মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

আসুন আমরা বন্যার্ত ভাইদের পাশে দাঁড়াই

এম এ মান্নান

আসুন আমরা বন্যার্ত ভাইদের পাশে দাঁড়াই

পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আবির্ভাব হয় আল্লাহর হুকুমে। অনেক সময় মানুষের ভুলে বা পাপে আসে দুর্যোগ। আল্লাহ দুনিয়ার সবকিছু তৈরি করেছেন মানুষের খেদমতে। নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত গাছপালা- সবকিছু মানুষের কল্যাণেই আল্লাহ নিয়োগ করেছেন। আমাদের কর্তব্য এসব প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা করা। কিন্তু আমরা সে দায়িত্ব প্রায়ই অগ্রাহ্য করি। কান্ডজ্ঞানহীনভাবে আমরা যেখানে-সেখানে বাঁধ তৈরি করি। হাওর-বাঁওড়ে রাস্তা তৈরি করে পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করি। নদ-নদী, খাল-বিল ভরাট করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করি। পরিণতিতে বন্যার ছোবলে আক্রান্ত হই আমরা। আমাদের বসতবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায় বর্ষার পানি বা পাহাড়ি ঢল।

সাধারণত নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। নদীর পানিতে যে পলি থাকে তা ফসলি জমির উর্বরতা বাড়ায়। এবারের বন্যা কিন্তু নিছক স্বাভাবিক বন্যা নয়। পানিবিজ্ঞানীরা স্পষ্ট বলেছেন, হাওর এলাকায় অপরিকল্পিত রাস্তা ও বাঁধের পরিণতি এ বন্যা। ভাটির অঞ্চল বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল আসে। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত হলে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে যায়। এ বছর আগাম বন্যায় হাওরে ফসলহানির পর দ্বিতীয় দফা বন্যার আঘাত হেনেছে সিলেট বিভাগে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষায় ফেলেছেন। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫-১৫৬)

মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন তার অসহায়ত্ব প্রকাশিত হয়। সে আল্লাহর শরণাপন্ন হয়। মহান আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন তার জন্য সহজ হয়ে যায়। এ অবস্থায়ও আল্লাহর দিকে নিজেকে শরণাপন্ন না করা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। এটা শুধু ইহলৌকিক জীবনের জন্য নয়, আখেরাতের জন্যও বড় বিপদ। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, এরপর যখন তাদের কাছে আমার (পক্ষ থেকে) সংকট এলো, তখন তারা কেন অনুনয়-বিনয় করল না? বরং তাদের অন্তর আরও কঠিন হয়ে গেল এবং তারা যা করছিল। তাদের কাছে শয়তান তা শোভনীয় করে দিল।’ (সুরা আনআম, আয়াত ৪৩) বিপদাপদে আমাদের কর্তব্য বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। মানুষের ওপর আসা বিপদ যেমন আল্লাহর হুকুম তেমনি বিপদে বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানোও আল্লাহর হুকুম। কাজেই দুর্যোগের সময় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বড় উপায়। রসুল (সা.)-এর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ওই পর্যন্ত বান্দার সাহায্যে থাকেন যে পর্যন্ত বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ কাজেই বিপদাপদে যে অন্যের পাশে দাঁড়ায় সে আল্লাহর কৃপাধন্য হয়ে যায়। বন্যাদুর্গতরা আমাদেরই ভাইবোন। তাদের বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। দুনিয়ায় ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত মানুষকে অন্ন ও বস্ত্র দানের প্রতিদান আখেরাতের জীবনে দেওয়ার জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ায় মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’ (আবু দাউদ)

অসহায় মানুষকে অন্নদানে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে রসুল (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘একটি রুটি দানের কারণে তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে পাঠানো হবে- ১. আদেশদাতা ২. রন্ধনকর্তা ৩. সেই পরিবেশনকর্তা যে রুটি নিয়ে গরিবকে দিয়ে পরিবেশন করেছে।’ (হাকিম, তাবারানি) ভয়াবহ বন্যায় অনেক অবস্থাপন্ন মানুষও সর্বস্ব হারিয়েছেন। যাদের ঘরে চালের অভাব ছিল না। ছিল না খাবারের অভাব তাদের অনেকেই ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পাচ্ছেন। কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না। সেসব অসহায় মানুষের কাছে আমাদের ছুটে যেতে হবে। গোপনে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে সাহায্য।

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। এর দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। জেনে রাখ, তিনি তোমাদের কাজকর্মের ব্যাপারে অধিক খবর রাখেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭১) সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যারা বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না তাদের জন্য আল্লাহর দয়া সংকুচিত হয়ে আসবে। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ (তিরমিজি) বন্যার্তদের জন্য সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করলে মহান আল্লাহ তাদের জান্নাতে রিজিক দিয়ে সম্মানিত করবেন। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী পানীয় পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)

লেখক : সভাপতি, আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

সর্বশেষ খবর