রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

হৃদরোগের মহৌষধ অর্জুন

ডা. আলমগীর মতি

ভেষজ শাস্ত্রে ওষুধি গাছ হিসেবে অর্জুনের ব্যবহার অগণিত। বলা হয় বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর একজন চিকিৎসক থাকা একই কথা। এর ওষুধি গুণ মানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুপ্রাচীনকালেই। শারীরিক বল ফিরিয়ে আনা এবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবিত করার ভেষজ রস হিসেবে অর্জুন ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে মহাভারত ও বেদ-সংহিতায়। তারপর যত দিন যাচ্ছে অর্জুনের উপকারী দিক উদ্ভাসিত হচ্ছে। নিচে অর্জুনের কিছু উপকারী দিক বর্ণনা করা হলো-

হৃদরোগ : অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগে। অর্জুন-ছালের রস কো-এনজাইম কিউ-১০সমৃদ্ধ। এ কো-এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাড প্রেসার ও কলেস্টেরল লেভেল কমায়। অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে।

অ্যাজমা : অর্জুন-ছালের পাউডার ১২ গ্রাম দুধের ক্ষীর বা পায়েসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা রোগের স্থায়ী সমাধান হবে।

ক্ষয়কাশে : অর্জুন-ছালের গুঁড়া বাসক -পাতার রসে ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখতেন প্রাচীন বৈদ্যেরা। দমকা কাশি হতে থাকলে একটু ঘি ও মধু বা মিছরির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে দিতেন। এতে কাশির উপকার হতো।

হাড় মচকে গেলে বা চিড় খেলে : অর্জুন-ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে মচকানো জায়গায় লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরে যায়। তবে সেই সঙ্গে অর্জুন-ছালের চূর্ণ ২-৩ গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি ও সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো হয়।

ত্বকের পরিচর্যা : ত্বকে ব্রণের ক্ষেত্রে অর্জুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছালের চূর্ণ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্রণের ওপর লাগালে খুব দ্রুত উপকার হয়। এ ছাড়া ছালের মিহি গুঁড়া মধু মিশিয়ে লাগালে মেছতার দাগ দূর হয়।

বুক ধড়ফড় : যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই তাদের পক্ষে অর্জুন-ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মিলি পানির সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে বিকালবেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে। তবে পেটে যেন বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লো ব্লাড প্রেসারে উপযুক্ত নিয়মে তৈরি করে খেলেও অবশ্য প্রেসার বাড়বে।

রক্তপিত্তে : মাঝেমধ্যে কারণে-অকারণে রক্ত ওঠে বা পড়ে সে ক্ষেত্রে ৪-৫ গ্রাম ছাল রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে পানিটা খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ক্ষত বা ঘা : শরীরে ক্ষত বা ঘা হলে, খোস-পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুন-ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুয়ে ছালের মিহি গুঁড়া পানি দিয়ে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ঘা সেরে যায়।

যৌনরোগ : যাদের মধ্যে যৌন অনীহা  দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে অর্জুনের ছালচূর্ণ উপকারী। এ ছালচূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত খেলে এ রোগ দূর হয়। এ ছাড়া যাদের শুক্রমেহ আছে তারা অর্জুন-ছালের গুঁড়া ৪-৫ গ্রাম ৪-৫ ঘণ্টা আধা পোয়া গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ছেঁকে ওই পানির সঙ্গে এক চামচ শ্বেতচন্দন মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। এটা সুশ্রুতসংহিতার কথা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর