মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিজয় নিয়ে অনুভূতি অনেক সাংঘাতিক

বিজয় নিয়ে অনুভূতি অনেক সাংঘাতিক

বাংলাদেশের নাট্য-আন্দোলনের পথিকৃত বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং জড়িত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। সেই সময়টাও তাঁর নাট্যচর্চায় প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। মহান বিজয় দিবস নিয়ে এই নাট্যজনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপনে- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন?

জি, ভালো আছি।

বিজয় দিবসে কোন নাটকের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন?

বিটিভিতে আশির দশকের একটি নাটকের রিমেক হচ্ছে। মূল গল্প একই। সেটিতে অভিনয় করছি। এটি আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত এক ঘণ্টার নাটক ‘আয়নায় বন্ধুর মুখ’। বিটিভিতে প্রচারিত এ নাটকটি সেই সময় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তখন নাটকে রাবেয়া চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফেরদৌসী মজুমদার আর তার স্বামীর চরিত্রে আবদুল্লাহ আল মামুন ছিলেন। এই নাটকটি পরে মঞ্চনাটক হিসেবে আত্মপ্রকাশও করেছিল। এবার নাটকে রাবেয়া চরিত্রে আশনা হাবিব ভাবনা ও স্বামীর চরিত্রে ইমন অভিনয় করছে।

 

নাটকটির মূল উপজীব্য কী?

এতে যুদ্ধের পরের সময়ের বিষয় উঠে এসেছে। আয়নায় বন্ধুর মুখের উপজীব্য হচ্ছে পথ হারানো তারুণ্য আর ঘরের বাইরে বাঙালি মেয়েদের সীমাবদ্ধতা।

 

বিজয় দিবসে বিজয় নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?

বিজয় নিয়ে অনুভূতি অনেক সাংঘাতিক। যেহেতু এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার কাছে এর গুরুত্ব অনেক। অনেক আনন্দের ও গৌরবের। তবে অনেক পরিতাপের বিষয় হচ্ছে-এত সাধের বিজয় অর্জিত হলেও অনেক কিছু হওয়া উচিত হয়নি। স্বাধীনতার পরে অনেক মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার উত্থান হয়েছে, সেনা শাসন হয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে-যা কখনো কাম্য ছিল না।

 

আপনি তো তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতেন...

সেটা ১৯৬৭ সালের কথা। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতাম। যার বিষয়বস্তু ছিল মূলত পারিবারিক। সে সময় কিছু কমেডি নাটকও লিখেছি। তবে তখন তেমন করে নাট্যভাবনা শুরু হয়নি।

 

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন...

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই এবং জড়িত হই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। সে সময় কলকাতায় নাটক দেখেছি, যা আমার নাট্যজীবন বিকাশের পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এই অনুপ্রেরণা থেকেই ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আরণ্যক নাট্যদল গঠন করি।

 

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে ‘আরণ্যক’-এর যাত্রা শুরু হয়...

আমাদের তো একটা আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছিল যে দেশ স্বাধীন হবে। কারণ দেশ স্বাধীনের আগে আমাদের ওপর এত বাধা-কানুন ছিল যে, আমরা ঠিকমতো নাটক প্র্যাকটিস করতে পারতাম না, মঞ্চায়ণ করতে পারতাম না। ফলে স্বাধীন দেশে আমরা স্বাধীনভাবে নাট্যচর্চা শুরু করতে চাইলাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা খুব দ্রুত সংগঠিত হয়ে ’৭২-এর ফেব্রুয়ারি মাসেই ‘আরণ্যক নাট্যদল’ গঠন করলাম। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ আমরা ‘কবর’ নাটকটি মঞ্চায়ণ করে নাট্যযাত্রা শুরু করলাম। সে সময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন আলী যাকের, সুভাষ দত্ত, ড. এনামুল হকসহ আরও অনেকে।

 

এখনকার মঞ্চনাটকে স্বাধীনতার চেতনা কতটুকু উপস্থাপিত হচ্ছে বলে মনে করেন?

অনেকই তো হচ্ছে। অন্যান্য মাধ্যমে যতটা না হচ্ছে, আমি তো মনে করি স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে শুরু করে সব কিছুই থিয়েটারে উপস্থাপিত হচ্ছে আরও অনেক বেশি গভীরভাবে।

 

বাণিজ্যিক কারণে মঞ্চনাটক কিছুটা কী পিছিয়ে পড়ছে না?

হুমম... পিছিয়ে তো পড়ছেই। আমরা সরকারকে বিভিন্ন সময় বলেছি, মঞ্চনাটক কর্মীদের একটি  নির্দিষ্ট বেতন বরাদ্দ করার জন্য, সেটা তো তারা করছেন না।

 

মঞ্চনাটকের বর্তমান সংকটগুলো কী বলে মনে হয়?

আমাদের হল নেই, হলের স্বল্পতা একটা বিরাট সংকট। আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নেই। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতীত আমাদের দেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও মঞ্চনাটক হয় না।

 

দেশে টেলিভিশন চ্যানেল অনেক। এ কারণে টেলিভিশন নাটকে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে?

হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই পড়ছে। মঞ্চ এবং টেলিভিশন দুই নাটকেই প্রভাব পড়ছে।

সর্বশেষ খবর