মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আত্মশুদ্ধি অর্জনের ১০টি উপায়

শাহ মাহমুদ হাসান

আত্মশুদ্ধি অর্জনের ১০টি উপায়

আত্মশুদ্ধির বিষয়টি দুভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ক. বর্জনীয় : যাবতীয় পাপ, অন্যায় ও অপবিত্র কাজ থেকে মুক্ত হওয়া অর্থাৎ যাবতীয় অসৎগুণাবলি বর্জন করা। অসৎগুণাবলি হলো শিরক, রিয়া, অহংকার, আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, ঘৃণা, কৃপণতা, ক্রোধ, গিবত, কুধারণা, দুনিয়ার প্রতি মোহ, আখেরাতের ওপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া, জীবনের প্রতি অসচেতনতা, অর্থহীন কাজ করা, অনধিকার চর্চা প্রভৃতি। খ. করণীয় : উত্তম গুণাবলি দ্বারা আত্মার উন্নতি সাধন করা অর্থাৎ প্রশংসনীয় গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে পরিত্যাগকৃত অসৎগুণাবলির শূন্যস্থান পূরণ করা। সৎগুণাবলি হলো তাওহিদ, ইখলাছ, ধৈর্যশীলতা, তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা, তওবা, শুকর বা কৃতজ্ঞতা, আল্লাহভীতি, আশাবাদিতা, লজ্জাশীলতা, বিনয়-নম্রতা, মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ প্রদর্শন, পরস্পরকে শ্রদ্ধা ও স্নেহ, মানুষের প্রতি দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ, পরোপকার প্রভৃতি। আত্মশুদ্ধি অর্জনের উপায় : আত্মশুদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করা জরুরি। ১. হালাল-হারাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করা। জীবনের সর্বক্ষেত্রে হালাল-হারাম বাছাই করে চলার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে। আত্মাকে সর্বতোভাবে পরিশুদ্ধ রাখার জন্য যা অত্যাবশ্যক। ২. আত্মাকে বিভিন্ন উত্তম চরিত্র দ্বারা পরিমার্জন ও পরিশোধন করা। নিয়মিতভাবে সৎগুণাবলি অনুশীলনে তা সহজাত অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ৩. ফরজ ইবাদতসমূহ নিয়মিত আদায় করা। কেননা ফরজ ইবাদত আল্লাহর আনুগত্যের সর্বোত্তম বহির্প্রকাশ। যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। ৪. পবিত্র কোরআন পাঠ করা ও তাতে চিন্তা-গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করা। কোরআন পাঠ অন্তরের কালিমা দূর করে দেয়। ৫. সৎসংঘ নিশ্চিত করা। সৎ স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তির সংসর্গে থাকলে অজ্ঞাতসারেই তার সৎগুণ নিজের অন্তরে প্রবেশ করে। ৬. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের প্রথম পদক্ষেপ হলো তওবা করা। তওবার মাধ্যমেই মানুষ পাপ বর্জন করে পুণ্য অর্জনের তৃপ্তি অনুভব করতে পারে। ৭. প্রবৃত্তির কঠোর বিরুদ্ধাচরণ করা ও অসৎ চিন্তাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় না দেওয়া। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে ক্রমাগতভাবে প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণ করতে হয়। কেননা প্রবৃত্তি মানুষকে শিথিলতা ও অবাধ্যতায় প্ররোচিত করে। ৮. আমলকে রিয়া (লোকপ্রদর্শনী) থেকে বিরত রাখা। লোক দেখানোর জন্য অথবা অন্যের নিকট প্রশংসা পাওয়া, দোষারোপ থেকে রেহাই পাওয়া, সম্মান-প্রতিপত্তি অর্জন, ক্ষমতা লাভ করা ইত্যাদি দুনিয়াবী উদ্দেশে কৃত আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সমস্ত কাজ মানুষকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিখাদচিত্ত হওয়া (ইখলাছ) থেকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে। ৯. ধৈর্য ও দৃঢ় বিশ্বাসের গুণ দ্বারা সুশোভিত হওয়া। প্রবৃত্তির ওপর বিজয় লাভ করা, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা ও আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকার জন্য ধৈর্য অবলম্বন অপরিহার্য। আর আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ় বিশ্বাস মানুষকে পথভ্রষ্টতা থেকে পরিত্রাণ দেয় এবং প্রশান্তি ও স্থিরতা দান করে। ১০. তবে এই সব কার্যক্রমকে সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন একজন অভিজ্ঞ আত্মশুদ্ধ মানুষের সহায়তা নেওয়া।

                লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর