জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আশা প্রকাশ করেছেন, সংস্কার প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে, যা দেশে বাস্তব পরিবর্তন আনবে। গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর জনমনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে, তার প্রতিফলন ঘটবে। জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধান উপদেষ্টা অবহিত করেন, স্বৈরাচার পতনের পর দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুরাচার, দুর্নীতি-দুঃশাসনে ভেঙে পড়া সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনই প্রাথমিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার কর্মযজ্ঞ শুরু করতে গঠিত হয়েছে ছয়টি সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশের বিষয়ে ইতোমধ্যে ১০টি রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ছয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে একমত হলে তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন। এর মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনসংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কারের রূপরেখা তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’-এ একমত হয় ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে নির্বাচন হবে আগামী বছরের জুনে। যখনই হোক সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার। মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের পর অর্ধশতাব্দী পার হলেও দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় হয়নি। বারবার হোঁচট খেয়েছে গণতন্ত্র। বৈষম্যহীন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ আজও অসম্পূর্ণ। জনগণের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। ঘুষ-লুটপাট, লাখ লাখ কোটি টাকা চুরি ও পাচারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে এখন সময় ঘুরে দাঁড়ানোর। সে কাজটাই করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের প্রচেষ্টা সফল হোক। ক্ষমতার মসনদে শুধু দলবদল নয়, সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কিত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে দেশ প্রকৃত গণতন্ত্রে উত্তীর্ণ হোক। তারই অপেক্ষা।