জুলফিকার আলী ভুট্টো কি সত্যিই মধুবালার প্রেমে পড়েছিলেন? অথবা মধুবালা ভুট্টোর? এ নিয়ে মুম্বাইয়ের সিনেমাপাড়ায় অনেক গুজব ছিল। আলোচনাও কম হয়নি। তখন একটা টানাপোড়েনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলেন মধুবালা। জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময় পার করছিলেন। একদিকে পুরো পরিবারের দায়িত্ব, অন্যদিকে দিলীপ কুমারের অমর প্রেম। বিপত্তি বাধে দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিয়েতে মধুবালার বাবার আপত্তি। বাবা দেখলেন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে তাঁর সংসারটা চলবে না। তাই নিলেন বাস্তব জীবনের ভিলেনের ভূমিকা। ক্ষুব্ধ ব্যথিত দিলীপ কুমার দূরে সরতে থাকলেন মধুবালার কাছ থেকে। ভুল বোঝাবুঝি আরও তীব্র হয়। মধুবালার বাবার অতিলোভের সাক্ষী হয়েছিলেন দিলীপ কুমার। এ বিষয়টি কোনোভাবে মানতে পারছিলেন না মধুবালা। শুরু হয় মান-অভিমান। ছবির শুটিংয়ের জন্য মুখ দেখাদেখি হলেও কথা হয় না। তীব্র অভিমানবেলায় মধুবালার সঙ্গে একদিন দেখা হয় জুলফিকার আলী ভুটোর। মুম্বাইয়ে আইনজীবী ছিলেন ভুট্টো। রাজনীতির সঙ্গে ছিল সম্পর্ক। এ উপমহাদেশে বড় আইনজীবীদের তখন তীর্থ ছিল মুম্বাই, কলকাতা, লাহোর, দিল্লি। ১৯৪৭ সালের দেশবিভক্তিতে অনেকের অনেক কিছু তছনছ হয়ে যায়। মুম্বাই ছাড়তে হয়েছিল লারকানার জমিদারকে। বিপত্তি তৈরি হয় মুম্বাইয়ে থাকা তাঁর সম্পদ নিয়ে। আইন পেশায় সাফল্যে পৌঁছতে ভুট্টো মুম্বাই এসেছিলেন। কিনেছেন অনেক সম্পদ। ভারত ভাগে ভুট্টো ফিরে যান পশ্চিম পাকিস্তানে। সম্পদ উদ্ধারে আসতে থাকেন মুম্বাইয়ে। তত দিনে ভারত সরকার এ ব্যাপারে কঠোরতা শুরু করে দিয়েছে। বাধাবিপত্তি শুরু করেছে মুসলিম নেতাদের সম্পদ বিক্রিতে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল সম্পদ রেখেই। তাঁর বিরুদ্ধে অকারণে ঠুকে দেওয়া হয়েছিল করবিষয়ক মামলা। মন খারাপ করেছিলেন কলকাতার এই সাবেক মেয়র। এক কাপড়ে চলে যান লাহোর। সোহরাওয়ার্দীর মতো সব কিছুর হাল ছাড়লেন না ভুট্টো। তিনি লড়তে থাকেন। আর লড়তে গিয়েই মুম্বাই সফর বাড়িয়ে দেন। ভিসার জটিলতা তখনো শুরু হয়নি। সে সুযোগ নিয়েছিলেন ভুট্টো। সম্পদ বেচতে কোর্ট-কাছারিতে ছিল ভুট্টোর পদচারণ। সারা দিন সম্পদ উদ্ধারে ব্যস্ততা শেষ করে ভুট্টো সন্ধ্যায় যেতেন বিভিন্ন আড্ডায়। সে সময় এক অনুষ্ঠানে পরিচয় মধুবালার সঙ্গে। লারকানার জমিদারকে শুটিং স্পটে আমন্ত্রণ জানান মধুবালা। আলাপ-পরিচয় বাড়তে থাকে দুজনের। দিলীপ কুমারের ওপর অভিমানী মধুবালা তখন ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলতেন। শুধু ভুট্টো নন, আরও অনেকের সঙ্গে লোক দেখানো সম্পর্কের ভাব নিতেন। এ কারণে ভুট্টোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব কতটা গভীর ছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সিনেমাপাড়ায় মিথ আছে- সম্পর্কের গভীরতা ছিল অনেক দূর। পরবর্তী জীবনে ভুট্টো এ নিয়ে মুখ খোলেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি মধুবালাও। তাই অনেক কিছুর জবাব মেলেনি। অনেক কিছুর সমাধান বাকি রেখেই ভুট্টো মুম্বাই ছাড়েন। এরপর এ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি।
দিলীপ কুমারও তত দিনে খুঁজে নিয়েছেন বাস্তব জীবনের আরেক নায়িকা সায়রা বানুকে। তীব্র অভিমানী মধুবালা বিয়ে করেন বিখ্যাত শিল্পী কিশোর কুমারকে। সেই সংসার জীবন ছিল বড় কঠিন। বিয়ের পরও শান্তি মেলেনি। কমেনি ভিতরের কষ্ট। মধুবালার ভাগ্যটাই ছিল খারাপ। জন্ম থেকে ছিলেন হৃদরোগী। হৃৎপিন্ডে ছোট্ট একটা সমস্যা ছিল। ছোটবেলায় চিকিৎসা করলে হয়তো সেরে উঠতেন এ অপরূপা। বাবা আতাউল্লাহর সেই সামর্থ্য ছিল না। ১৯৩৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লির এক দরিদ্র পরিবারে মধুবালার জন্ম। বাবা আতাউল্লাহ কাজ করতেন পেশোয়ারে এক শু কোম্পানিতে। চাকরি হারিয়ে জীবিকার সন্ধানে আসেন মুম্বাই। মধুবালা নয় বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে নায়িকা হিসেবে প্রথম ছবি করেন রাজকাপুরের বিপরীতে। ছবির নাম ‘নীলকমল’। মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১৯৪৯ সালে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন ‘মহল’ ছবির মধ্য দিয়ে। আর দিলীপ কুমারের সঙ্গে যাত্রা ১৯৫১ সালে ‘তারানা’ ছবির মাধ্যমে। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মধুবালা মারা যান ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে। ভারতবর্ষ কাঁপানো মধুবালাকে কেন এত অল্প সময়ে চলে যেতে হবে? তাহলে কি ভিতরের অজানা কষ্টগুলো তাঁর হৃদরোগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল? প্রশ্ন অনেক। জবাব মেলানো কঠিন। জীবনের অনেক দুঃখ-কষ্ট আড়াল করেই এমন বিখ্যাত মানুষদের চলে যেতে হয়। ভুলে যেতে হয় অনেক কিছু। চলচ্চিত্রের মধুবালাও রক্তে-মাংসের মানুষ ছিলেন। তাঁরও দুঃখ ছিল, কষ্ট ছিল। তার পরও সব কিছু আড়াল করতে হতো। কারণ তিনি ছিলেন কোটি ভক্তের একজন মধুবালা। শতবর্ষে একজন মধুবালার জন্ম হয় একবারই। বারবার নয়।
সুচিত্রা সেনকে নিয়েও একই কথা বলা যায়। ভারতবর্ষ কাঁপিয়ে সুচিত্রাও সব কিছু থেকে একদিন লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। নিজের অজানা কষ্টের কথা যাননি বলে। মধুবালার মতো সুচিত্রা দ্রুত বিদায় না নিলেও মানুষের কাছ থেকে সরে গিয়েছিলেন। এ দুই নায়িকার কোথাও একটা মিল আছে। যা কখনো সামনে আসেনি। দুজনের চলনবলনের একটা মিল ছিল যার যার স্বকীয়তায়।দিলীপ কুমারকে হারানোর পর ভিতরে ভিতরে তীব্র অভিমান বুকে নিয়ে ভেঙে পড়েন মধুবালা। কিন্তু কোনো কিছুর প্রকাশ ঘটাতেন না। ভান করতেন সুখে আছেন। মেরিলিন মনরোর চেয়েও এই সুন্দরী চেষ্টা করতেন চলনবলন-কথনে সর্বোচ্চ সৌন্দর্যের আবির সামনে রাখতে। শত কষ্টের ভিতরেও মধুবালা হেঁটে গেলেই তৈরি হতো ‘মুঘল-ই-আজম’। সম্রাট আকবর মেনে নেননি সিংহাসনের উত্তরাধিকার পুত্র জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আনারকলির প্রেম। আনারকলির রূপের বর্ণনা মুঘল ইতিহাসে দেওয়া আছে। চলচ্চিত্রে মধুবালাকে ছাড়া আর কে হতে পারেন আনারকলি? দিলীপ কুমারের সঙ্গে মুঘল-ই-আজমের প্রেমের অভিনয় করতে হয়েছিল বাস্তব জীবনের ভাঙাগড়ার মুহূর্তে। সেটে এসে দুজন কথা বলতেন না। অভিনয়ের সময় নিজেকে ঢেলে দিয়েছিলেন মধুবালা। দর্শককে বুঝতে দেননি কোনো অভিমান নিয়ে এ ছবি করেছেন। সবাই এভাবে পারে না। মধুবালা পেরেছিলেন। কতটা পেরেছিলেন সে প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। বাইরে তিনি দিলীপ কুমারের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন বাবাকে নিয়ে। ভিতরে একাকী অভিমান আর কষ্ট পুষতে থাকেন। ক্ষয়ে যেতে থাকেন দ্রুত। দিলীপ কুমারের সামনে একজনই ভিলেন ছিলেন মধুবালার বাবা। আতাউল্লা উপার্জন করা মেয়ে বিয়ে দেবেন না। কঠিন বাস্তবতা, সিনেমাপাড়ায় অনেক কানাঘুষা। একদিন আতাউল্লাহর মুখোমুখি হন দিলীপ কুমার। না, কোনো ভালো খবর নিয়ে বের হলেন না। বরং দূরত্ব আরও বাড়ল। তৈরি হলো ব্যক্তিজীবনের নাটকীয় বিদায় অধ্যায়। ক্ষুব্ধ দিলীপ কুমারকে অপেক্ষা করতে বললেন মধুবালা। দিলীপ কুমার পাল্টা প্রস্তাব দেন মধুবালাকে। বলেন, তোমার বাবাকে ছেড়ে চিরতরে চলে আস। আমাদের জীবন আমরাই গড়ব। পরিবার ছাড়তে রাজি ছিলেন না মধুবালা। এর মধ্যে দুজনের একটি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। ছবির নাম ‘নয়া দৌড়’। শুটিং হওয়ার কথা ভোপালে। কিন্তু দিলীপ কুমারের সঙ্গে মধুবালাকে ভোপালে পাঠাতে নারাজ মধুবালার বাবা। বিপত্তি বাড়ল ছবির জন্য প্রদত্ত আগাম টাকা নিয়ে। পরিচালক বি আর চোপড়া এ টাকা ফেরত চান মধুবালার বাবার কাছে। অর্থকষ্টে থাকা আতাউল্লাহ টাকা খরচ করে ফেলেছেন। তাই টাকা ফেরত দেননি। পরিচালক মামলা করেন মধুবালার বাবার বিরুদ্ধে। আদালতে সাক্ষী মানেন দিলীপ কুমারকে। বলেন, তাঁর সামনেই আগাম টাকা নিয়েছেন মধুবালার বাবা। দিলীপ কুমার আদালতে গেলেন। সাক্ষী দিলেন মধুবালার বাবার বিরুদ্ধে। বললেন সত্যটা। দিলীপ কুমারের এ আচরণ মানতে পারলেন না মধুবালা। ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হন। সেই ক্ষোভ ঝগড়া ও অভিমানে রূপ নেয়। এক কঠিন সময় পার করছিলেন তিনি। চেষ্টা করছিলেন শান্তি খুঁজতে। কিন্তু কোথায় পাবেন শান্তির দেখা। এমন সময় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ। দিলীপ কুমারের ভিতরে হিংসা তৈরি করতে মধুবালা মুঘল-ই-আজমের সেটে আমন্ত্রণ জানান ভুট্টোকে। সুদর্শন ভুট্টোকে দেখেও ঈর্ষার অনল তৈরি হয়নি দিলীপ কুমারের। জোড়া লাগেনি আর তাঁদের ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক। এর মাঝে দিলীপ কুমার জড়িয়ে পড়েন সায়রা বানুর সঙ্গে। আর মধুবালা বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে। দুজন ঘুরতে গেলেন লন্ডনে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ভর্তি হলেন হাসপাতালে। জানলেন কঠিন হৃদরোগ নিয়ে জন্মগতভাবে তিনি বেড়ে উঠেছেন। হাতে আর সময় বেশি নেই। বুকভরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মধুবালা। মুম্বাই ফিরে এলেন। কাজ বন্ধ করলেন না। সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন।
মধুবালার মতোই অপরূপ ছিলেন আরেক বিখ্যাত নায়িকা পাবনার সুচিত্রা সেন। তাঁর শ্বশুর দীননাথ সেনের নামে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় এখনো একটি সড়কের নাম রয়েছে। মধুবালার মতোই নিজের ভিতরের কষ্ট হজম করতে পারতেন সুচিত্রা সেন। বাস্তব জীবনের দুঃখকষ্ট ছবির ফ্রেমে ভাসিয়ে দিতে পারতেন। মিশে যেতেন চরিত্রের সঙ্গে। পথে হলো দেরি, সাগরিকা, দীপ জ্বেলে যাই, হারানো সুরের মতো শতাধিক ছবি সুচিত্রাকে কিংবদন্তি করেছে। দেবদাস ছবিটি ছিল একটু আলাদা। হিন্দি ও বাংলা দুই ভাষায় নির্মিত দেবদাসের পার্বতী মিশে গিয়েছিলেন শরৎ কাহিনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। হিন্দি, বাংলাসহ পাঁচটি ভাষায় ১৭টি সিনেমা তৈরি হয়েছে দেবদাস নামে। ১৯২৮ সালে নরেন মিত্র শুরু করেন। এরপর নির্মিত হয় ১৯৩৫ সালে। ১৯৫৫ সালে বিমল রায় পরিচালিত সুচিত্রা আর দিলীপ কুমার অভিনীত দেবদাস অমরত্ব পায়। একই পরিচালক এ ছবিটি বাংলায়ও করেছেন সুচিত্রা ও উত্তমকে দিয়ে। এ ছবিতে জীবনের সব আবেগ ও দুঃখ ঢেলে দিয়েছিলেন সুচিত্রা। এখনো চোখে ভাসে সেই দৃশ্য। সকাল সকাল ঘুম ভাঙল জমিদারবাড়ির গিন্নির। আগের রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। মনে হচ্ছিল কে যেন ডাকছে পারু... পারু... পারু। জমিদারবাড়ির বাইরের গেটে মানুষের ভিড়। পার্বতী কাজের লোকদের কাছে জানতে চাইলেন, কী হয়েছে? কারা ভিড় করছে ওখানে? জবাবে জানলেন তাঁর বাপের বাড়ির এলাকার দেবদাস ভোররাতে এসে মারা গেছেন সদর দরজার বাইরে। এখন দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দিশাহারা হয়ে ছুটতে থাকলেন পার্বতী। জমিদারবাড়ির ঘিন্নির আঁচল লুটিয়ে পড়ছে। সেদিকে খেয়াল নেই। সব হারানো মানুষের মতোই ছুটছেন। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে সংগীত বাজছে, ‘জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো, সমাধি পরে মোর জ্বেলে দিও... হৃদয় চিরে যদি দেখাতে পারিতাম... বুঝিতে তুমি ওগো কী যে তারি দাম... আমি যে অসহায় আমার অপরাধ পারো তো ক্ষমা করে নিও... যেদিন চিরতরে হারায়ে যাব আমি...।’ গানটি গেয়েছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। আর লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। দিশাহারার মতো সুচিত্রা ছুটছেন। আর একটু পর পৌঁছবেন গেটের বাইরে লাশের কাছে। ওপর থেকে চিৎকার এলো- সদরের গেট বন্ধ কর। গিন্নিকে বাইরে বের হতে দেওয়া যাবে না। বন্ধ হলো সদরের দরজা। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন পার্বতী। এমন অভিনয় সুচিত্রা ছাড়া আর কে করতে পারবেন?
বাস্তব জীবনে মধুবালার মতো সুচিত্রাও নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। ভিতরের রক্তক্ষরণ প্রকাশ করতে পারেননি। জীবন আর ছবি কখনো এক হয় না। জীবনের কাঠিন্য মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। উত্তমের মৃত্যুর পর অন্য দশজনের মতো সুচিত্রা সেন ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁর হাতে ছিল একগুচ্ছ ফুল। কালো গ্লাসের আড়ালে ঢেকে রেখেছেন নিজেকে। ভেজা চোখ দেখার সুযোগ ছিল না। ভিতরের কষ্ট ছিল আড়াল করা। উত্তমের কফিনে ফুল দিলেন। নীরবে দাঁড়িয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। বিষণœতা নিয়ে তাকালেন নীল আকাশের দিকে। তারপর কফিনের কাছ থেকে সরে এলেন। সাংবাদিকরা কথা বলার চেষ্টা করলেন। জানতে চাইলেন প্রতিক্রিয়া। আপনজনরা চলে গেলে কী প্রতিক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো যায়? সমাজ-সংসারে আমরা শুধু ঝলমলে চারপাশটা দেখি। হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াতে পারি। আড়ালের মানুষটিকে নিয়ে ভাবি না। বাস্তবতা অনুধাবন করি না। করার চেষ্টাও করি না। এ যুগে এই সময়ে সমাজ-সংসারে জটিলতার শেষ নেই। পাশের মানুষটির ক্ষতি দেখলে খুশি হই। গোপনে আনন্দ প্রকাশ করি। অথচ সব কিছু এমন ছিল না। মানুষের ভিতরে আবেগ ছিল। ভালোবাসা ছিল। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ছিল। এখন কোনো কিছুই নেই। ডিজিটাল দুনিয়ায় অনুভূতিগুলো হারিয়ে গেছে, স্মৃতিগুলো দিন দিন হয়ে উঠছে আলো-আঁধারির মতো ঝাপসা।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন