শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

অ্যা জার্নি বাই ট্রেন উইদ মুহিত

শাইখ সিরাজ

অ্যা জার্নি বাই ট্রেন উইদ মুহিত

আমি যে কাজটি করি সে কাজটিকে কখনই আমার জীবনের বাইরে আলাদা কোনো কাজ মনে হয়নি। বেঁচে থাকতে একজন মানুষকে যেমন প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, নাইতে হয়, ঘুমাতে হয় কিংবা চিরকালীন অভ্যাসে নিজের অজান্তেই নিঃশ্বাসে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে হয়, কাজকেও আমার তেমন প্রাত্যহিক অপরিহার্য বিষয় বলে মনে হয়েছে। আর তাই প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দলবল নিয়ে ছুটে চলি গ্রামে-গঞ্জে কৃষকের কাছে। খুঁজে বের করার চেষ্টা করি অজানা অধ্যায়। কৃষকের কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করি তার চিন্তা-ভাবনা, কৃষিকৌশল সম্পর্কে। আবার কৃষককে জানাতে চেষ্টা করি, যা আমি জেনে এসেছি গবেষকদের কাছ থেকে কিংবা দেখে এসেছি বিদেশের কোনো কৃষকের মাঠে। এ কাজটি আমার জীবনাচারের সঙ্গে মিশে গেছে, মিশে গেছে রক্তে। বয়স ষাট ছাড়িয়েছে বছর কয়েক আগেই। তবু কাজে নামলে বয়সের কথা মনে থাকে না, কী এক তারুণ্যের তেজ ভিতরে ভিতরে আমি অনুভব করি। তবে নিজের এ বয়সকে এবং কাজ করার শক্তিকে আমার নগণ্য মনে হয় যখন আমি আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেবের মুখোমুখি দাঁড়াই। পঁচাশি বছর পেরিয়েও দিব্যি এক তরুণ যেন শিশুর সারল্য নিয়ে হাসছেন। আমার ভাবতে ভালো লাগে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমি।

পাঠক, আপনাদের জানিয়ে রাখতে চাই মুহিত স্যারের জীবনী নিয়ে একটা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে হাত রেখেছি গত বছরে। এ কারণে তাকে কাছ থেকে যেমন আমার দেখতে হয়েছে, জানতে হয়েছে, তেমনি পাঠ নিতে হয়েছে তার চিন্তা, দর্শন থেকে শুরু করে ব্যক্তিমানুষ হিসেবে তার আবেগ-অনুভূতিরও। এ গল্প তোলা থাকল। সবিস্তারে আপনাদের অন্য দিন শোনাব। আজ শোনাতে চাই মুহিত স্যারের সঙ্গে একটি ট্রেন ভ্রমণের গল্প। তার আগে আপনাদের বলে রাখি, আমি ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ শুরু করি ২০০৬ সালে। এ বছর ১৪ বারের মতো আয়োজন করা হয় দেশের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি জেলার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। এ ১৪ বছরের আয়োজনে গত নয় বছরই ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুহিত স্যার। অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি উত্তর দিয়েছেন কৃষকের প্রশ্নের। আশ্বাস দিয়েছেন। জাতীয় বাজেটে তার সে আশ্বাসের প্রতিফলনও দেখেছি আমরা। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে এ বছর তিনি সরকারি কাজ থেকে অবসরে আছেন। কিন্তু বিগত নয় বছরের অভ্যস্ততায় এ বছরও ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এ তার উপস্থিতি প্রত্যাশা করছিলাম। স্যারকে আমন্ত্রণ জানাতেই তিনি রাজি হলেন। তবে শর্ত জুড়ে দিলেন যেখানেই যান, যাবেন ট্রেনে করে। ঠিক হলো নাটোর যাব। নাটোরের বাসুদেবপুরে আয়োজন করা হলো ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর একটি পর্বের। বলে রাখি, ট্রেন যোগাযোগ আছে বলেই নাটোরে আয়োজন করা নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই উচ্চমূল্যের ফলফসল উৎপাদনে নাটোরের কৃষক বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। শুধু উচ্চমূল্যের ফলফসল নয়, নাটোরে চাষ হচ্ছে ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছগাছালি। আছে ঔষধি গ্রাম। চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ ও বিটিভির ‘কৃষি দিবানিশি’ অনুষ্ঠানে বেশকিছু প্রতিবেদনে আপনাদের দেখিয়েছি নাটোরের কৃষি সাফল্যের গল্প। যেখানে সাফল্য থাকে, পাশাপাশি থাকে ব্যর্থতাও। জানতে চেয়েছি নাটোরের কৃষকের বাজেটে প্রত্যাশা ও দাবিদাওয়া বিষয়ে।

যাই হোক, বলছিলাম মুহিত স্যারকে নিয়ে ট্রেনে করে নাটোরে যাওয়ার গল্প। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের আবহাওয়া স্থিতিশীল ছিল না। এই বৃষ্টি, এই রোদ। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ সাধারণত আয়োজন করা হয় গ্রামের কোনো খোলা মাঠে। উন্মুুক্ত মাঠে সন্ধ্যার পর কৃষকের উপস্থিতিতে আলোচনা হয় তাদের দাবিদাওয়া, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে। আমরা এক সকালে রওনা হলাম একতা এক্সপ্রেসে করে ঢাকা থেকে নাটোরের উদ্দেশে। ট্রেন কমলাপুর থেকে ছাড়ল সকাল ১০টায়। বিকাল ৩টার মধ্যে পৌঁছে যাব নাটোরে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাসুদেবপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেব। গুগল ওয়েদার বলছে, নাটোরে সকালে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, বিকালে মেঘলা থাকবে। তবে ঢাকার আকাশ বেশ পরিষ্কার। আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিলাম, তারা অভয় দিল, আকাশ মেঘলাই থাকবে, বৃষ্টি হবে না। ট্রেন চলতে শুরু করল। নাটোর থেকে খবর এলো সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালাম, বৃষ্টি থেমে যাবে। তবে বিকল্প ব্যবস্থাও রাখতে হবে। প্রযুক্তির সুফল এই- কখন বৃষ্টি হবে, কখন রোদ থাকবে, সব আগে থেকেই জেনে যাওয়া যাচ্ছে। এটা সবচেয়ে বেশি উপকারে আসছে কৃষকের। কৃষকও স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঠিকই জেনে নিচ্ছে বৃষ্টি-রোদের খবরাখবর। মনে পড়ছে বছর পাঁচেক আগে নেদারল্যান্ডসে আমাদের গাইড যখন ঝুম বৃষ্টির সময় বলেছিলেন, আর ১৫ মিনিট পর বৃষ্টি থেমে যাবে এবং ঠিকই ১৫ মিনিট পর বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল, তখন বিস্মিত হয়েছিলাম। ভাবতে ভালো লাগে এ প্রযুক্তি এখন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের হাতেও। নাটোরে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ চলাকালে ঠাণ্ডা বাতাস বইছিল, আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম হয়তো বৃষ্টি শুরু হবে। কিন্তু আমার সহকর্মীরা আমাকে গুগল ওয়েদার দেখে আশ্বস্ত করছিলেন, কাছে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে, এখানে বৃষ্টি হবে না। ঠিকই এক-দেড় ঘণ্টা অনুষ্ঠান চালিয়ে গেলাম। বৃষ্টি হলো না।

বরাবরই ট্রেন ভ্রমণ আমার ভালো লাগে। বলা যায় ট্রেনে ভ্রমণই আমার সবচেয়ে পছন্দের। ঝকঝকাঝক শব্দের তাল ভাবনায় এক ধরনের ছন্দ জোগায়, শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে বেঁধে ফেলে বর্তমানকে। একতা এক্সপ্রেসের দুটি সিঙ্গেল কেবিনের একটিতে আমি ও আমার সহকর্মীরা। অন্যটিতে মুহিত স্যার। আমি নিজের কেবিন ছেড়ে গিয়ে বসলাম স্যারের কেবিনে। উদ্দেশ্য চলতি পথে যতটুকু সময় তার পাশাপাশি থাকা যায়। ভিতরে ভিতরে অনেক প্রশ্ন জমে উঠেছে আমার, অনেক জিজ্ঞাসা। নানান বিষয়ে আলাপ-সালাপ করতে করতে জানতে চাইলাম, স্যার, দীর্ঘ কর্মব্যস্ত জীবন শেষে সরকারি দায়িত্ব থেকে অবসরে আছেন প্রায় তিন মাস হয়ে গেল, কেমন কাটছে আপনার অবসর সময়? স্বভাবসুলভ সারল্যমাখা হাসি। ‘বেশ ভালো। বই পড়ছি। বই লিখছি। ঠিক অবসরে নেই। এগুলো নিয়েই ব্যস্ত আছি।’- জানালেন তিনি। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি একটা বই লিখছেন। ১৯৮০ সালে শুরু করেছিলেন বইটি লেখার কাজ। আর হয়তো চার-পাঁচ মাস লাগবে লেখার কাজ শেষ হতে। বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চাই, কী বই এটা? তিনি বলেন, ‘আমি যে বইটা লিখছি সেটা হচ্ছে আসলে পৃথিবীর ইতিহাস। পৃথিবীর ইতিহাস অনেকেই লিখেছেন। আমি লিখছি আমার স্টাইলে।’ কথায় কথায় অনেক কথাই উঠে আসে। তিনি বলে চলেন তার যাপন করে আসা কর্মব্যস্ত জীবনের গল্প। ১৯৫৬ সালে প্রথম সরকারি চাকরির প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে ’৮২ সালে প্রথম অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া, তারপর প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সরকারের মন্ত্রী হয়ে কাজ শুরু করা- মস্তিষ্কে যেন সব স্তরে স্তরে সাজানো, এক এক করে তিনি বের করে আনলেন, আর আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি তার সেসব কথা। এ বয়সেও সব ঠিক মনে রেখেছেন খুঁটিনাটি সবিস্তারে!

অনেক জানতে চাওয়ার একটি ছিল, ‘২০০৯ থেকে ২০১৮- এ সময়টা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় থেকে কেমন ছিলেন? জীবনের এ সময়টাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’ বরাবরের মতোই তিনি সরাসরি বলেন, ‘এ সময়টা আমি খুব এনজয় করেছি। কারণ এ সময়টা ছিল অ্যাচিভমেন্টের। অনেক পুরনো প্ল্যান ও চিন্তা ইমপ্লিমেন্ট করার সুযোগ হয়। আমি আমার বাজেটের আয়তন বাড়িয়ে দিই। কারণ বাজেট দিয়ে হচ্ছে সেবা, বাজেট বেশি হলে সেবা বেশি হয়। বাজেট ছোট হলে সেবা কম হয়। তাই আমার মনে হয়েছে বাজেটটাকে বাড়াতে হবে।’ এ কথা শুনে আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন তুলি, ‘এ নিয়ে তো বেশ বিতর্কও হয়েছিল! তাই না?’ তিনি স্বভাবসুলভভাবে বলেন, ‘বিতর্ককে আমি কখনো ইমপোর্টেন্স দিইনি। বাজেট বড় হওয়ায় মানুষের চিন্তার জগৎ বড় হয়েছে। বড় বড় চিন্তা করার সাহস হয়েছে আমাদের। একটা মানসিক পরিবর্তন হয়েছে। বড় বড় পরিকল্পনাগুলো নিতেও সাহস পেয়েছি আমরা। আমার মনে হয়, আমার বাজেট বাড়ানোর স্ট্র্যাটেজি খুব কাজে দিয়েছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, আমি যখন ১৯৮২ সালে প্রথম অর্থমন্ত্রী হই, তখন কালচারের জন্য বাজেট সব মিলিয়ে এক থেকে দেড় কোটি ছিল। আমি প্রথমবার সুযোগ পেয়েই সেটাকে ২০০ কোটিতে নিয়ে গেছি। তবে এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান নূরেরও বেশ কৃতিত্ব আছে।’ তবে বাজেট বড় করার পেছনে শক্তি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুহিত স্যার বলেন, ‘Sheikh Hasina gave me the latitude to move anywhere.  বলেছেন, যা করতে চান করেন, হয়ে যাবে। This was tremendous support and encouragement. (শেখ হাসিনা আমাকে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তার প্রচণ্ড সমর্থন বেশ উৎসাহ জুগিয়েছে)। After all leader in any activities is very very important (যে কোনো ব্যাপারেই নেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ) আপনার লিডার যদি ফরওয়ার্ড লুকিং (দূরদর্শী) ও ব্রড মাইন্ডেড (বড় মনের) না হয়, আপনি যতই চেষ্টা করেন না কেন, আপনি বেশি দূর এগোতে পারবেন না।

প্রশ্ন রেখেছিলাম, ‘আপনি তো বরাবরই স্পষ্টভাষী, তখন তো সরকারে ছিলেন, এমনকি হয়েছে, কিছু বলতে চেয়েছেন, কিন্তু পারেননি?’ তার সরল উত্তর, ‘না, যা বলার আমি সবসময় বলে দিয়েছি।’ জানতে চেয়েছিলাম, ‘আশা করা হচ্ছে এবার জিডিপির গ্রোথ ৮%-এর ওপরে যাবে, আপনি কী মনে করেন?’ তিনি বলেন, ‘যাবে, ডেফিনেটলি যাবে। Its in a growth path.’আরও জানান, ‘গ্রোথপাথের নিয়মেই এটা বাড়বে। দশের ওপরে যেতে হলে দরকার হবে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্টের। তবে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্টের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এটা খুব সেনসেটিভ। ট্র্যাপে পড়ার সম্ভাবনা আছে। শ্রীলঙ্কা যেমন ট্র্যাপে পড়েছে।’

কথা হয় আসন্ন বাজেট নিয়ে। বাজেটের বিষয়ে তিনি খুব আশাবাদী। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আমার প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। বেশ হৃদ্যতা তার সঙ্গে। দেখা হলেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি যেখানে গেছেন সফলতার চিহ্ন রেখেছেন। সংগঠক হিসেবেও বেশ সুনাম তার। তবে বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী যিনি অর্থনীতিবিদ নন। তাই মুহিত স্যারের কাছে আমার জিজ্ঞাসা ছিল, আপনার উত্তরসূরির ওপর আপনার আস্থা কেমন? তিনি কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই বলেন, ‘আমার তার ওপর আস্থার কোনো ঘাটতি নেই। আমার পূর্ণ আস্থা আছে।’

ট্রেন তখন এক স্টেশন থেকে ছেড়ে যাচ্ছে অন্য স্টেশনে। আমাদের কথাবার্তার বিষয়ও পাল্টাচ্ছে। অর্থনীতি, বাজেট, ইতিহাস, সংস্কৃতি থেকে একেবারেই ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতির বিষয়গুলো নিয়ে চলছে আমাদের আলাপ-সালাপ। ট্রেনের জানালা দিয়ে গ্রামের বাড়িঘর, বাজার, পথঘাট দেখে দেখে আমরা ছুটে চলেছি গন্তব্যের দিকে। মুহিত স্যার জানালার বাইরে চোখ রেখে বলেন, ‘দেখেন কোথাও কোনো ঝুপড়িঘর নেই। শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমে আসছে ক্রমে। মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটেছে অনেক।’

স্যারের কাছে জানতে চাই, ‘সফলতার ভিড়ে কখনো কি কোনো ব্যর্থতা রয়ে গেছে? এমন কোনো স্বপ্ন কি আছে যা পূর্ণ হয়নি?’ তিনি বলেন, ‘না।’ তারপর একটু ভাবেন। বলেন, ‘ওয়েল, আমার একটা কনভেনশন সেন্টার তৈরি করার ইচ্ছা ছিল। ট্র্যাডিশনাল কনভেনশন সেন্টার নয়। একদিকে থাকবে খেলাধুলার জায়গা, সংস্কৃতিচর্চার জায়গা...’ আমি যুক্ত করি বিদেশে আমরা যেমনটা দেখি? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেরকমটাই।’ একটু বোধ করি আনমনা হন। কিংবা ভাবনার সরোবরে ডুব দেন।

‘আচ্ছা স্যার, যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন কত লোকজন, প্রটোকল! কত কিছু আপনাকে ঘিরে থাকত! এখন তো সেসব নেই। এ ব্যাপারটায় আপনার কেমন মনে হয়?’ জানতে চাই আমি। তিনি হেসে বলেন, ‘না, সব হয়ে যায়। আমাকে ভালোবেসেই মানুষজন সব করে দেয়। তবে কি, বহুবার আপনার সঙ্গে “কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট” অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছি। এই প্রথম আমি ফিল করছি, আমার সঙ্গে কেউ নেই।’ তারপর হেসে ওঠেন। একটা দীর্ঘ সময় তিনি চালিয়ে নিয়েছেন এ দেশের অর্থনীতির ট্রেন। আলোচিত হয়েছেন, সমালোচিত হয়েছেন। দেশের অর্থনীতি এগিয়েছে। আমাদের ভিতর স্বপ্ন বেড়েছে। স্যারের প্রাজ্ঞ চোখে গভীর দৃষ্টি। তিনি তাকিয়ে দেখেন ট্রেনের বাইরের পৃথিবী। বাইরে তখন বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে রোদ। সবুজ ধান খেতের ওপর ফেলে যাচ্ছে তার আভা। ট্রেনটা সবুজের বুক ফেড়ে যেন ছুটে চলেছে কী এক গভীর ছন্দে। ঝকঝকাঝক।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

[email protected]

সর্বশেষ খবর