শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

কোরআনের বৈজ্ঞানিক আলোচনা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কোরআনের বৈজ্ঞানিক আলোচনা

ড. মরিস বুকাইলি বলেছেন, কোরআন আর বিজ্ঞান হাত ধরে হাঁটে। অবশ্য যুগ যুগ ধরে ধার্মিকরা বিজ্ঞানকে ধর্মবিরোধী ভেবে এসেছেন। এজন্য ধর্ম কিংবা ধর্মগ্রন্থ দায়ী নয়। দায়ী মূর্খ ধর্মান্ধরা। একসময় মুসলিমদের মনেও এ ধারণা ছিল, বিজ্ঞান ইসলামের শত্রু। দুঃখজনক হলেও সত্য, একবিংশ শতাব্দীতেও কেউ কেউ এ ধরনের উদ্ভট ধারণা লালন করেন। তাদের জন্যই আজকের এ লেখাটি। ইসলাম কতভাবে বিজ্ঞান শেখার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে আল কোরআনে চোখ বোলালেই তা দেখতে পাওয়া যায়। কোআনের প্রথম আয়াত, ইকরা। মানে পড়। এখানে সব ধরনের পড়ার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ। বিশেষ করে বিজ্ঞান। তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ‘বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’ শব্দমালা থেকে। তার নামে পড়, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন জমাটবাঁধা রক্ত থেকে। কী আশ্চর্য কথা! কোরআনের সূচনাতেই আল্লাহ মেডিকেল সায়েন্সের প্রতি ইঙ্গিত করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত এ আয়াতকে আপনি মেডিকেল সায়েন্সের লেন্সে রেখে দেখতে না পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত এ আয়াতের সহজ মর্ম বুঝতে পারবেন না। দুনিয়া খ্যাত ভ্রƒণবিজ্ঞানী ড. কিথ এল মুর বলেন, কোরআনে বলা তথ্যটি শতভাগ সঠিক। মানবভ্রƒণের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয় জমাটবাঁধা রক্ত থেকে। তারপর আস্তে আস্তে বিকশিত হয়ে সে একজন পূর্ণ মানবশিশুর রূপ লাভ করে। সে কথাও আল কোরআনে আল্লাহ বলে দিয়েছেন- ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির মৌল উপাদান থেকে। তারপর শুক্রবিন্দু-রূপে এক নিরাপদ স্থান মায়ের পেটে রাখি। তারপর শুক্রবিন্দুকে নিষিক্ত করি ডিম্বের সঙ্গে। তারপর নিষিক্ত ডিম্বকে বিবর্তিত করি মাংসপিণ্ডে, তাতে সংযুক্ত করি হাড়। হাড়গুলোকে ঢেকে দিই মাংস দিয়ে। তারপর তাকে দিই অপরূপ রূপ। নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!’ সূরা মুমিনুন, আয়াত ১২-১৪।

বিজ্ঞান শেখার জন্য আল্লাহতায়ালা বান্দাকে বার বার বলেছেন, ‘আমার বান্দারা কি আকাশ ও জমিনের মাঝে যা আছে তা নিয়ে গবেষণা করে না?’ আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা কি আকাশ গবেষণা করে না? তাহলে তারা দেখত আমি কত নিপুণভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছি।’ বান্দা যখন আকাশ গবেষাণা করবে, পৃথিবী ও পৃথিবীর সবকিছু গবেষণার চোখে, বিজ্ঞানাগারের ল্যাবরেটরিতে দেখবে তখন বান্দার ভিতরজগৎ এক অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়বে। সে কথাও আল্লাহ আল কোরআনে বলে দিয়েছেন- ‘আমার বান্দাদের মধ্যে যারা দাঁড়িয়ে, শুয়ে এবং বসে সবসময় আমার সৃষ্টিজগৎ নিয়ে গবেষণা করে, ভাবনার সাগরে ডুবে থাকে, তারা বুঝতে পারে আমি কত বড় নিপুণ স্রষ্টা। তারা প্রার্থনার হাত বাড়িয়ে বলে, ওগো আমাদের দয়াময় প্রভু! এ জগতের একটি অনুপরমাণুও আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। হে দয়াময় প্রভু! আপনি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচান।’ বিজ্ঞান শেখার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে তোমরা চীন যাও।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, কোরআন-হাদিসের জ্ঞান তো মদিনায়ই সমৃদ্ধ ছিল। তাহলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে চীনে যেতে বলেছেন কেন? তখনকার সময়ে চীন ছিল বিজ্ঞান পাঠের জন্য প্রসিদ্ধ। তাই তিনি সাহাবিদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা প্রয়োজনে চীন দেশে গিয়ে হলেও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা কর। আরেকটি হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা গবেষণা কর। গবেষণা সঠিক হলে দুটি সওয়াব। আর গবেষণা ভুল হলে পাবে একটি সওয়াব।’ বুখারি। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, বিজ্ঞান গবেষণার সওয়াব সম্পর্কেও এ হাদিস প্রযোজ্য।

পাঠক! বিজ্ঞানচর্চায় কোরআন ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনার দুটি উদ্ধৃতি দিয়েছি মাত্র। এমন হাজারো উদ্ধৃতি কোরআনের আয়াতে, হাদিসের পাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আফসোস! বিজ্ঞানচর্চায় এত উৎসাহ-উদ্দীপনা দেওয়ার পরও বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা বিজ্ঞানে আজ পিছিয়ে। কারা যেন মুসলমানদের মনে ও কানে রটিয়ে দিয়েছে, বিজ্ঞানচর্চায় কোনো সওয়াব নেই। সওয়াব শুধু নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিলে।। তারা কি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদিসটি জানে না, ‘অল্প সময় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় ডুবে থাকা ষাট বছর (অন্য বর্ণনায় সত্তর বছর) নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকারে বসে থাকার চেয়ে উত্তম!’ তিরমিজি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন। জ্ঞানের চূড়ায়, বিজ্ঞানের শীর্ষে যাওয়ার তাওফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর