রবিবার, ১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

যেভাবে এসেছে ঈদুল ফিতর

এম এ মান্নান

যেভাবে এসেছে ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব।

বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ যেহেতু মুসলমান তাই বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের এটি সবচেয়ে বড় উৎসব। ঈদ রোজাদারদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার। ঈদ শব্দটি আরবি ‘আওদুন’ মূলধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ ফিরে আসা, বারবার আসা। ধর্মীয় পরিভাষায় ঈদ বলতে আমরা উৎসব, পর্ব, আনন্দ ইত্যাদি বুঝি। ফিতর অর্থ ফাটল, ভাঙন, ভাঙা ইত্যাদি। এক কথায় ঈদুল ফিতর হলো, রোজা ভাঙার উৎসব। সুদীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রিয় বান্দারা এদিন রোজা ভাঙে তাই এ দিনটির নাম ঈদুল ফিতর। রসুলুল্লাহ (সা.) এদিন সম্পর্কে বলেছেন, ‘এ দিনটিতে তোমরা রোজা রেখ না। এ দিন তোমাদের জন্য আনন্দ-উৎসবের, খাওয়া আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ-উৎসব করার, আল্লাহকে স্মরণ করার।’ মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান।

রসুল (সা.) আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলেন। মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসী পারসিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বসন্তের পূর্ণিমারাতে ‘মেহেরজান’ আর হেমন্তের পূর্ণিমারাতে ‘নওরোজ’ নামক উৎসবে এমনসব আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠত; যা কোনো সুস্থ বিবেকবান লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তিনি মদিনাবাসীকে ডেকে বললেন, ‘আল্লাহ এ দুটি দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন তোমাদের আনন্দ উৎসব পালনের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে এ দুটি ঈদ বা উৎসব পালন করবে।’ আবু দাউদ, নাসায়ি।

দ্বিতীয় হিজরির পয়লা শাওয়ালকে রসুল (সা.) ঈদের দিন ঘোষণা করেন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর ইচ্ছা অনুযায়ী মুসলমানদের জন্য ঈদের আনন্দ বরাদ্দ করেন। তার পর থেকেই চলে আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসব। রমজানের রোজাও একই বছরে চালু হয়। ওই বছর রোজা শেষ হওয়ার ১২ দিন আগে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর রোজার শেষে পয়লা শাওয়াল অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ঈদুল ফিতরের উৎসব। আল্লাহ আকবার ধ্বনি দিতে দিতে মদিনার মুসলমানরা খোলা ঈদের ময়দানে গিয়ে হাজির হয়। রসুল (সা.) উপস্থিতি সব মুসলমানকে সঙ্গে নিয়ে খোলা ময়দানে দুই রাকাত ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। তিনি তাদের উদ্দেশে খুতবা পড়ে ঈদের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। ঈদ কেবল আনন্দ বা পানাহারের উৎসব নয়, ঈদের উৎসব পালনের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব, তাকওয়ার বন্ধন রয়েছে তা উপলব্ধি করতে হবে। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার অনল দহনে দগ্ধ হওয়ার পর মুমিন বান্দার পক্ষে মহান আল্লাহর দরবারে পরিশুদ্ধভাবে উপস্থিত হওয়ার দিন হলো ঈদুল ফিতর।

ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেছেন, ‘রসুল (সা.) দুই ঈদের দিন (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায়) রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।’ বুখারি। ঈদের নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রসুল (সা.) ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।’ ইমাম মালিক।

ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কিছু আহার করার কথা হাদিসে আছে। বিশেষ করে হাদিসে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না।’ বুখারি। ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতি ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়া মুস্তাহাব।’ আল মুগনি। ঈদের আরেকটি করণীয়, এ দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা। হজরত জাবির (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.)-এর একটি সুন্দর জোব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে ও জুমার দিনে পরিধান করতেন।’ বায়হাকি।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় ঈদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘শরিয়তে সাদাকাতুল ফিতর প্রদানকে ওয়াজিব করা হয়েছে; যা একদিকে ত্রুটিযুক্ত রোজাকে পবিত্র করে, অন্যদিকে এর দ্বারা অসহায়-নিঃস্বদের প্রয়োজন কিছুটা হলেও পূরণ হয়।’

ঈদুল ফিতরের আনন্দ যাতে আমাদের বিনয়ী, নম্র ও হৃদয়বান করে তোলে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে। ঈদের দিনের শুরু থেকেই গরিব-দুঃখীসহ পরের সুখে সুখী হওয়ার তাগিদ অন্তরে অনুভব করতে হবে। ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তিতে আমাদের হৃদয়মন ভরে যাবে আল্লাহ এমনটিই দেখতে চান।  স্রষ্টার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন সৃষ্টিকে ভালোবেসে স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে পারি। নিছক এক দিনের হইহুল্লোড় ও মাতামাতিতেই ঈদের সার্থকতা নেই বরং প্রতিটি ব্যাপারে পরিচ্ছন্ন মনমানস ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার মধ্যে রয়েছে ঈদ উৎসবের আসল সার্থকতা।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর