একজন রোগীর রোগ নিরাময়ের জন্য শুধু ডাক্তারের কৃতিত্ব পাওয়া উচিত নয়। কৃতিত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সরকার, হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (HCP) অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার ওষুধপত্র (গুণগত মানের) অর্থাৎ ওষুধ তৈরির কারখানার শ্রমিক থেকে মালিক পর্যন্ত। গুণগত মানের ওষুধ আমার মতে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নার্স অথবা রোগীর অ্যাটেনড্যান্টের, কেননা সময়মতো রোগীকে তারাই ওষুধ সেবনে সহায়তা করেন। রোগীর বিছানাপত্র পরিষ্কার করা, রোগীকে টয়লেটে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে আনা-নেওয়া করা এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ডাক্তারের ভূমিকা হলো সঠিক রোগ নির্ণয় করা এবং ওষুধের মাত্রা ও সেবন পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেওয়া।
১৯৭২ সালে তদানীন্তন আইপিজিএমঅ্যান্ডআর ব্লাডব্যাংক উদ্বোধন করতে গিয়ে রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার দেশের রোগীদের  Bed Pan ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীর পাশে পড়ে থাকে, সুইপার নেই বলে তা সরানো হয় না, আমি বিলেতে দেখেছি এমন কি প্রফেসর নিজে  Bed Pan  সরিয়ে নিয়ে যান, তার দৃষ্টিগোচর হলে।’ ১৯৬৮-৭০ সালে আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র। আমাদের ভাগ্য বড়ই নির্মম ও নিষ্ঠুর। আমরা হলাম মার্শাল ল প্রডাক্ট বা পণ্য। আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের নির্মম কশাঘাতের শেষ কয়েকদিন ’৬৮-এর মার্চ। এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা। ’৭০-এর এপ্রিলে ইয়াহিয়া খানের সামরিক আইন, ভিক্টোরিয়া কলেজের চারদিকে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষা। ভাবতে অবাক লাগে। ’৭০ সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে পুরো ’৭১ সাল স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত থাকায়, পাঁচ বছরের স্থলে ছয় বছরে এমবিবিএস শেষ পর্বে পরীক্ষা দিতে হয় ’৭৬ সালে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও আবার জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল। অর্থাৎ মার্শাল ল প্রডাক্ট। বলছিলাম, ’৬৮ সালের সেপ্টেম্বরের কথা। আমাদের এলাকার এক ভদ্রলোক, কুমিল্লার চকবাজার এলাকা থেকে নিখোঁজ। পরে জানতে পারলাম, সীমান্ত, রক্ষীবাহিনী (EPR) ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স তাকে সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে গেছে। কারণ তার ব্যবসা ছিল- এপারের পণ্য ওপারে প্রেরণ এবং ওপার থেকে পণ্য  এপারে আনয়ন। তিনি পাচার করতেন ওষুধ। ত্রিপুরা থেকে আসত গরম মশলা। তাই ধরা পড়ে জেলখানায়। আবার কিছুদিন পর ছাড়াও পেয়ে গেলেন। তখনো কিন্তু দেশে সামরিক আইন। অর্থাৎ পাকিস্তানের সামরিক আইন শেষ দিকে এসে অর্থাৎ পাকিস্তানের ক্রান্তিকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য লুটপাটের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কেননা EPR-এর অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি। পূর্ব পাকিস্তানি অর্থাৎ বাঙালিদের চাকরি পাওয়াটা ছিল সোনার হরিণ খুঁজে পাওয়ার মতো। পাকিস্তান আমলে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো, (GLAXO, SQUIB, MAY & BAKER, Pfizer Hoechst) যেসব ওষুধ তৈরি করত তা ভারতের উৎপাদিত ওষুধের গুণগত মানের চেয়ে অনেক উন্নতমানের ছিল।
এপারে আনয়ন। তিনি পাচার করতেন ওষুধ। ত্রিপুরা থেকে আসত গরম মশলা। তাই ধরা পড়ে জেলখানায়। আবার কিছুদিন পর ছাড়াও পেয়ে গেলেন। তখনো কিন্তু দেশে সামরিক আইন। অর্থাৎ পাকিস্তানের সামরিক আইন শেষ দিকে এসে অর্থাৎ পাকিস্তানের ক্রান্তিকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য লুটপাটের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কেননা EPR-এর অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি। পূর্ব পাকিস্তানি অর্থাৎ বাঙালিদের চাকরি পাওয়াটা ছিল সোনার হরিণ খুঁজে পাওয়ার মতো। পাকিস্তান আমলে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো, (GLAXO, SQUIB, MAY & BAKER, Pfizer Hoechst) যেসব ওষুধ তৈরি করত তা ভারতের উৎপাদিত ওষুধের গুণগত মানের চেয়ে অনেক উন্নতমানের ছিল।
বর্তমানেও আমাদের ওষুধের গুণগত মান খুব খারাপ, আমি তা বলব না। আমাদের যেই ওষুধ বাজার পেয়ে যায় তা যেভাবেই হোক নকল কারখানায় তৈরি হয়ে যায়। আগে জানতাম চাইনিজরা নকলে দক্ষ, এখনো আছে। কিন্তু আমরা কী করে এত বড় গুণের অধিকারী হলাম তা জানি না। বহুজাতিক কোম্পানি Aventis -এর একটি ওষুধ Notezine (Diethylcarbamazine) ব্যবহার করা হয় বিশেষভাবে Filarisis -এর কারণে Eosinophilia এবং কাশি হলে তা নিরাময়ের জন্য খুবই ধন্বন্তরি ওষুধ। আমার এক রোগী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হয়ে কাশির জন্য আমার কাছে এলে আনুষঙ্গিক সব পরীক্ষা করে Eosinophil Count বেশি ছাড়া অন্য কিছু না পেয়ে আমার সহপাঠী, মেডিকেল কলেজে ছয় বছর একসঙ্গে পার্টনার হিসেবে লেখাপড়া করা, মেডিসিন ও নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম আনোয়ারউল্লাহর পরামর্শ নিই এবং কোনো নিউরোলজিক্যাল ও মানসিক রোগের রোগী নয় (হিস্টেরিক) এই চিন্তা করে সঠিক মাত্রায় Notezine -এর ব্যবস্থাপত্র দিই। রোগী ২১ দিনের ওষুধের কোর্স করে এলে পরে কাশি বিন্দুমাত্রও কমেনি বরং বেড়েছে। তাই বাড়ির পাশে আরশীনগরে (কলকাতা) রোগী চলে যায়। সেখানকার ডাক্তার ঠিক একই ওষুধ BENOCIDE (Diethylcarbamazine) একই মাত্রায় সেবনের জন্য দিলে সাত দিনের মধ্যে দেশে চলে আসেন। ফিরে এসে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আমাকে বললেন, ‘ডাক্তার সাহেব! আপনারা ছয় মাস ধরে আমাকে কী চিকিৎসাা দিলেন, ওইখানে শুধু একটি ওষুধ গরম পানি দিয়ে খেতে দিলেন ছয় দিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেলাম।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম ওষুধটা কী? তিনি দেখালেন। তাকে বুঝিয়ে বললাম আমরা যা দিয়েছি, তারাও একই ওষুধ দিয়েছেন শুধু দুই কোম্পানির দুই নাম। আমাদেরটাও বহুজাতিক কোম্পানির ওষুধ, তাদেরটাও ঠিক একই। আমি তখন Aventis Pharma তে চাকরি করেন আমার দীর্ঘদিনের সুহৃদ জামসেরুজ্জামানকে টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, ‘আমরা তো এ ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি অনেক আগে এবং বাজারে যা ছিল তাও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ চলে যাওয়ায় উঠিয়ে নিয়ে আসছি।’ এখন প্রশ্ন হলো- ওষুধ কি মেয়াদোত্তীর্ণ, নাকি নকল? তখনকার সময়ের মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের লেখাপড়া, জ্ঞান-গরিমা, আচার-ব্যবহার সেখান থেকে ডাক্তারদের অনেক শেখার ছিল। জামসেরুজ্জামান ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি বল দোষটা কার? আর তোমরা কেন সঠিক সময়ে এসব তথ্য আমাদের দাওনি? সে-ই নিজে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক ফার্মেসি থেকে এক Strip Notezine এনে দেখাল, এসব কারণে ওষুধটা নকল।
আমি এখানে কাউকে দোষ দিচ্ছি না। এখানে প্রতিযোগিতা দায়ী। সেই প্রতিযোগিতা হলো, দ্রুত ধনী হওয়ার প্রবণতা। মহাত্মা গান্ধীজি ১৯০৫ সালে যে সাতটা মৃত্যুসম পাপকর্মের কথা বলেছিলেন তার দুটো হলো- Wealth without work অর্থাৎ বিনা পরিশ্রমে সম্পদের মালিক হওয়া, যেটা আমার দেশে শুধু ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করা ব্যবসার নামে। দ্বিতীয়টা হলো Commerce without Morality নৈতিকতাবিবর্জিত বাণিজ্য। সাম্প্রতিক পিয়াজের বাজার তার প্রকৃত উদাহরণ। পাইকারি বিক্রেতা ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেও লাভ করতেন। তার স্টক শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৩০ টাকা দরে বিক্রি করলে কোনো ক্ষতি হতো না, বরং নৈতিকতা তাকে অনেক বড় করে তুলত, কিন্তু তিনিও দাম বাড়িয়ে দিলেন। আবারও সেই একই কথা- অতিদ্রুত ধনী হওয়ার প্রবণতা। Vibramycin, Pfizer কোম্পানির একটা ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক)। ১৯৭৪ সালের পর বেশ কয়েক বছর দাপটের সঙ্গে সার্জিক্যাল রোগীর এবং সার্জনদের ওপর দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করে গিয়েছিল। আমাদের অতিপ্রিয় শিক্ষক, সার্জন এবং পন্ডিত ব্যক্তি নূরুল হক সরকার স্যার পেটের যে কোনো অপারেশনের আগে রক্তের শিরার মাধ্যমে দুই ভায়াল ইনজেকশন দিয়ে অপারেশনের পরে আর একটি দিয়ে Antibiotic- -এর কাজ সেরে দিতেন। সেই দুর্দমনীয় রাজত্ব ফাইজারের আবিষ্কৃত ২৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিমজ্জিত হয়ে গেল বাংলাদেশ। তখন এর একটা ক্যাপসুলের দাম ছিল ৫ টাকা, তখন দেশি কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে গুণগত মানবিবর্জিত কাঁচামাল এনে তা দুটি করে ক্যাপসুল বিক্রি শুরু করল। Vibramycin তখন বাজারে মার খেতে শুরু করল। চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব তখন মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ ছিলেন, কিন্তু জ্ঞানের মাত্রায় সত্যিই দক্ষ ক্যামিস্ট, তিনি বললেন এখন থেকে আমাদের Vibramycin -এর দাম কমে যাবে তবে তা Doxicap নামে পাওয়া যাবে। এ নামে আমরা বাজারজাত করছি। আমার মনে প্রচন্ড খটকা লাগল। বয়সে বড় হলেও বন্ধুর মতো মোহাম্মদ আলী ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম। আমাকে আপনার রহস্যটা খুলে বলতে হবে। তিনি জবাব দিলেন, দেশীয় কোম্পানিগুলো যেসব উৎস থেকে কাঁচামাল এনে তা বাজারজাত করছে, আমাদেরও বাজারে টিকে থাকতে হলে ওইসব উৎস থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হবে। যেহেতু আমরা Pfizer থেকে কাঁচামাল এনে বাজারে টিকে থাকতে পারব না, তাই কোম্পানির অনুমতিসাপেক্ষে অন্য উৎস থেকে কাঁচামাল এনে ওষুধ তৈরির অনুমতি পেয়েছি, তবে Pfizer-Gi Brand Name Vibramycin ব্যবহার করতে পারব না, শর্তে। এই হলো ওষুধের রাজনীতি ও দুর্নীতি। এবং চভরুবৎ-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত একটা কোম্পানির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার একই ওষুধ কাঁচামালের উৎস পরিবর্তন এবং নাম পরিবর্তন করে ব্যবসায় টিকে রইল। সম্ভবত ১৯৭৭-৭৮ সালের কথা, হঠাৎ করে তৎকালীন পিজি হাসপাতালের পরিচালক সর্বজনশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক নূরুল ইসলাম একটি গবেষণা প্রশ্নপত্র পাঠালেন সব ডাক্তারের কাছে। সারমর্ম হলো- ১৯২১ সালে আবিষ্কৃত Novalgin ব্যবহার করে কারও Bone marrow depression হয়েছে কিনা? কে কী উত্তর দিয়েছে জানি না। ট্যাবলেট হিসেবে, ড্রপ হিসেবে এমনকি ইনজেকশন হিসেবে Novalgin পাওয়া যেত। আমি একটা ফরম পূরণ করে লিখেছিলাম, যেহেতু আমি মেডিকেল প্র্যাকটিস করি না। এবং বাচ্চাদের টনসিল অপারেশনের পরে তীব্র ব্যথার কারণে নভালজিন ড্রপ প্রচুর ব্যবহার করেছি ভর্তি রোগীদের জন্য তবে এমন কোনো তথ্য পাইনি। অধিকন্তু আমি মেডিকেল কলেজে ভর্তির পরে ১৯৭০-৭৮ পর্যন্ত কয়েক হাজার নভালজিন ট্যাবলেট খেয়েছি মাথাব্যথার জন্য। আমারও Bone marrow depres হয়নি। কিন্তু শেষাবধি বাংলাদেশে Novalgin নিষিদ্ধ হলো। যদিও এখনো হোয়েকস্ট কোম্পানির তৈরি এ ওষুধ ভারত, জার্মানিসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই পাওয়া যাচ্ছে এমনকি ওটিসি ড্রাগ হিসেবে। ২০১৮ সালে এসে Novalgin -এর ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে সুইডেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশে।
নতুন ধান্দা হলো Ranitide নিয়ে। দেশ হঠাৎ করে প্রচার হলো জিএসকে কোম্পানি অর্থাৎ ব্রিটিশ কোম্পানি জানিয়ে দিল তার ভিতরে ক্যান্সারের উপাদান আছে। প্রশ্ন হলো, ১৯৮১ সালে আবিষ্কৃত ও ২০১৮ সাল পর্যন্ত অবিরামভাবে ব্যবহৃত এ ওষুধ এত দিন যারা ব্যবহার করেছিলেন, তাদের কী হবে? নাকি তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হওয়ার জন্য উৎপাদিত অ্যান্টি আলসারেস্টগুলো বাজার পাচ্ছে না এবং মুনাফার হার কমে যাচ্ছে, সেটা কি কোনো কারণ নয়? কতটি গবেষণা হয়েছে? কত লোক ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে, তার বিশদ ব্যাখ্যা আমাদের জন্য প্রয়োজন ছিল।
লেখক : সাবেক উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        