রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নবী-রসুলগণ বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলতেন

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

নবী-রসুলগণ বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলতেন

দুনিয়ায় যত নবী-রসুল এসেছেন সবাই বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলতেন। মায়ের ভাষায় ইসলামের দাওয়াত দিতেন এবং মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন। বিশুদ্ধ ভাষায় তাওহিদ বা একাত্মবাদের দিকে ডাকতেন। কেউ অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন না। গ্রাম্য ভাষায় দীনের দাওয়াত দিতেন না। তাঁরা মাতৃভাষাকে অনেক ভালোবাসতেন। হৃদয় থেকে মুহব্বত করতেন। কারণ মাতৃভাষা মহান আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। অপূর্ব দান। মানুষ সৃষ্টি করে আল্লাহ তাকে কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশের জন্য মাতৃভাষা দান করেছেন। তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেক নবী-রসুলকে মাতৃভাষার বিশুদ্ধ জ্ঞান দিয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সূরা ইবরাহিমের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘আমি দুনিয়ায় যত রসুল পাঠিয়েছি (আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য) প্রত্যেককে তার স্বজাতির ভাষা (মাতৃভাষা) দিয়ে পাঠিয়েছি, যেন সে তার জাতিকে (মাতৃভাষায় দীনের কথা) বোঝাতে পারে।’ অর্থাৎ আল্লাহর পথে মাতৃভাষায় জনগণকে যেন আহ্বান করতে পারে, এজন্য নবী-রসুলদের মাতৃভাষার জ্ঞান দিয়ে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি আরবের সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী। এ ছাড়া আমার গোত্র কোরাইশ বংশ আরবি শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী। আর আমি যেখানে লালিত-পালিত হয়েছি (হালিমা সাদিয়ার ঘরে দুধপান করা অবস্থায়) সেই বনু সাদ হলো উচ্চারণের ক্ষেত্রে আরবের সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী।’ কোরাইশ বংশের লোকেরা তাদের গদ্যে ও পদ্যে সুন্দর এবং চমৎকার আরবি শব্দ চয়ন করতে পারত। আর বনু সাদের লোকেরা কথা বলত খুব সুন্দর উচ্চারণে। এজন্য আল্লাহ তাঁর প্রিয় রসুলকে এখানে জন্ম ও লালন-পালনের ব্যবস্থা করেছেন। মাতৃভাষায় বিভিন্ন প্রবন্ধ এবং কাব্য রচনা করাও একটি বিরাট সওয়াবের কাজ। বিখ্যাত সাহাবি হজরত হাসসান ইবনে সাবিত (রা.) ছিলেন মাতৃভাষায় কবিতা রচনায় পারদর্শী। এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সব সময় উৎসাহিত করতেন যেন কবিতার মাধ্যমে তিনি ইসলামের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলেন। পাশাপাশি কাফিরদের কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করতে পারে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যুদ্ধে যেতেন, প্রায় যুদ্ধেই হাসসান ইবনে সাবিতকে (রা.) কবিতা রচনার জন্য নিয়ে যেতেন। যেন তাঁর কবিতা রচনা ও আবৃত্তি শুনে মুসলিম সেনাবাহিনীর মধ্যে উদ্দীপনা জাগে। প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সাহস বাড়ে। আর কাফির যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে পড়ে। মুসলিম শিশু-কিশোরদের মাতৃভাষা শেখানোর প্রতি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। বদরের যুদ্ধে যেসব কাফির পরাজিত হয়ে মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়, তখন মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কিছু কাফির এমন ছিল যে, মুক্তিপণ দেওয়ার মতো কোনো টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ তাদের কাছে ছিল না। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিদ্ধান্ত দিলেন, প্রত্যেক কাফির ১০ জন মুসলমান শিশু-কিশোরকে মাতৃভাষায় লেখাপড়া শেখাবে। তাহলে তাদের কাছ থেকে আলাদা করে আর মুক্তিপণ নেওয়া হবে না। মুসলমান শিশু-কিশোরকে মাতৃভাষা শেখানোই মুক্তিপণ হিসেবে গণ্য হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ মাতৃভাষা শেখার তৌফিক দান করুন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর