রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

যৌতুকের মামলায় কী করবেন?

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

যৌতুকের মামলায় কী করবেন?

স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। তালাকের নোটিস প্রাপ্তির পর আপনি এবং আপনার পরিবারকে শায়েস্তা করার জন্য তালাকের বিষয় গোপন করে থানা কিংবা কোর্টে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ভাবছেন কী করবেন, কোথায় যাবেন, কীভাবে মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ পাবেন। তালাক আপনার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। আপনি শুরুতেই মামলার কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। যদি এমন হয় আপনি জানতে পারলেন না আর হঠাৎ পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেল তাহলে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে পাঠাবে। তখন আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করুন। যদি দলিলপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণ ঠিক থাকে তাহলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই মিলবে। আর মামলাটি যদি থানায় হয় তাহলে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তালাকের কপিসহ মিথ্যা মামলার ডকুমেন্টগুলো প্রদান করুন। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেন। আর তদন্ত কর্মকর্তা যদি এ কাজটি না করে চার্জশিট দাখিল করেন তাহলে আপনি বিচারিক আদালতে মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন কোনো কারণে নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। মনে রাখতে হবে, যদি থানায় মামলা না হয়ে আদালতে সিআর বা পিটিশন মামলা হয় তাহলে আদালত সমন দিতে পারে কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারে। এ ক্ষেত্রেও আদালতে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। ক্ষেত্রবিশেষ হাই কোর্ট বিভাগ থেকে আগাম জামিন নিতে পারেন। আপনার স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর পরিবারের কেউ যদি আপনার ক্ষতিসাধনের ইচ্ছায় মিথ্যা যৌতুক মামলা করেন কিংবা মামলা করাতে সহায়তা করলে যিনি মিথ্যা মামলা করেছেন বা করতে সহযোগিতা করেছেন তারা প্রত্যেককে পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে এ মামলাটি করতে হবে যখন আপনি মিথ্যা মামলার দায় থেকে বেকসুর খালাস পাবেন। তারপর আদালতে আবেদনের মাধ্যমে মামলাটি করতে হবে। যৌতুক নিরোধ আইনের ৬ ধারায় এ কথাগুলো স্পষ্ট করে বলা আছে। মনে রাখবেন যৌতুকের অভিযোগে যে কেবল স্ত্রীই মামলা করতে পারবেন তা নয়, স্ত্রী যদি আপনার কাছে যৌতুক দাবি করেন আপনিও স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করতে পারেন।

এবার জেনে নিই তালাকের পর আপনার স্ত্রী যৌতুক মামলা করলে সে মামলার ফলাফল কী হবে। যৌতুকের অপরাধ প্রমাণ করতে হলে ঘটনার তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে যৌতুকের মামলা করতে হয়। ওই সময় অতিক্রান্তের পর মামলা রুজু করলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(এ) ধারামতে বাতিলযোগ্য হবে। (১৬ বিএলডি, এডি, ১১৮)। সে কারণে তালাক প্রাপ্তির পর মামলা হলে বাদীপক্ষ থেকে মামলা প্রমাণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। মনে রাখবেন দন্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আপনি পাল্টা মামলা করতে পারেন। এ ছাড়া দন্ডবিধির ১৯১ ও ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডের কথা উল্লেখ আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ১৭ ধারায়ও মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এ আইনের অন্য কোনো ধারায় মামলা করার জন্য আইনানুগ কারণ না জেনেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন অথবা অভিযোগ করান তবে সেই অভিযোগকারী অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন। কাজেই তালাকের পর আপনি যদি মিথ্যা মামলার শিকার হয়েই যান তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলাটি লড়ে যান। বিজয় আপনার অবশ্যম্ভাবী।

লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর