শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক

মো. আমিনুল ইসলাম

মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক

একজন মুসলমান অপর মুসলমানের জন্য আয়না স্বরূপ। কোনো মুসলমানের মধ্যে কোনো দোষত্রুটি থাকলে বা অন্যায় দেখা দিলে অপর মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তাকে সেটা দেখিয়ে দেওয়া ও পরিশুদ্ধ করা। এটা একজন মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। যাতে সে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দুঃখকষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া-আখিরাতে তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে।’ নোমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার সব মুমিন একটি ব্যক্তিসত্তার মতো। যখন তার চোখে ব্যথা শুরু হয় তখন তার সারা শরীরই ব্যথা অনুভব করে। আর যদি তার মাথাব্যথা হয় তাতে তার গোটা শরীরই বিচলিত হয়ে পড়ে’ (মিশকাত)। মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না’ (সুরা আল ইমরান-১০৩)। অর্থাৎ আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধর। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য কর, পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হইও না’ (সুরা আনফাল-৪৬)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক রাখো’ (সুরা আনফাল-০১)। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহর একটি নাম রহমান, যার অর্থ দয়ালু। আমরা যদি এক মুসলমান অন্য মুসলমানের প্রতি দয়ালু হই তাহলেই আল্লাহর রহমত বা দয়ার আশা করতে পারি এবং আশা করতে পারি আল্লাহর দয়া থেকে আমরা বঞ্চিত হব না।

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন একটি মর্যাদার কথা বলব যা নামাজ রোজা ও সাদাকা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, জি অবশ্যই বলুন। রসুল (সা.) জবাব দিলেন, ‘তোমরা পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক রাখো। পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করা হলো মু-নকারী’ (আল আদাবুল মুফরাদ ৩০৩, জামে তিরমিজি ২৫০৯)।

আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা একে অন্যের ভাই’ (সুরা হুজরাত ১০)। সুতরাং আপন ভাইয়ের সঙ্গে আমরা যে রূপ সম্পর্ক বজায় রাখি, তার প্রতি যত্নবান হই ঠিক তেমনি একজন মুমিন মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অনুরূপ আচরণ আমাদের করা উচিত ও কর্তব্য। আল্লাহ আরও বলেন, ‘মুমিন নর-নারী সবাই একে অন্যের বন্ধু। এরা মানুষদের ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সুরা তওবা-৭১)।

ইসলাম ধর্ম মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় ও বিকশিত করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করার মাধ্যমে এই ভ্রাতৃত্ববোধ হয় আরও গভীর ও সুদৃঢ়। এক কাতারে দাঁড়িয়ে সব ভেদাভেদ ভুলে তারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ঠিক একই শিক্ষা তৈরি হয় জুমার নামাজ, দুই ঈদের নামাজ ও হজের সময় আরাফাতের ময়দানে। ধনী গরিব সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক আল্লাহর সমীপে নিজেকে সমর্পিত করে। সামর্থ্যবানরা কোরবানির ঈদে কোরবানির গোশত বিলিয়ে দেয় গরিবদের মাঝে। আর ঈদুল ফিতরে গরিবদের মাঝে ঈদ জামাতের আগে বিতরণ করে ফিতরার অর্থ। এভাবেই পূর্ণ হয় ইমানি ভ্রাতৃত্বের দাবি।

হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা কর না, একে অন্যকে ধোঁকা দিও না, বিদ্বেষ পোষণ কর না, একজন আরেকজনের পিছে লেগে থেক না, একজনের বিক্রির সময় আরেকজন আগে বেড়ে বিক্রি করতে যেও না। বরং সবাই এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও, ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলমান, মুসলমানের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে পারে না। তাকে লাঞ্ছিত করতে পারে না। তাকওয়া তো এখানে। তিনি তিনবার তাঁর বুকের দিকে ইশারা করলেন। এরপর বললেন, একজন মানুষের অন্যায় হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় ও তাচ্ছিল্য করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ, সম্মান হারাম (মুসলিম)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্প্রতি বজায় রেখে জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

সর্বশেষ খবর