বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

হজে যেতে না পারায় ধৈর্য হারাবেন না

মো. আবু তালহা তারীফ

হজে যেতে না পারায় ধৈর্য হারাবেন না

লাব্বাইক শব্দে হজ আদায় করলেন হাজীরা। অনেকের আশা ছিল, ইহরামের কাপড় পরিধান করে মনের বাসনা পূরণ করার জন্য কাবাঘর তাওয়াফ আর মদিনায় প্রিয় নবীর রওজা জিয়ারত করবেন মনের আনন্দে। কিন্তু করোনার থাবায় সব বিলীন হয়ে গেল। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। এ বছরের হজ হৃদয় ব্যথিত হওয়ার হজ। কখনো ভাবতেই পারিনি। এখন ইচ্ছা করলেই স্বপ্নের মক্কা-মদিনায় যাওয়া যাবে না।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর খুব সীমিত পরিসরে হজ পালনের উদ্যোগ নিয়েছিল সৌদি সরকার। মহামারী থেকে মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে আন্তর্জাতিকভাবে বহির্বিশ্বের হজ পালনকারীরা এ বছর হজে অংশ নিতে পারেননি। মন খারাপের কিছু নেই।

যাতায়াতের রাস্তা অনিরাপদ কিংবা শারীরিক বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সে ক্ষেত্রে হজে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ইসলাম এমনটি বলেছে। করোনা যেহেতু মহামারী একটি রোগ, সে ক্ষেত্রে সেখানে যাওয়াটা জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই করোনা মহামারীর সময় যাত্রা অনিরাপদ। এ ছাড়া সমাগম এড়িয়ে চলা খুবই ভালো। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, মহামারীর কারণে বেশ কয়েকবার হজ করা সম্ভব হয়নি। হজের মৌসুমে কলেরা নামক মহামারীর প্রাদুর্ভাবে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল। এমনকি আরাফার ময়দানে অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। সেই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকেই হজে অংশগ্রহণ করেননি। এ ছাড়া ৩৫৭ হিজরিতে মক্কায় মাশিরি নামের মহামারী রোগ দেখা দেয়। সে সময় বেশির ভাগ হাজীর মৃত্যু হয়। আবার অনেক হজযাত্রী মক্কায় আসার পথে পিপাসায় কাতর হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকেই হজ সম্পন্ন করেও মারা যান। সূত্র : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া।

যখন কোনো ব্যক্তি হজে যাওয়ার জন্য পরিশুদ্ধ নিয়ত করে তখন তার প্রতি আল্লাহ খুশি ও রহম হন। আল্লাহ তার আমলের খাতায় সওয়াব লিপিবদ্ধ করান। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ভালো কাজ করার নিয়ত করে, কিন্তু ওই ব্যক্তি যে কোনো সমস্যার কারণে ওই কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি তবু শুধু নিয়ত করার কারণে পূর্ণ সওয়াব পেয়ে যাবে।’ বুখারি।

আমাদের মনে রাখা জরুরি, মহামারী যেহেতু আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, এখন যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে, কিংবা এবার যারা যেতে পারেননি, কোনো অবস্থায় মন খারাপ করে ধৈর্য হারিয়ে ফেলা যাবে না। এ বছর যেতে পারেননি তাতে কী? আগামী বছর আল্লাহ কবুল করলে যাবেন ইনশা আল্লাহ। হায়াত বৃদ্ধি, পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়া এবং হজে যাওয়ার সাহায্য চেয়ে দোয়া করতে হবে। গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। ফরজ ইবাদত করাসহ অতিরিক্ত নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়সহ দোয়া কবুলের সময় হজে যাওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে। অতিরিক্ত দরুদ পাঠ করতে হবে। সব সময় হজে যাওয়ার বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে। আবার মহামারীর দোহাই দিয়ে হজ থেকে বিরত থাকা চলবে না। এবার যেহেতু পারিনি আগামীতেও যাব না। টাকা খরচ করে ফেলি। এ ধরনের মানসিকতা থাকলে দূর করতে হবে। হজের নির্দিষ্ট আমলে আলাদা সওয়াব পাওয়া যায়। হজের আমল হজ করার মাধ্যমেই আদায় হয়। তবে আমলের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য হজের সঙ্গে কিছু আমলের তুলনা করা হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত সেই আমল করতে পারি। ফজরের নামাজ জামাতে আদায়ের পর মসজিদে বসে মহান আল্লাহর নাম স্মরণ, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠ এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করে সূর্যোদয়ের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায়। প্রতি রাতে চারবার কলমা তামজি পড়ে ঘুমানোসহ পিতা-মাতার চেহারার দিকে ভালো নিয়তে তাকালে কবুলি হজের সওয়াব পাওয়া যাবে। তেমনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার নামাজকে গরিবের হজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সূত্র কানজুল উম্মাল।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর