জাতীয় অর্থনীতির জন্য জ্বালানিস্বল্পতা একটা বড় ঝুঁকি। অথচ কয়েক বছর ধরেই দেশে গ্যাসসংকট দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন কমছে এর উৎপাদন। উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করেও প্রয়োজন পূরণ করা যাচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়াতে ডিসেম্বরের মধ্যে উন্নয়ন, সংস্কার ও অনুসন্ধান মিলে অর্ধশত কূপের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যে শেষ হয়েছে মাত্র ২০টির কাজ। ফলাফল বিপর্যয়কর। গ্যাসসংকট চরমে পৌঁছেছে। রাজধানীর বহু এলাকায় দিনে চুলাই জ্বলে না। উৎপাদনলক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না ছোটবড় শিল্পগুলো। বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকছে সার কারখানা। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও অলস বসে আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে হওয়ায় চাপে পড়ছে অর্থনীতি। দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার কোটি ঘনফুট। সরবরাহ হচ্ছে তিন হাজার কোটি ঘনফুটেরও কম। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদন থেকে আসছে প্রায় পৌনে দুই কোটি ঘনফুট। আমদানি করা এলএনজি থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে হাজার কোটি ঘনফুট। দৈনিক ঘাটতি সহস্রাধিক কোটি ঘনফুট গ্যাসের। প্রতি বছর শীত মৌসুমে গ্যাসসংকট বাড়ে। এবার শীত শুরু না হতেই যে অবস্থা তাতে নগরবাসী, শিল্পোদ্যোক্তাসহ গ্যাসনির্ভর সব ক্ষেত্রেই উদ্বেগ ঘনীভূত। গ্যাসসংকটে শিল্পে নতুন সংযোগ বন্ধ। মুখথুবড়ে পড়ে আছে নতুন বিনিয়োগ, শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। গ্যাস নিতে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে সব যানবাহনকে। দুর্ভোগ বাড়ছে নগরবাসীর। সময়ক্ষেপণে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন পরিবহনমালিকরা। ওয়াকিবহাল মহলের পর্যবেক্ষণ- এক যুগে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়া হয়নি। ঘাটতি মেটাতে ২০১৮ থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে তখন ৫০টি কূপ বাস্তবায়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। এগুলোর কিছু কাজ শেষ হয়েছে, কিছু চলছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের মধ্যে সবগুলোর কাজ শেষ হবে। আসলে সংকট কাটাতে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। খনন শুরুর পর অনুসন্ধান এবং কূপের উন্নয়নকাজ গতিশীল করা জরুরি। জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। নাগরিকের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, শিল্পোৎপাদন অব্যাহত রাখা, নতুন শিল্প স্থাপন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির এটা পূর্বশর্ত।