শিরোনাম
শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

মঞ্চে বাতি জ্বলবে কবে

মঞ্চে বাতি জ্বলবে কবে

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থিয়েটার কার্যক্রম ও প্রদর্শনী। তবে সরকারি নতুন নির্দেশনা না এলেও স্বাস্থ্যবিধির শর্তারোপ মেনেই আজ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘লালজমিন’ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছেন মোমেনা চৌধুরী নিজেই। তাহলে কি অচিরেই এক এক করে থিয়েটার দলের পদচারণায় সব মঞ্চ জমে উঠবে? নাকি আরও বেশ সময় লাগবে? এসব বিষয়ে বিভিন্ন গুণীজনের মতামত নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

দীর্ঘদিন মঞ্চনাটক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর আজ শূন্যন রেপার্টরি প্রযোজিত ও মোমেনা চৌধুরী অভিনীত একক নাটক ‘লালজমিন’ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে খুলছে মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তন। এদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ‘লালজমিন’র ২৪৪তম মঞ্চায়ন হবে। নাটকটি লিখেছেন মান্নান হীরা ও নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী।

জানা যায়, নাটক প্রদর্শনীর উদ্যোগটি নিয়েছেন মোমেনা চৌধুরী নিজেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটি হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সরকার ধীরে ধীরে সব খুলে দিচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে শর্তারোপ করছে। আমরা সেটি মেনেই মঞ্চায়ন করছি। আমি মনে করি, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নয়। আমাদের আরও বহুদিন করোনা নিয়ে বাঁচতে হবে। তাই নিউ নরমাল জীবনে অভ্যস্ত হতে হবে।

এখন অফিস-আদালত, হাট-বাজার সবই চলছে; তাহলে থিয়েটার হবে না কেন? আমি নিজেও টেলিভিশনের কয়েকটি নাটকের শুটিং করলাম। সে কারণেই এই উদ্যোগটি নিয়েছি।’

জানা যায়, মহিলা সমিতি মিলনায়তন পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি আগত দর্শকদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে তারপর হলে প্রবেশ করানো হবে। এছাড়া মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনেই পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানা যায়।

তবে কি লালজমিনের মতো অন্যান্য দলও তাদের মঞ্চ প্রযোজনা প্রদর্শনীতে আগ্রহী? করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশে নাট্য প্রদর্শনী বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। এদিকে মহিলা সমিতি মিলনায়তন নাটক প্রদর্শনীর জন্য খুলে দিলেও বন্ধ রয়েছে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনসমূ হ। প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের নির্দেশক অনন্ত হীরা এ সময় হল খুলে দেওয়ার পক্ষে ১৩ আগস্ট ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। যেখানে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ অন্যান্য মঞ্চ খুলে দেওয়া নিয়ে তিনটি প্রস্তাবও দেন। শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া, বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে হল ভাড়া মওকুফ করা এবং প্রথম তিন মাস শুধু শুক্র, শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে পরীক্ষামূলকভাবে মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে অনন্ত হীরা মতামত দেন। তার মতো অনেকেই একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনসহ সব হল খুলে দেওয়ার পক্ষে। নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ হল খুলে দেওয়ার পক্ষে কথা বলে জানান, ‘আমি তো যে কোনো সময়ই প্রস্তুত। নাটক প্রদর্শনীর জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছি। রিহার্সেল রুম খুলে দিয়েছি। এখানেই কিন্তু লালজমিনের রিহার্সেল হচ্ছে নিয়মিত। সব হল খুলে দিক, তবে সব হল ফ্যাসিলিটিস যেন থাকে। শিল্পকলা মিলনায়তনের দুটো জিনিসের তো বাজে অবস্থা-সাউন্ড ও লাইট। যেগুলো ঠিক করার তেমন উদ্যোগ নেই। এগুলো ঠিক করে শিগগিরই হল খুলে দিক। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটক প্রদর্শনী করতে আগ্রহী।’ এদিকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট নাট্যজন লাকী ইনাম বলেন, “নাগরিক নাট্যাঙ্গনের চলতি প্রযোজনা ‘গহর বাদশা বানেছা পরী’র সদস্য প্রায় ৬০ জন। অন্যদিকে ‘আকাশে ফুইটেছে ফুল’-এর সদস্য সংখ্যাও অনেক। এত সদস্য আর এই কোরিওগ্রাফি নিয়ে এখন করা সম্ভব হবে না। আমাদের টিম বড়, তাই নাটক প্রদর্শনীতে দেরি হবে একটু। তবে সবাই এ সময় ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে নিয়মিত মিটিং চালিয়ে যাচ্ছি। সাবধানতা তো অবলম্বন করতেই হবে। দায়িত্ব নিতে হবে মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও দলকেই।” এদিকে নাট্যকার, নির্দেশক ও বাতিঘর নাট্যদল প্রধান মুক্তনীল বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, “এই দুর্যোগে সবার মানসিক অবস্থা তেমন ভালো নেই। এ অবস্থায় নাটক প্রদর্শনী এখনই সমর্থন করছি না। আমাদের দুটি প্রযোজনা-‘র‌্যাডক্লিফ লাইন’ ও ‘হিমুর কল্পিত ডায়েরী’ কম সদস্য নিয়ে হলেও স্ক্রিপ্ট সমসাময়িক করতে একটু সময় নিচ্ছি। নতুন সময়ের সঙ্গে কীভাবে মার্চ করানো যায় সেটা চিন্তা করছি এখন। তবে সব সরকারি শর্ত মনে হল খুলে দিলে আমরা নাটক প্রদর্শনীর জন্য আবেদন করব।” হল খোলার ব্যাপারে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘নাট্যশালায় নাটক হবে এটাই কামনা। তবে দর্শক হোক কিংবা নাট্যকর্মী-সবাইকে শিল্পকলা একাডেমির ভিতরে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এ সবকিছু নিয়ে হল খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা মিটিং করেছি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’ প্রখ্যাত নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত নাটক প্রদর্শনীর তেমন কোনো চিন্তা নেই দেশ নাটকের। এ মাস দেখব। আর সরকারি নির্দেশনা এলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে নাটক প্রদর্শনী করতে পারি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ে যদি মহড়াকক্ষও চালু করা যায়, তাহলে কাজটা শুরু হবে। না হলে সবকিছু স্থবির হয়ে যাবে।’ নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘শো শুরু করছি, তবে প্রাচ্যনাট রিহার্সেল রুমে।’ বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মহাসচিব কামাল বায়েজীদ বলেন, ‘আমরা অফিশিয়ালি শিল্পকলা একাডেমিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খোলার একটি চিঠি দিয়েছি। প্রত্যাশা করছি সেপ্টেম্বর থেকে শিল্পকলা একাডেমি খুলে দেওয়া হবে। দীর্ঘ এই পাঁচ মাস হল বন্ধ থাকায় নাটক দেখায় একটা অনভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে করোনার ভয়ে দর্শকও কম আসার আশঙ্কা আছে। সে কারণে পুরো সেপ্টেম্বর মাস ফেডারেশনের উদ্যোগে নাট্যশালা ও মহিলা সমিতিতে নাটকের দলগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে হল ভাড়ায় নাটক প্রদর্শনীর সুযোগ করে দেওয়া হবে। ফেডারেশনের বাইরে ও ভিতরে সব দলই এখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে স্বল্প অভিনেতা ও ছোট প্রযোজনাকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান করা হয়েছে।’ জানা যায়, ৩১ তারিখের পর হল খুলে দেওয়া নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে শিল্পকলাসহ সবাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর