নেত্রকোনায় বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়ে ৭৫ বছর বয়সী আব্দুল বারেকের জীবন কাটছে এখন দুর্বিষহ যন্ত্রণায়। সরকারিভাবে আহতদের তালিকাও উঠছে না বৃদ্ধ বারেকের নাম। টাকার অভাবে নিতে পারছেন না উন্নত চিকিৎসাও। যন্ত্রণায় চিৎকার করে রাত পার হয় তার।
জানা যায়, মদন উপজেলার চাঁনগাও গ্রামের আব্দুল বারেক ভ্যান চালিয়ে গরু পালন করে সংসার চালাতেন। উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর মগড়া ব্রিজের ওপর ১৮ জুলাই আন্দোলনে যাওয়া ভ্যান চালক নাতি মেহেদিকে খুঁজতে গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে দিনাতিপাত করছেন যন্ত্রণা নিয়ে। একটি চোখ তার বন্ধ। অপর চোখেও বন্ধ চোখের যন্ত্রণা যেন অসহনীয়।
জানা গেছে, কোটা আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর গণআন্দোলনে রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনে। এসময় নেত্রকোনা জেলা শহরে আন্দোলনকারী তেমন কেউ মাঠে নামতে না পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। তবে মোহনগঞ্জ, পুর্বধলার শ্যামগঞ্জসহ মদন উপজেলায় ব্যাপকভাবে আন্দোলন হয়। এক পর্যায়ে হাওরাঞ্চল মদনের আন্দোলন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ছাত্রদের আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। জাহাঙ্গীরপুর বাজার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। যার ফলশ্রুতিতে গুলিবিদ্ধ হন অসংখ্য মানুষ। ৪৪ জনের শরীরে গুলিবিদ্ধ হয়। তারমাঝে গুলিতে চোখ হারিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছেন না বৃদ্ধ দিন মজুর আব্দুল বারেক। জেলা প্রশাসনের আহতদের তালিকায় ৭৭ জনের নাম থাকলেও নেই বারেকের নাম।
মদনের চাঁনগাও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম তালুকদার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। তিনি ব্যাক্তিগতভাবে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু বারেকসহ বেশ কয়েকজনের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের নাম নেই তালিকায়। তিনি বলেন, জেলার মদন উপজেলার আন্দোলন ছিলো গণমানুষের আন্দোলন।’
আহত বৃদ্ধ আব্দুল বারেক বলেন, ‘নাতি যখন মিছিলে তখন কি আর আমি ঘরে থাকতে পারি? নাতিকে বাঁচাতে গিয়েই ১৭টি গুলি লাগে আমার চোখ ও মাথায়। কে বা কারা হাসপাতালে নেয় জানি না।’
তিনি বলেন, নিজে কৃষিকাজ, ভ্যান চালানোসহ গরু পালন করতেন। একমাত্র মেয়ে সন্তান প্রসব করে মারা যাওয়ায় ৯ বছরের নাতিও এখন তার কাঁধে। গত সাড়ে তিনমাস ধরে জীবন এখন তার কাছে এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ উল্লেখযোগ্য কোন সাহায্যই করেনি।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘নিহত ১৭ জনের মধ্যে একজনকে জায়গা দিয়ে কবর দেওয়া হয়েছে। নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। যারা আবেদন করছেন যাচাই বাছাই করেই তালিকায় নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চার ডিসেম্বর পর্যন্ত। যারা বাদ পড়ছেন তাদেরকে আবেদনের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে চোখ হারানো দরিদ্র মানুষ বারেকের মতো যারা আছেন তাদের নাম কেন আসেনি তা তিনি খোঁজ নিবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, যাচাইবাছাই কমিটিতে কেন্দ্র থেকে তিনজন ছাত্র রয়েছেন, তারা যাচাই করে বললেই নেওয়া হচ্ছে।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ