বর্জ্য বলতে মানুষের কার্যকলাপে সৃষ্ট অপ্রয়োজনীয় পদার্থকে বোঝায়। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায় আবর্জনা সংগ্রহ, সেসবের পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনর্ব্যবহার ও নিষ্কাশন। এটি একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া।
বর্জ্যব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা করা হয়। কেননা এতে পরিবেশ দূষণকারী বিভিন্ন উপাদান থাকে। বর্জ্য পদার্থ কঠিন যেমন হতে পারে, তেমনি তরল ও বায়বীয় হতে পারে। এসব আবর্জনা বা বর্জ্য পদার্থকে নানাভাবে শেণিবিভাগ করা যেতে পারে। সাধারণত একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন পৌর এলাকার বর্জ্য, বাণিজ্যিক এলাকার বর্জ্য ও শিল্প এলাকার বর্জ্য। আবার পচনের ওপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। পচনশীল ও অপচনশীল। আবার পোড়ানোর ওপর ভিত্তি করে এটি আবার দুই প্রকার। দহনযোগ্য ও অদহনযোগ্য।
বাংলাদেশে কঠিন বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ নামের একটি আইন রয়েছে। আইন অনুযায়ী কঠিন বর্জ্যব্যবস্থাপনা অর্থ জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত বিবেচনায় উত্তমনীতি অনুসারে কঠিন বর্জ্য উৎসের হ্রাসকরণ, পৃথকীকরণ, সংগ্রহ, পুনরুদ্ধার, পুনর্ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণ, স্থানান্তর, পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিত্যজন সংক্রান্ত কার্যাবলি।
এ আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাসরত বর্জ্য সৃষ্টিকারী এবং ব্যবহারকারীর দায়িত্ব হলো- স্বীয় কর্মস্থল বা আবাসস্থলে সৃষ্ট সব বর্জ্য স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিত্যজন করা। বর্জ্যরে কোনো অংশ উন্মুক্ত না রাখা, যেখান থেকে পশুপাখি বর্জ্য ছড়াতে পারে, দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে, বাতাসে মিশতে পারে, পতিত হতে পারে বা বর্জ্য থেকে তরল পদার্থ নির্গত হতে পারে। অবকাঠামো নির্মাণ ও ভাঙন থেকে সৃষ্ট বর্জ্য স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ বরাবর হস্তান্তর করার আগে এমনভাবে রাখতে হবে যেন ধুলাবালু না বাতাসে মিশতে পারে বা বৃষ্টির সঙ্গে ড্রেনে না মিশে। একক বা সম্মিলিতভাবে সৃষ্ট বর্জ্য নিজ আঙিনার বাইরে রাস্তা, খোলা জায়গা, ড্রেন বা পানিতে নিক্ষেপ না করা এবং উন্মুক্ত জায়গায় না পোড়ানো। পার্ক, স্টেশন, টার্মিনাল বা জনসমাগমস্থলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলা। বিধি ৭ এ এসব বর্জ্য সৃষ্টিকারী ও ব্যবহারকারীর দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। বিধি ৮ এ বলা হয়েছে- দোকান, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার ও অন্যান্য আবাসিক বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা জমা করে নির্ধারিত জায়গায় ফেলা নিশ্চিত করতে হবে। বর্জ্য রাস্তায় বা ড্রেনে নিক্ষেপ বা পোড়ানো যাবে না। বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে জৈব পচনশীল ব্যাগ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসব বিধিমালা না মানলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে রাজধানীতে খোলা জায়গায় আবর্জনার স্তূপ বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে শহরের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে, বাড়ছে পরিবশেদূষণও। হাটবাজার, সড়কের পাশে, অলিগলিতে, নানা আনাচে-কানাচে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আবার সেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে মারাত্মক বায়ুদূষণের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণ, বিভিন্ন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাতাসে বালুর পরিমাণ বাড়ছে। ধুলাবালুতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। উন্মুক্ত স্থানে রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, মিল-কারখানার তৈলাক্ত পদার্থ এসব এসে মিশে বর্জ্যব্যবস্থাপনা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদন মতে, এ ধরনের বর্জ্য অব্যবস্থাপনার চিত্র শুধু ঢাকা শহরে নয়, ঢাকার বাইরের নগর-মহানগরগুলোতেও এমন।
সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারির আওতায় দেশের সব বিভাগীয় সদর ও পৌর এলাকায় বর্জ্যব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করা হবে। যত দ্রুত এসবের আধুনিকায়ন হবে, তত দেশ ও মানুষের মঙ্গল হবে আশা করা যায়।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক