শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুমিনের সহজ মৃত্যু ও পরকালীন সুসংবাদ

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মুমিনের সহজ মৃত্যু ও পরকালীন সুসংবাদ

প্রতিটি মুমিন-মুসলিম ব্যক্তি চায় ইহ ও পরকালীন শান্তি। আর এ শান্তি নির্ভর করে নেক আমলের ওপর। বান্দার নেক আমল তাকে দুনিয়া ও পরকালের ইজ্জত ও শান্তির সুসংবাদ দেয়। মুমিন ব্যক্তির নেক আমলের কারণে সে প্রাপ্ত হয় সহজ মৃত্যু। মৃত্যুর কষ্ট বড় কঠিন যা লেখে বা বলে শেষ করা যাবে না। মুমিন ব্যক্তি মৃত্যুর সময়ই জান্নাত ও ইজ্জতের সুসংবাদ পেয়ে যায়। এ সম্পর্কে মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, হাকেম, বায়হাকি নামক কিতাবসমূহে এসেছে। ‘হজরত বারা’ ইবনে আযেব (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইমানদার বান্দা যখন দুনিয়া হতে শেষ বিদায় নিয়ে আখেরাতের পথে যাত্রা শুরু করে তখন তার কাছে আসমান থেকে একদল ফেরেশতা আগমন করেন। তাদের চেহারাসমূহ এত উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময় যে, চেহারার ভিতর যেন দীপ্তিমান সূর্য ভাসছে। তাদের সঙ্গে আছে জান্নাত হতে আনীত কাফন ও খুশবু। তারা মুমিন ব্যক্তির সুদূর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বসে যায়। অতঃপর মালাকুল মউত তার শিয়রে উপবেশন করে এবং তাকে বলে, হে নফছে মুতমাইন্নাহ, হে মাওলাপাগল রুহ! তুমি আল্লাহর হুকুম মেনে, আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী জীবন কাটিয়েছ। এখন আল্লাহর ঘোষিত ক্ষমা ও তার পরম সন্তুষ্টির স্বাদ আস্বাদন করার জন্য বের হয়ে আস আর আল্লাহর দরবারে চল। রুহ তখন এত সহজে বের হয় যেভাবে কলসের ভিতর থেকে পানির ফোঁটা টপ করে নির্গত হয়; যদিও তোমরা বাহ্যত এর বিপরীত দেখে থাক। (কারণ, দৃশ্যত কোনো যাতনা ও উদ্বেগ পরিলক্ষিত হলেও এর সম্পর্ক দেহ পর্যন্ত্মই সীমাবদ্ধ থাকে। রুহ কিন্তু তখনো খুবই আরাম ও প্রশান্তিপ্রাপ্ত থাকে।) ফেরেশতারা এভাবেই রুহ বের করে। বের করার পর পলক মাত্র কালের জন্যও তাকে মালাকুল মউতের হাতে ছেড়ে দেয় না। বরং তত্ক্ষণাৎ ওই জান্নাতি কাফন ও খুশবু দ্বারা আবৃত করে নেয়। তা থেকে দুনিয়ার অতীব সুগন্ধময় মেশক তীব্র সুগন্ধ ছড়াতে থাকে। অতঃপর তারা তাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব জগতের দিকে যাত্রা শুরু করে। যখনই ফেরেশতাদের কোনো দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, তারা জিজ্ঞেস করে যে, কে এই পবিত্র রুহ? কী তার পরিচয়? বহনকারী ফেরেশতারা দুনিয়াতে প্রসিদ্ধ উত্তম নামসমূহ বলে তার পরিচয় পেশ করে যে, ইনি অমুকের  সন্তান অমুক। এভাবে তাকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌঁছে। অনুরূপভাবে সব আসমান অতিক্রম করে যখন সপ্তম আসমানে পৌঁছানো হয়, আল্লাহপাক হুকুম জারি করেন যে, বান্দাটির নাম ‘ইল্লিয়্যিনে’ লিপিবদ্ধ কর এবং কবরের সওয়াল জওয়াবের জন্য তাকে পুনরায় জমিনে নিয়ে যাও। অতঃপর (বরজখের উপযোগী করে) রুহকে দেহে প্রবিষ্ট করানো হয়। (ওই সময় রুহ আগের মতো থাকে না যেভাবে দুনিয়াতে ছিল) এরপর তার কাছে দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসায় এবং প্রশ্ন করে যে, তোমার রব কে? তোমার দীন কী? সে উত্তর দেয়, আমার রব আল্লাহ এবং আমার দীন ও জীবন পদ্ধতি ইসলাম। তারা আবার প্রশ্ন করে, কে এই হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম, যিনি তোমাদের প্রতি তোমাদেরই মাঝে প্রেরিত হয়েছিলেন? সে বলে, তিনি আল্লাহপাকের রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম। আবার জিজ্ঞাসা করে, তুমি তা কীভাবে জানলে? সে উত্তর দেয়, আমি আল্লাহর কিতাব পবিত্র কোরআন পড়েছি, কোরআনের প্রতি ইমান এনেছি এবং কোরআনের সব বক্তব্য অকাট্য বলে গ্রহণ করেছি। এ সময় আসমান থেকে এক মহান ঘোষণাকারী (তথা স্বয়ং  আল্লাহপাকই) ঘোষণা করেন যে, ‘আমার বান্দা সত্য-সঠিক জবাব দিয়েছে। অতএব, তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতি পোশাক পরিয়ে দাও, তার শান্তির জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও। সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতের বাতাস ও জান্নাতি খুশবু আসতে থাকবে। কবরকে তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সুগন্ধায়-সুশ্রী-সুদর্শন ও চমৎকার পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি তার কাছে আগমন করে এবং তাকে বলে, ওহে! সুসংবাদ গ্রহণ কর, যেই সংবাদ তোমাকে খুবই আনন্দিত করবে। এই সেই দিন যেই দিনের ওয়াদা তোমার সঙ্গে করা হয়েছিল। মুর্দা তখন জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা, তুমি কে? তোমার চেহারা কল্যাণের সাক্ষ্য বহন করছে। ব্যক্তিটি উত্তর দেয়, আরে! আমি তো তোমারই নেক আমল। ব্যস মুর্দা ব্যক্তিটি তখন বারংবার বলতে থাকে হে মা’বুদ! কেয়ামত কায়েম কর। হে মা’বুদ! কেয়ামত কায়েম কর। আখেরাতে আমার জন্য নির্ধারিত আমার পরিবার-পরিজন এবং আমার ধন-সম্পদ ও নেয়ামতের মাঝে চলে যেতে আমি উদগ্রীব।’ অপর হাদিসে এসেছে। যা তাবরানি শরিফে উলেস্ন্লখ করা হয়েছে। ‘একবার এক আনসারি সাহাবির মৃত্যুলগ্নে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালাকুল মউতকে তাঁর শিয়রে দেখে বলে উঠলেন, হে মালাকুল মউত, আমার সাহাবির প্রতি কোমল ও সস্নহ আচরণ কর। কারণ, সে মুমিন। মালাকুল মউত উত্তর দিলেন, হজরত! আপনি বিলকুল শান্ত-নিশ্চিন্ত থাকুন, আপনার চোখ শীতল হোক এবং আপনি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখুন, প্রত্যেক মুমিনের প্রতিই আমি দয়াদ্র এবং কোমল ও নম্র ব্যবহার করে থাকি।’

লেখক : মুহাদ্দিস মুফাসসির খতিব বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর