শিরোনাম
১৭ আগস্ট, ২০২২ ১১:০৩

চালের মুনাফা যাচ্ছে কোথায়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চালের মুনাফা যাচ্ছে কোথায়

বর্তমানে বাজারে যে চাল বিক্রি হচ্ছে তা গত আমন ও বোরো আবাদ থেকে পাওয়া। কৃষি বিপণন অধিদফতর হিসাব করে দেখেছে যে, গত বোরো মৌসুম থেকে প্রাপ্ত প্রতি কেজি মোটা চালের উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৩৯ টাকা। অন্যদিকে, গতকাল বাজারে মোটা চালের সর্বোচ্চ খুচরামূল্য ছিল ৫৫ টাকা। দেখা যাচ্ছে, এ খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্যে পার্থক্য ১৬ টাকা। প্রতি কেজি চালের এ মুনাফা ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা মিলমালিক, পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা এবং পরিবহন খাতে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এর মাঝে ঢুকে গেছে আরও কিছু চক্র।  

সূত্র জানায়, চালের মুনাফা শুধু মিলমালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার পকেটে যাচ্ছে, এমন নয়। এর সঙ্গে আরও অংশীদার যুক্ত হয়েছে। এর বড় একটি অংশ যায় পরিবহন খাতে। এ ছাড়া হাইওয়েসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজির বিষয়গুলোও রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে; উপরন্তু রাজধানীতে ঢোকার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের নামেও নানা ধরনের ফি ও মাশুল আদায় করা হয় পণ্যবাহী গাড়িতে।

ঢাকার বাদামতলী মোকামের ইসলাম রাইস এজেন্সির আমজাদ খান বলেন, গত কয়েকদিনে মাঝারি আকারের চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ৫০ কেজি প্রতি বস্তায় প্রায় ৪০০ টাকা দাম বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা। আর জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে শেরপুর থেকে প্রতি ট্রাক পণ্য আনতে তাকে বাড়তি ৪ হাজার টাকা যোগ করতে হচ্ছে।

পণ্যের দামে জ্বালানি তেলের বাড়তি মূল্যের প্রভাব পর্যালোচনা করে দেখছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের তথ্যমতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি ১০ টনি ট্রাকে সর্বোচ্চ পরিবহন খরচ বাড়ে ৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে জ্বালানির কারণে পরিবহন খরচ বাড়ায় ১০ টন পণ্যে কেজিতে ৫০ পয়সা করে দাম বাড়তে পারে। শুধু চালের ক্ষেত্রে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ার প্রভাব পণ্যের ওপর যতটা পড়েছে, তার চেয়ে বেশি সুযোগ নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র।

ক্যাবের সেক্রেটারি জেনারেল জানান, রাজধানীতে ঢোকার সময় টোকেন মানি, মানি রিসিট, কল্যাণ সমিতিসহ নানা ধরনের নাম দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে টাকা তোলা হয়। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, গাবতলী থেকে শ্যামবাজারে আসতে একটি ট্রাককে প্রায় ৭০ টাকা টোকেন ফি দিতে হয়। এই ফি কে নেয়, কার পকেটে যায়, তা এখনো পরিষ্কার করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন। ফলে পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ী ছাড়াও আরও অসাধুচক্র রয়েছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর কেজিপ্রতি মোটা ও চিকন চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। সবশেষ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে পুঁজি করে পাইকারি মোকামে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দাম বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের ১৬ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। এর মধ্যে এক মাসে চিকন চালে প্রায় ১০ শতাংশ এবং মোটা চালে প্রায় ৫ শতাংশ হারে দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এক মাসে চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গতকাল বাজারে চিকন নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৮২ টাকা, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৬ টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। এক মাস আগেও এসব চালের দাম কেজিপ্রতি প্রতিপ্রায় ৩ থেকে ৫ টাকা কম ছিল।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক আ. গাফফার খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে পণ্যের দাম যতটা বাড়ার কথা দেখা যাচ্ছে কিছু পণ্যে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে দাম। যেখানে ২ টাকা বাড়ার কথা সেখানে ৪ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি অসাধু চক্র এর সঙ্গে জড়িত। সে কারণে আমরা বাজার মনিটরিং আরও বাড়িয়েছি। যারা সুযোগ বুঝে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর