শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অবাধে বিদ্যুৎ চুরি

চোর-মহাচোরদের ধরুন

বিদ্যুৎ খাতে চুরি যেন ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ মুহূর্তে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৪ শতাংশের বেশি চুরি হয়। এ চুরি বন্ধ করা গেলে বিদ্যুতের দাম অন্তত ১৪ শতাংশ কম রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু তা দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, তাদের বেশির ভাগের সততার অভাবে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ চুরিকে হালাল করা হচ্ছে সিস্টেম লস এবং সঞ্চালন লাইনের ক্ষতি দেখিয়ে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, চুরির জন্য কাউকে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না বরং চুরির কারণে যে লোকসান হয় তা পুষিয়ে নিতে গ্রাহক পর্যায়ে হয়রানি করা হয়। ভুতুড়ে বিল ও ঘুষ-দুর্নীতিও চলে সমানে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বছর শেষে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে ঢাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা গঠিত হলেও বন্ধ হয়নি সিস্টেম লস। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রথমে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় গঠিত হয় ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অথরিটি-ডেসা। পরে অনিয়মের মুখে পড়ে বিলুপ্ত হয় ডেসা। গঠিত হয় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-ডেসকো এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ডিপিডিসি। বিদ্যুতের গ্রাহকদের অভিযোগ, দুটি বিতরণ কোম্পানি থেকে তারা আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না। পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। নতুন সংযোগ পেতে অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ যে দিতে হয় এটি ওপেন সিক্রেট। বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১০-১১ সালে বিদ্যুৎ খাতে সামগ্রিকভাবে বছরে গড় সিস্টেম লস ছিল ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি কমে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। তবে সঞ্চালন লাইনে ক্ষতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। রাস্তার পাশের দোকানপাটগুলোতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় তার বেশির ভাগই অবৈধ সংযোগের।  কয়েক লাখ ইজিবাইক এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা বিদ্যুৎ চুরিতে অবদান রাখছে। প্রায় প্রতিটি চুরির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের চোর-মহাচোরদের সম্পর্ক রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের লোকসান কমাতে মাসে মাসে মূল্য সমন্বয়ের নামে দাম বাড়ানোর বদলে আসল কারণেও হাত দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর