আল্লাহতায়ালা মানুষকে লিঙ্গভেদে তিনভাবে সৃষ্টি করেছেন। নর, নারী ও হিজড়া। হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। এক্ষেত্রে কারও যৌনত্রুটি বা প্রজনন অসুস্থতার কারণে যথাযথ চিকিৎসা ও অপারেশন করা ইসলামী শরিয়তে বৈধ আছে। তবে আধুনিক বিশ্ব ট্রান্সজেন্ডার নামে একটি অবৈধ সমকামী ফাঁদ বিস্তার করে যাচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার মানে লিঙ্গ পরিবর্তন করা। ১৯৬৫ সাল থেকে পশ্চিমা দেশগুলোতে আরম্ভ হয় ট্রান্সজেন্ডার নামক বিকৃত যৌন চিন্তা-চেতনা। ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজড়া এক নয়। হিজড়া হলো আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিগত একটি রূপ। ট্রান্সজেন্ডার হলো সৃষ্টিগত লিঙ্গ পরিবর্তনের নামে এক ধরনের বিকৃতি মাত্র। ওই বিকৃতি দুই স্তরে প্রকাশ পায়। প্রথম স্তর, ১৯৬৫ সাল নাগাদ এক ধরনের বিকৃত মানসিকতার সমকামীরা তাদের মনগড়া মতবাদের আলোকে ব্যক্ত করে, লিঙ্গ পরিচয়ের মাধ্যম শরীর নয়। মনই একজন মানুষের আসল লিঙ্গ পরিচয়। একজন পুরুষের যদি মনে হয় সে নারী, তাহলে সে নারী। তাই নারীর পোশাক ও আচার-আচরণ অবলম্বন করা এবং অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া তার জন্য স্বাভাবিক। একজন নারীর যদি মনে হয় সে পুরুষ, তাহলে সে পুরুষ। তাই পুরুষের পোশাক ও আচার-আচরণ অবলম্বন করা এবং অন্য নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া তার জন্য স্বাভাবিক। এ ধারণা থেকে তারা দ্বিতীয় স্তরে উপনীত হয়। তারা মনে করে তাদের মনের রূপকে চিকিৎসকের সাহায্যে রূপান্তর করা সম্ভব। তাই তারা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের মনের রূপকে বাস্তবে রূপান্তর করে। এরই নাম ট্রান্সজেন্ডার। ইসলামী শরিয়তে ওই ট্রান্সজেন্ডার অনেক কারণে হারাম ও নিষিদ্ধ। ১. আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি সাধন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিবর্তন করাকে মহান প্রভু শয়তানের কাজ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আল্লাহতায়ালা কোরআনে শয়তানকে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করার পর সে বলেছিল, ‘আমি তাদের পথভ্রষ্ট করবই এবং মিথ্যা আশ্বাস দেবই, আর পশুর কর্ণ ছিদ্র করার আদেশ দেব এবং তাদের আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত ও পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। (সুরা আন নিসা-১১৯)। ২. নারী-পুরুষ একে অপরের পোশাক পরিধান করা এবং একে অপরের আচার-আচরণ অনুসরণ করা অগণিত হাদিসে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা ওইসব নারীর ওপর অভিশাপ করেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং ওইসব পুরুষের অভিশাপ করেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে।’ (সহিহ বুখারি)। ৩. আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তনের সাধ্য কারও নেই। মনে মনে কেউ নিজেকে বিপরীত লিঙ্গ ধারণা করলেই তার লিঙ্গ পরিবর্তনের কল্পনা কোনো সুস্থ মানুষ করতে পারে না। বরং তার মানসিক চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন এবং জরুরি। অনুরূপভাবে অপারেশন এবং হরমোন ওষুধ প্রয়োগে যৌনাঙ্গ ও দেহে কিছু বিকৃতি লক্ষ্য করা গেলেও বাস্তবে লিঙ্গ পরিবর্তন হয় না। এজন্য কোনো ট্রান্সজেন্ডার নারী মা হওয়ার ক্ষমতা রাখে না। ক্ষমতা নেই কোনো ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ থেকে শুক্রাণু উৎপাদন বা প্রজননব্যবস্থা করারও। অতএব, একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী যে আসলে পুরুষ, তাকে পুরুষের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া মানেই সমকামিতার নামান্তর। আর তাকে নারীদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া মানেই পর্দা লঙ্ঘন ও ব্যভিচারের পথ উন্মোচিত করা। এভাবে একজন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ যে আসলে একজন নারী, অপর নারীর সঙ্গে মিলিত হওয়া মানেই সমকামিতা যা কোনোভাবেই অনুমোদনযোগ্য নয়।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা