আল্লাহর হুকুম হিসেবে আমরা যেসব ইবাদত করি, তা সাধারণত তিন প্রকার। (১) শারীরিক ইবাদত। যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি। এখানে আর্থিক কোনো বিষয় নেই। শুধু শারীরিক পরিশ্রম রয়েছে। (২) আর্থিক ইবাদত। যেমন জাকাত দেওয়া। এখানে শারীরিক কোনো পরিশ্রম নেই। শুধু অর্থ ব্যয় রয়েছে। (৩) শারীরিক ও আর্থিক উভয়টি। অর্থাৎ এমন কিছু ইবাদত রয়েছে, যাতে আর্থিক ইবাদতের সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রমও জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হজ। এতে একদিকে যেমন অর্থ ব্যয় রয়েছে তেমনি রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম। হজের বিধানগুলো সুন্নত তরিকা অনুযায়ী আদায় করা এতটাই কঠিন ও কষ্টসাধ্য, যা শারীরিক ও আর্থিকভাবে দুর্বল মুসলমানের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর্থিক ও শারীরিক উভয় ধরনের ইবাদত হজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকায় অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় এটি অধিক গুরুত্ব এবং মর্যাদাপূর্ণ। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভেরও এটি একটি কার্যকর মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা হজের আবশ্যকতা সম্পর্কে ঘোষণা করেন- ‘মানুষের পক্ষে আল্লাহর উদ্দেশে হজ করা ফরজ, যার পথের সামর্থ্য আছে (সুরা আলে ইমরান-৯৭)।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজে যাওয়া-আসার যাবতীয় ব্যয় বহন করতে সামর্থ্য রাখেন এবং শারীরিকভাবেও হজের আহকামগুলো পালন করতে সক্ষম, তার ওপর হজ ফরজ। তবে তিনি ফিরে আসা পর্যন্ত তার পরিবারের ব্যয়ভারের ব্যবস্থা করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, তিনি হজে গেলে তার স্ত্রী ও নাবালগ সন্তানরা খাওয়া-পরায় কষ্ট করবে। পুরুষের মতো নারীদের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান তাদের ওপরও হজ ফরজ। তবে নারীদের জন্য হজে যাওয়ার আরেকটি অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। তা হলো মাহরাম পুরুষের সঙ্গে যেতে হবে। মাহরাম পুরুষ হলো নারীদের বিশ্বস্ত অভিভাবক। যেমন- নিজের স্বামী, বাবা, ছেলে, আপন ভাই ইত্যাদি। ইসলামের এই ফরজ হুকুম পালন করার জন্য যারা রওনা করেন তারা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহর প্রতিনিধি। এ বিষয়ে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর প্রতিনিধি হলো তিন ব্যক্তি। হাজি, গাজি ও ওমরাহকারী।’ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে বায়হাকি ও নাসায়ি শরিফে। এমনকি তারা যদি এই কাজ করার সংকল্প করে ঘর থেকে বের হওয়ার পর ইন্তেকাল করেন তবু সেই সওয়াব পেয়ে যাবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ, ওমরাহ অথবা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, অতঃপর পথিমধ্যে মারা গিয়েছেন, তার জন্য হাজি, গাজি অথবা ওমরাহকারীর সওয়াব লেখা হবে (বায়হাকি)।’ হজ পালনকারী যদি হজ সম্পন্ন করে ফিরে আসেন তাহলে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করেছে এবং তাতে অশ্লীল কোনো কথা বলেনি বা অশ্লীল কোনো কাজ করেনি সে হজ থেকে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে ফিরবে। সেদিনের মতো, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল (বুখারি ও মুসলিম)।’
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা