দেশ এখন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে যে তিনটি প্রধান কর্তব্য নির্ধারণ করেছিল- তার একটি নির্বাচন। সংস্কার ও বিচারের পাশাপাশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণমানুষের রায় পাওয়া জনপ্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর বোধকরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রে উত্তরণের এটাই পথ ও প্রক্রিয়া। নির্বাচিত সরকার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রেখে- দেশের উন্নয়ন, জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করবে। অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এ লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করছে আটঘাট বেঁধে নামার সব প্রস্তুতি। কিন্তু এই বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ, দৃশ্যমান-অদৃশ্য নানা ষড়যন্ত্র, কূটকৌশল, বিতর্ক-বিরোধিতা লেগেই আছে। নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ১৪ মাস পেরোলেও কিছু মৌলিক বিষয়েও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। দেশিবিদেশি নানা মহলের অপৎপরতায় স্বচ্ছতার পানি ঘোলা হচ্ছে। শঙ্কা তৈরি হচ্ছে নির্বাচন বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হওয়ার। এর সঙ্গে আরও একটা উপসর্গ যুক্ত হয়েছে ‘ভুয়া তথ্য’। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘দেশ একটা শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে রয়েছে।
তবে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু এখন ভুয়া তথ্য। এটা পরিকল্পিতভাবে, বিপুল অর্থ ব্যয়ে ছড়ানো হয় এবং মুহূর্তেই উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যখন প্রকৃত সত্য প্রকাশ পায়, ততক্ষণে মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলে।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করলে তিনি এ বিপজ্জনক প্রবণতার কথা বলেন। দলটির প্রধান ক্রিস্টোফার ফাসনার একমত হন। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের সংশ্লিষ্ট সব মহলকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া ছবি তৈরি ও জনমত প্রভাবিত করার অপচেষ্টা ঠেকাতে হবে। ইসি এআইয়ের অপব্যবহার রোধে সমন্বিত সেল করবে। এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে সব পক্ষকে।
ভুয়া তথ্য যেন বিভ্রান্তির পাকে ফেলে, নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির গণতন্ত্রে উত্তরণ বিঘিত্ন বা বিলম্বিত করতে না পারে।