শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

খোশ আমদেদ বিশ্ব ইজতেমা

মুহম্মদ আশরাফ আলী

মানবকল্যাণের কার্যক্রম তাবলিগ। কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ তীরে আজ শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য কাজ করতে হলে, ভালো দিয়ে মন্দের মোকাবিলা করতে হলে বিনয়ী ও ধৈর্যশীল হতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের মর্যাদা বুঝতে হবে। মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। হৃদয়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসা পয়দা না হলে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করা সম্ভব নয়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার কোরো, রূঢ় আচরণ কোরো না, সুসংবাদ দাও, ভীতসন্ত্রস্ত কোরো না।’ (বুখারি, মুসলিম) আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে ডাকো হেকমত বা কৌশল-সহকারে ও উত্তম নসিহতের মাধ্যমে এবং বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়।’ (সুরা নাহল, আয়াত ১২৫)

তাবলিগ জামাত মুসলিম উম্মাহর একটি দাওয়াতি কাফেলা, নিঃস্বার্থ ও সুশৃঙ্খলভাবে যারা কোরআন ও সুন্নাহর বাণী নিয়ে দুনিয়ার দেশে দেশে অসংখ্য জনপদে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষকে সিরাতে মুস্তাকিমের পথে নিয়ে আসতে এ কাফেলার সদস্যরা নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি কার্যক্রমের এক মহাসম্মিলন। বিপথগামী মানুষকে আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে আনার জন্য দেওবন্দের নিবেদিতপ্রাণ মুরব্বি হজরত ইলিয়াস (রহ.) ভারতের মেওয়াতে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন। স্বল্পপরিসরে তিনি গুটিকয় সঙ্গী নিয়ে পথভোলা মানুষকে হেদায়েতের পথে আনার যে মিশন শুরু করেন তা মানুষের মধ্যে সাড়া জাগায়। ১৯৪১ সালে মেওয়াতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ইজতেমা। বাংলাদেশে এ দাওয়াতি কার্যক্রম ১৯৪৪ সালে সম্প্রসারিত হয়। মাত্র দুই বছর পর ১৯৪৬ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। এর দুই বছর পর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজি ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগার এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে তুরাগ তীরে টঙ্গীর ভবেরপাড়ে অনুষ্ঠিত হয়। তার পর থেকে এ পর্যন্ত তুরাগ পাড়ের ওই স্থানের ১৬০ একর জমিতে তাবলিগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা বা সম্মেলন হয়ে আসছে। তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ আল্লাহর পথে ফিরে আসছে। নামাজ-রোজাসহ ইবাদতে নিজেদের সমর্পণ করছে। ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষায় নিজেদের শিক্ষিত করে তুলছেন এ জামাতের সদস্যরা। সদাচরণ ও ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষের হƒদয় জয় করাকে তারা কর্তব্য বলে বেছে নিচ্ছেন। বিশ্ব ইজতেমায় আল্লাহপ্রেমিকরা ছুটে আসেন মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির আশায়। জাগতিক লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ওঠার মহৎ গুণ অর্জনের যে শিক্ষা তারা পান তাবলিগের দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে, তা হানাহানিমুক্ত একটি শান্তির সমাজ গড়ার ক্ষেত্রেও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। তাবলিগ জামাত মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের কল্যাণ নিশ্চিত করার সুমহান মিশন হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর