনে পুড়ে যায় অনেক মামলার নথি এবং অবকাঠামো। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্বা প্রধান ফটকের সামনে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন আনসার সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে থানা কম্পাউন্ডে পুড়ে কঙ্কাল হওয়া চারটি পুলিশ ভ্যান, পড়ে আছে বেশ কিছু পোড়া মোটরসাইকেল।
এদিকে গত ৫ আগস্টের ঘটনায় বগুড়া সদর থানার ৩৭টি অস্ত্র লুট হওয়ার ঘটনায় উদ্ধার হয়েছে মাত্র ১১টি। এরমধ্যে বগুড়া সান্দার পট্টি থেকে ৫টি, চেলোপাড়া থেকে ৩টি ও অজ্ঞাত স্থান থেকে ৩টি উদ্ধার করে থানায় জমা দেয়া হয়েছে। বাকি ২৬টি অস্ত্র এখনও উদ্ধা হয়নি। এ কারণে বগুড়াজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বগুড়াবাসি বলছেন, অস্ত্রগুলো উদ্ধার না হলে অপরাধীরা যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই দ্রুত অস্ত্র উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়া গণবিক্ষোভের সময় শেরপুর থানায় আক্রমণ হলেও ভাঙচুর কিংবা পোড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। তবু এ থানায় কাজকর্মে গতি আসেনি। গত বৃহস্পতিবার সেখানে জিডি করতে আসেন হাফিজা বেগম নামে এক নারী। ডিউটি অফিসারের কক্ষে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও জিডি করতে পারেননি। পুলিশের পক্ষ থেকে পুরোপুরি থানার কার্যক্রম শুরুর দাবি করা হলেও গতি না ফেরার চিত্র দেখা যায় এ থানায়ও। থানার প্রধান ফটকে নিরাপত্তায় কয়েকজন আনসার সদস্য ছিলেন। তাদের সহযোগিতা করছেন সেনাসদস্যরা। সেখানে বসে ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদৎ হোসেন।
তিনি বলেন, এখন তো অনলাইনে জিডি করা হয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঢাকায় অনলাইনের সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় এই থানার কম্পিউটার ও প্রিন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই থানায় বসে জিডি লেখা ও জিডির কপি প্রিন্ট করা যাচ্ছে না।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা জানান, থানার মোট ৬৩জন পুলিশ সদস্যই কাজে যোগদান করেছেন। এছাড়া তাদের সহযোগিতা করছেন পাঁচজন আনসার ও চারজন সেনাবাহিনীর সদস্য। পুরোপুরি তার থানার কার্যক্রম চালু রয়েছে। এরইমধ্যে থানায় একটি অপহরণ মামলা নেওয়া হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন চলাকালে থানা ঘেরাও এবং তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। এতে কম্পিউটার ও প্রিন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই অনলাইনে জিডি এন্টিতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতা বগুড়া সদর থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। লুট হয়ে যায় ৩৭টি অন্ত্রসহ থানার ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পুলিশি কাজের যানবহান, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এছাড়া সদর থানার ৩৭টি অস্ত্র অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়ার পর ইতোমধ্যে ১১টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বাকি অস্ত্রগুলো যে কোনো সময় পাওয়া যাবে। পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল