শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মিলাদ প্রথা নিয়ে প্রচলিত বিতর্ক

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

অনেকে প্রচলিত মিলাদ প্রথা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। বহুল প্রচলিত মিলাদ প্রথা একটি বিতর্কিত মাসালা, যা বিশ্বনবীর তিরোধানের ৬০০ বছর পর থেকে আজ পর্যন্ত বিতর্কিতই রয়ে গেছে। ৩০০ হিজরি সনে এর সূত্রপাত। তার আগে এর কোনো হদিস পাওয়া যায় না। মনের চাহিদাই হচ্ছে এর মূল উৎস। এখানে দলিল-প্রমাণের কেউ ধার ধারবে না। আমরা যতই দলিল-প্রমাণ পেশ করি না কেন যারা মিলাদি তারা মিলাদ ত্যাগে সম্মত হবে না। আর যারা মিলাদি নয় তারা মিলাদ করতে সম্মত হবে না। অনেকে মিলাদকে সুন্নত বরং ফরজতুল্য ইবাদত মনে করে। আবার অনেকেই মিলাদ প্রথাকে গর্হিত কাজ ও বিদাত মনে করে। আমি বলি, মিলাদ একই সঙ্গে সুন্নত ও বিদাত। এর ব্যাখ্যা হলো- ক. মজলিস করে কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, বিশ্বনবীর জীবনী আলোচনা এবং তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা ইবাদত -বিশেষ। এর নাম যদি মিলাদ হয় তাহলে এর উপকারিতা ও বৈধতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

খ. মজলিস করে মনগড়া দরুদ পাঠ, নবীকে হাজির-নাজির মনে করে বাধ্যতামূলক কিয়াম, যারা কিয়াম না করে তাদের বেআদব ও নবীর দুশমন মনে করে ভর্ৎসনা করা- এর নাম যদি মিলাদ হয় তাহলে অবশ্যই বিদাত ও গর্হিত কাজ। কারণ এর কোনো ভিত্তি শরিয়তে নেই। তার ওপর এতে বিশ্বনবীর সাহাবি, চার ইমাম ও বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) আল্লাহর নবীর দুশমন আখ্যায়িত হবেন। কারণ তাঁরা তো এরূপ মিলাদ করেননি; বরং বিশ্বনবীর বিশেষ খাদেম হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমরা বিশ্বনবীকে সবচেয়ে অধিক মহব্বত ও শ্রদ্ধা করা সত্ত্বেও তাঁকে দেখে এজন্য কিয়াম করতাম না যে কিয়াম করলে তিনি অত্যন্ত নারাজ হতেন এবং বলতেন তোমরা আজমিদের (অনারবদের) মতো আমাকে দেখে কিয়াম কোর না।’ তিরমিজি।

মানুষ যাকে ভালোবাসে তাকে সর্বদা স্মরণ করে। চরম ভালোবাসা সৃষ্টি হলে অন্তরে-দেমাগে, শিরায়-উপশিরায় তার ভালোবাসা প্রবিষ্ট ও অঙ্কিত হয়ে যায়। উঠতে-বসতে ও চলাফেরায় সব বিষয়ে তার ভালোবাসার চিত্র ফুটে ওঠে। নিদ্রাবস্থায় তাকেই স্বপ্নে দেখে। জাগ্রত অবস্থাযও কেবল তার চিত্রই চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে। যারা রসুলের প্রকৃত আশিক ও প্রেমিক, যাদের দিল-দেমাগ, রক্ত-মাংস, শিরা-উপশিরা সব স্থানে রসুলের ভালোবাসা প্রবিষ্ট হয়ে তাদের উন্মাদ করে ফেলেছে, যাদের অন্তরে ভালোবাসার আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে তারা একটু চোখ বন্ধ করে মুরাকাবায় বসলেই তাদের সামনে রসুলের মুবারক চিত্র ফুটে ওঠে। তাদের পরিচয় হচ্ছে সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণই তাদের একমাত্র আরাধনা। তাদের লেবাস-পোশাক, সুরত-চেহারা ও কথাবার্তা ও আমল-আখলাকে নবীর সুন্নত ফুটে ওঠে। তাদের জীবন, ইজ্জত-সম্মান, সন্তান-সন্ততি ও সহায়সম্পদ সবকিছুর তুলনায় নবীর ছোট একটি সুন্নতের মূল্য অনেক বেশি। বিশ্বনবী তাঁর এরূপ প্রেমিকদের পরিচয় দিয়েই ইরশাদ করেছেন, ‘যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসে সে আমাকে ভালোবাসে এবং তারা অবশ্যই আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।’ যদি মিলাদের সময় অথবা অন্য কোনো সময় এরূপ লোকের সামনে নবীর পবিত্র চিত্র ভেসে ওঠে তাহলে তারা নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনমূলক কিয়াম করতে পারে, এর বিধান শরিয়তে আছে। আমাদের পূর্বসূরি বুজুর্গদের মধ্যে যারা কিয়াম করতেন বা যেসব বুজুর্গানে দীন বর্তমানে কিয়াম করেন  তাঁরা এরূপ অবস্থাতেই করতেন এবং করে থাকেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর