অফিস-আদালত অবশেষে আগামীকাল থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে অন্য সব সভ্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠান ঢালাওভাবে বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সভ্যতার ক্ষেত্রে অনেক দেশের তুলনায় আমরা যে খুবই পিছিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে প্রায় সোয়া দুই মাসের ছুটিতে ঘরে থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার বদলে মহাউল্লাসে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে রাজধানী ও নগর শহর ছেড়ে বাড়িতে বেড়ানোর ঘটনায়। এ যথেচ্ছতায় যানবাহন ও ফেরিতে মানুষের যে ভিড় গড়ে ওঠে তা করোনাভাইরাস সংক্রমণেই সহায়তা করেছে। আর ঢালাও ছুটি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। স্মর্তব্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় সেই ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে টানা ৬৬ দিন ছুটিতে ছিল সারা দেশ। এ সময়ের মধ্যে ২৬ এপ্রিল থেকে সরকার চলমান ছুটির পাশাপাশি সীমিত আকারে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও দফতর খোলার নির্দেশ দেয়। এরপর গত এক মাস সাধারণ ছুটির আবরণে থাকা লকডাউন কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। ২৩ এপ্রিল এক আদেশে সরকার ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ায়। এই সময়ে ঈদের ছুটিতে সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পারে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। চলমান ছুটির মেয়াদ বাড়বে কি বাড়বে না এ নিয়ে বুধবার সারা দিনই নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু বুধবার বিকালেই সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, ছুটির মেয়াদ বাড়ছে না। ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে অফিস-আদালত, গণপরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শপিং মল সবই খুলে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আদেশও জারি করা হয়েছে। আমরা বারবার এ কলামে উৎপাদন ব্যবস্থা সচল করার পক্ষে মতামত রেখেছি। সবকিছু বন্ধ রাখার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস-আদালত কলকারখানা চালু থাকলে করোনাজনিত বিপর্যয় সীমিত রাখা সম্ভব বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আশা করব অফিস-আদালত দোকানপাট খুলে দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে প্রশাসন কড়া হবে।