কৃষিজমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকহারে কমছে। স্বাধীনতার পর গত চার যুগে কৃষিজমি হ্রাস পেয়ে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। এ সময় জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। কৃষি আধুনিকীকরণের ফলে জমি হ্রাস পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে গড়ে তিন গুণ। গত চার যুগে রাস্তাঘাট, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ নানা স্থাপনা ও বাড়ি তৈরির কারণে কৃষিজমি অর্ধেকে নেমে এসেছে। কৃষিজমি হ্রাসের প্রবণতা না ঠেকাতে পারলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। দেখা দেবে জাতীয় বিপর্যয়। এ বিপদ ঠেকাতে সরকার কৃষিজমি সংরক্ষণে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে গ্রামাঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণে সহজ শর্তে গৃহনির্মাণ ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রস্তাবিত কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১৯-এর খসড়ায় এ প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে মতামত নিতে সম্প্রতি খসড়াটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, গ্রামাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে বাসাবাড়ি তৈরি করে কৃষিজমি নষ্ট করা হচ্ছে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। একটি পরিবারের জন্য একটি বাড়ি না করে, একটি বাড়িতে যদি ১০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা যায়, তবে অনেক জমি বেঁচে যাবে। এ কারণে পরিকল্পিতভাবে আবাসনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করছে সরকার। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কৃষিজমি নষ্ট করে আবাসন, বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটের ভাটা বা অন্য কোনো স্থাপনা কোনোভাবেই নির্মাণ করা যাবে না। তবে অকৃষিজমিতে আবাসন, বাড়িঘর, শিল্পকারখানা স্থাপন করা যাবে। বাংলাদেশের কৃষিজমির ওপর শুধু কৃষক ও কৃষিজীবীর অধিকার থাকবে। এমনকি দেশের সব খাস কৃষিজমি কেবল ভূমিহীনরা পাওয়ার এবং ভোগদখল করার অধিকারী হবেন। কৃষিজমি সুরক্ষায় গ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণে সহজশর্তে গৃহঋণ প্রদানের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। এর ফলে কৃষিজমি সংরক্ষণের পাশাপাশি গ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষমতাও বাড়বে।