শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিএনপি কি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে শিখবে?

সৈয়দ বোরহান কবীর

বিএনপি কি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে শিখবে?

বিএনপি পরপর তিন দিন বৈঠক করল। বিএনপির ভাষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন দিনের বৈঠকে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সংগঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে বলে দলটির নেতারা গণমাধ্যমকে বলেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এও জানা গেছে, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেওয়া দলটির জন্য ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দুঃসহ ব্যাপার। মাছ যেমন পানি ছাড়া থাকতে পারে না, তেমনি বিএনপিও ক্ষমতা ছাড়া নানা সংকটে রয়েছে। অনেকেই মনে করেন বিএনপি বিলুপ্তপ্রায়। বিএনপি আর কোনো দিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না- এমন অভিমতও পোষণ করেন কেউ কেউ। কিন্তু বিএনপি যতই সংকটে থাক না কেন তার নিজস্ব একটা সমর্থক গোষ্ঠী আছে। আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির এখনো একমাত্র জায়গা বিএনপি। ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তি, ’৭৫-এর ষড়যন্ত্রকারী, বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে না এমন সব পক্ষের মিলনকেন্দ্র বিএনপি। তাই এখনো আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। ইদানীং বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রায় এক মাস ধরে সরকারের বিরুদ্ধে সরব ও সোচ্চার বিএনপি নেতারা আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন। কিন্তু আমার বিবেচনায় ভুল রাজনীতি ও ভুল নেতৃত্বের জন্যই বিএনপি এখন বিলীনপ্রায় একটি রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। বিপুল কর্মী-সমর্থক থাকার পরও দলটির আপাত ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যায় তারা হতাশ।

একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যাওয়া। এজন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলকে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি তৈরি করতে হয়। এ কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হয়। ভোটে গিয়ে জনগণকে কর্মসূচি বোঝাতে হয়। জনগণ ভোট দিলে সরকার গঠন করে সে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়। কিন্তু বিএনপির কর্মসূচি কী? কাগজে-কলমে বিএনপির ১৯ দফা বলে এক কর্মসূচি আছে। যে কর্মসূচিটি ১৯৭৮ সালে প্রণীত। এত বছর পর ওই কর্মসূচি পরিত্যক্ত, আবেদনহীন। এই সময়ে বাংলাদেশ অনেক বদলে গেছে। বৈশি^ক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দল ৪৩ বছরে তার কর্মসূচি হালনাগাদ করতে পারেনি। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে? একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির একমাত্র কাজ আওয়ামী লীগের সমালোচনা এবং ওই সমালোচনার জবাব দেওয়া। গত এক মাসে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ও বিবৃতিগুলো বিশ্লেষণ করলাম। এখানে ৯৯ ভাগ হলো আওয়ামী লীগ সরকারকে গালাগালি। ১ ভাগ হলো গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সমালোচনা। দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল (জনপ্রিয়ও বটে) কর্মসূচিবিহীন। বিএনপি মহাসচিব বলছেন টিকা কেলেঙ্কারি হয়েছে। কিন্তু টিকা কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির রোডম্যাপ কী, জাতি জানে না। মির্জা ফখরুল বলছেন দেশ দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিএনপি তিনবার বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছে। কাজেই জনগণ জানতে চায় দুর্নীতি বন্ধে বিএনপির কর্মসূচি কী।

বিএনপি নেতারা বলছেন আমলারা এখন আমলা লীগ হয়ে গেছে। কিন্তু নিরপেক্ষ গণমুখী প্রশাসন নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কী, জাতি জানে না। এভাবেই শুধু ইস্যুর পেছনে ছুটতে ছুটতে বিএনপি এখন হাঁপাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অদ্ভুত এক বাস্তবতা বিরাজ করে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করেন তাদের সামনে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ ভুল করলে এসব নাগরিক দুঃখিত হন। দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী যখন বলেন, ‘সমালোচনা আমাকে শক্তিশালী করে’ তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ সর্বনাশের শঙ্কায় কেঁপে ওঠেন। এসব জনগোষ্ঠীর আর কোনো জায়গা নেই। তাদের কোনো পছন্দ নেই। তেমনি যারা হৃদয়ে এখনো পাকিস্তানকে লালন করেন, পাকিস্তান থাকলেই ভালো হতো বিশ্বাস করেন, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী চিন্তা লালন ও ধারণ করেন. বাংলাদেশকে ভারত গ্রাস করে ফেলল বলে আতঙ্ক অনুভব করেন তাদের সামনেও বিএনপির কোনো বিকল্প নেই। এরা যে কোনো পরিস্থিতি ও অবস্থায় বিএনপিকে সমর্থন করেন। বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী তাদের পছন্দ পরিবর্তন করেন। তারা সরকারের ভালোমন্দ ও বিরোধী পক্ষের চিন্তাভাবনা বিচার-বিশ্লেষণ করেন। এ জনগোষ্ঠী এখন দুই পক্ষের ওপরই যারপরনাই বিরক্ত। ফলে এরা রাজনীতির ওপরই আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। বিএনপি তাই জানে তাদের কিছু করতে হবে না, কোনো কর্মসূচি দিতে হবে না। আওয়ামী লীগের ওপর অনাস্থা, ভারতবিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িকতাই বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখবে। যত দিন দেশে আওয়ামী লীগ থাকবে তত দিন আওয়ামী লীগবিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে বিএনপিও থাকবে। এ ধারণা ও বিশ্বাস বিএনপির মধ্যে এখন প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে। এ কারণেই বিএনপি হাত-পা গুটিয়ে শুধু কথামালার রাজনীতি করছে। বিএনপির গত তিন দিনের বৈঠকে সেই মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু একই ধারায় সব সময় স্রোত বয়ে যায় না। সময়ের সঙ্গে জনগণের চিন্তাভাবনা পাল্টে যায়।

বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও চিন্তাভাবনার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। যেমন এখন মানুষ উন্নয়নমুখী রাজনীতি চায়। মানুষ এখন নিজের জীবনমান উন্নত করতে চায়। আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায় বিষয়গুলো সামনে এনেছে। আওয়ামী লীগ খুব সচেতনভাবেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়েছে বহুগুণ। তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের রাজনীতির মূল কাঠামোর মধ্যে ঢুকিয়েছে। ব্যবসায়ীরা স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা চান। এখন তাদের সামনে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। মেয়েদের কর্মসংস্থান, শিক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ধারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সবচেয়ে ধার্মিক নারীটিও (যদি না তিনি উগ্রবাদে সরাসরি জড়িত হন) বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান চান না। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত করেছে। সমালোচকরা একে ক্ষমতায় থাকার কৌশল বলতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি বলয় তৈরি করেছে যেখান থেকে তাকে সরানো কঠিন। আওয়ামী লীগ এ অবস্থানে এসেছে বিএনপির চেয়েও প্রতিকূল অবস্থা পেরিয়ে। বিএনপি ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল ২১ বছর। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও বিএনপিতে বড়সড় ভাঙন হয়নি। আওয়ামী লীগ ’৭৫-এর পর কয়েক দফা ভেঙে ছিল। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পরও আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন আবদুর রাজ্জাক। গঠন করেছিলেন বাকশাল। সে রকম খাদ থেকে উঠে এসে আওয়ামী লীগ এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের আগে বড় বড় ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা বলেছিলেন। একজন ব্যবসায়ী নেতা নির্বাচনের আগে বলেছিলেন ‘আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক বেশি ব্যবসাবান্ধব’। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আওয়ামী ফোবিয়ায় ভুগছিলেন সে সময়। সেনাবাহিনীর মধ্যেও আওয়ামীবিদ্বেষ ছিল। ভ্রান্ত ধারণা ছিল। ধর্মপ্রাণ মানুষের অনেকে মনে করতেন আওয়ামী লীগের হাতে ইসলাম নিরাপদ নয়। এসব কথা মানুষের মনোজগতে প্রবেশ করানো হয়েছিল। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বেশ ভালোভাবেই জেঁকে বসে ছিল। পশ্চিমা দেশগুলো মনে করত আওয়ামী লীগ সমাজতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা লালন করে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইসলামী দেশগুলোর ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ ‘ইসলাম’কে ধারণ করে না। এমনকি আওয়ামী লীগ মানেই ইসলামবিদ্বেষ এমন প্রচারণাও ছিল প্রবল। এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে এসেছে। এখন ব্যবসায়ীরা মনে করেন আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন আওয়ামী লীগই আমলাতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। সেনাবাহিনী মনে করে তাদের পেশাদারির জন্য আওয়ামী লীগই সেরা।

একটু থামুন। সরকারে থাকার জন্য ক্রিয়াশীল গুরুত্বপূর্ণ এসব শক্তি কি আওয়ামী লীগকে তাদের প্রধান মিত্র মনে করে? না একজন ব্যক্তিকে? একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, না, আওয়ামী লীগকে নয় বরং একজন ব্যক্তির প্রতি আস্থাশীল সবাই। তাঁর নাম শেখ হাসিনা। এখনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক অনেক ধারণা আছে। কিন্তু একজন মানুষের প্রতি সব ব্যবসায়ী আস্থাশীল। তিনি শেখ হাসিনা। প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, ধর্মীয় নেতাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আস্থার নাম শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আছেন এজন্যই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। শেখ হাসিনা আছেন এজন্যই আওয়ামী লীগ নিরাপদ। আজকাল বিভিন্ন মহলে প্রায়ই আলোচনা হয়- শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ খুবই অগোছালো, অজনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে এটা আওয়ামী লীগেরই কোনো নেতা বিশ্বাস করেন না। ’৭৫-এর পর বিলীনপ্রায় একটি রাজনৈতিক দলকে নতুন জীবন দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একক জনপ্রিয়তায় দলকে ক্ষমতায় এনেছেন চারবার। একাই সামলাচ্ছেন সব বিপদ, সব প্রতিকূলতা। শেখ হাসিনাই বিশ্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে গ্রহণযোগ্য, উদার গণতান্ত্রিক ও মুসলিম প্রগতিশীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজ একটা ব্যাপার স্পষ্ট, শেখ হাসিনার আলোতেই আওয়ামী লীগ আলোকিত। একজন নেতা দল এবং দেশের সব ভার বহন করছেন। আর তাই ’৭৫-এর পর আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের শিরোনাম ‘শেখ হাসিনা’।

এখন যখন বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছে তখন দলটির মধ্যেই নেতৃত্বের সংকট প্রবলভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিএনপিতে গত ১৫ বছরে একজন নেতার অভাবই প্রধান সমস্যা। ’৮১-এর ৩০ মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেছিলেন। তাঁকে আপসহীন নেত্রীর ইমেজ দেওয়া হয়েছিল। বিএনপিকে তিনি দুবার ক্ষমতায় এনেছিলেন। কিন্তু একটি আদর্শ ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ছাড়া যে একজন নেতা টিকতে পারেন না তার বড় প্রমাণ বেগম জিয়া। বেগম জিয়া জনগণকে শুধুই আওয়ামী লীগের জুজুর ভয় দেখিয়েছেন। তাঁর না ছিল কোনো রূপকল্প, না ছিল সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা। পুত্রস্নেহে তিনি অন্ধ ছিলেন। আমার বিবেচনায় বেগম জিয়া এক দুর্ভাগা রাজনীতিবিদ। তাঁর অর্ধেক রাজনৈতিক জীবন গেছে স্বামীর পাপ ঢাকতে। বাকি অর্ধেক গেল পুত্রের অপকর্ম ঠেকাতে। জিয়ার অবৈধ ক্ষমতা দখল, ’৭৫-এর খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া, কূটনৈতিক চাকরি দেওয়া, ক্ষমতায় থাকার জন্য ১৩ হাজার সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা- এ রকম হাজারো অপকর্মের দায় নিয়েই বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে হয়েছে। আবার পুত্রের লুটপাট, হাওয়া ভবনের দুর্বৃত্তায়নের জন্য তাঁকে অপমানজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। পুত্রের লোভের জন্যই তিনি দুটি দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত ১৫ বছরে একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে, তা হলো তারেক জিয়া রাজনীতিতে অনুপযুক্ত এবং অগ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। এ রকম অর্থলোভী, ধূর্ত ও অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তি আর যা-ই হোন জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। বিএনপি নেতারা দরজা বন্ধ করে এসব আলোচনা করেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিংবা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের মতো নেতারা প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলেন। নানা বাস্তবতায় বেগম জিয়ার পক্ষে আর ’৮২-এর মতো বিএনপির হাল ধরা সম্ভব নয়। তাই বিএনপিকে একজন নেতা খুঁজে বের করতে হবে সবার আগে। যে নেতা বিএনপিকে নবজন্ম দেবেন। যে নেতা অকপটে অতীতের ভুল স্বীকার করবেন। বিএনপির পুরনো ধ্যান-ধারণা, বস্তাপচা ১৯ দফা বাতিল করবেন। এমন একজন নেতা যিনি ব্যক্তিজীবনে সৎ হবেন। আর এজন্য বিএনপিকে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে শিখতেই হবে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখতে হবে। শেখ হাসিনা যেমন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দলকে পরিবর্তন করেছেন। তেমনি একজন নেতা দরকার বিএনপিতে, যিনি বিএনপিকে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি পক্ষপাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিস্থাপন করবেন। শেখ হাসিনা যেমন রাজনীতির একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছেন- ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা’। তেমনি বিএনপির এমন এক নেতা দরকার যার একটি লক্ষ্য থাকবে। শেখ হাসিনা যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি সব ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট একটি কর্মসূচি তৈরি করেছেন। বিএনপির জন্য তেমন একটা কর্মসূচি তৈরির নেতা লাগবে। শেখ হাসিনা যেমন দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখানো শিখিয়েছেন। বিএনপিতে তেমন একজন স্বপ্নচারী মানুষ লাগবে। শেখ হাসিনা যেমন ব্যক্তিজীবনে সৎ, নির্লোভ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তেমনি বিএনপিতে একজন সৎ মানুষ লাগবে। সে রকম একজন নেতার পথ ধরেই বিএনপিকে নবযাত্রার বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতা যেমন হাজার বছরে একবার আসেন এ পৃথিবীতে। তেমনি এ ব-দ্বীপে শেখ হাসিনার মতো নেতাও আসেন শতবর্ষে একবার। সে নেতার অপেক্ষায় বিএনপিকে থাকতেই হবে। সে রকম একজন নেতা ছাড়া ষড়যন্ত্র করা যাবে হয়তো। আওয়ামী লীগকে চাপেও ফেলা যাবে। কিন্তু জাতির কোনো কল্যাণ করা যাবে না।

 

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

ইমেইল :[email protected]

সর্বশেষ খবর