সংযত থাকার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান আমলে নিচ্ছে না ইসরায়েল ও ইরান। পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে দুই পক্ষেরই। চার দিনে সাড়ে তিন শ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তার ২২০টি ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরায়েল। দুই দেশেই গুরুত্বপূর্ণ ভবন-স্থাপনা ধ্বংসের দাবি তেল আবিব ও তেহরানের। ইরানি গোয়েন্দা শাখার প্রধানসহ দুই দেশের আড়াই শতাধিক মানুষ এর মধ্যে নিহত হয়েছে। তাদের ৯০ শতাংশই নারী-শিশুসহ বেসামরিক। বিশ্ব গণমাধ্যমে ভয়াবহ হামলা এবং ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র প্রকাশ ও প্রচারিত হচ্ছে। দুই দেশই পরস্পরকে ঘায়েলে সাফল্যের দাবি করছে। সোমবার খবর পড়ার সময় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হামলার দৃশ্য সরাসরি প্রত্যক্ষ করে বিশ্বের দর্শক। নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ার পরও পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে দুই দেশ। তাদের অনমনীয় আচরণের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আভাস দেখছেন সমরবিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর বর্তমানে নিরাপত্তাসংক্রান্ত সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতিতে রয়েছে তেহরান। দেশটিতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সদস্যদের উপস্থিতি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের মিত্র বলে বিবেচিত রাশিয়া জানিয়েছে, ক্রেমলিন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে চায়। তবে মূলত ইরান এখনো একাই আগ্রাসি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পাশে কোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক মিত্র নেই। বিশ্বমান নীতি-গবেষণা বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে, ইরানে হামলা ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত বিপর্যয়। ইরানের বিরুদ্ধে ১৩ জুন ইসরায়েল নতুন যুদ্ধ শুরুর মধ্য দিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সূচনা করেছে। এ যুদ্ধে কেউই লাভবান হবে না। কিন্তু বহু মানুষের জীবনে দুঃসহ দুর্ভোগ নেমে আসবে। বলা যায়, নেতানিয়াহুর এ হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিলম্বিত করা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনার পথ রুদ্ধ করার মতো স্বল্পমেয়াদি কিছু সাফল্য এনে দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত বিপর্যয়ই ডেকে আনবে। যেমনটা অতীতেও একাধিকবার হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ছোট-বড় সব যুদ্ধই বিশ্বশান্তি বিনষ্ট করে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে বিশ্বব্যাপী। যা কারও কাম্য নয়। সেজন্যই ইরান-ইসরায়েল চলতি সংঘাত অবিলম্বে বন্ধে দ্রুত বিশ্বনেতাদের জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। কানাডায় জি-৭ নেতাদের চলতি বৈঠকেই তাঁরা শান্তির অনুকূলে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তেমন হলে তা মানবতার কল্যাণে শুভবুদ্ধির এক স্মরণীয় মাইলফলক হয়ে থাকবে।