রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

৫০ বছরের সংগীতাঙ্গনের চাওয়া-পাওয়া

৫০ বছরের সংগীতাঙ্গনের চাওয়া-পাওয়া

মহান মুক্তিযুদ্ধে, অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ওই সময় সৃষ্টি হওয়া এক একটি গান ছিল লাখ-কোটি মানুষের প্রাণশক্তি। যুদ্ধের মাঠে ওই গানগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্য সব মাধ্যমের মতো সংগীতাঙ্গনও বিকশিত হয়েছে। কিন্তু চাওয়া-পাওয়া কতটুকু পূরণ হয়েছে?  সংগীতাঙ্গনের বেশ কিছু গুণী মানুষের কথা তুলে ধরেছেন- আলী আফতাব

ফেরদৌসী রহমান

আমরা যারা বলা যায় একসঙ্গে কাজ শুরু করেছিলাম তাদের অনেকেই আজ নেই। সে কারণে মন খারাপই থাকে। আবার করোনার কারণে দীর্ঘদিন যাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি সেসব প্রিয়মুখও চলে গেলেন। চারপাশটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে আসছে।

এই ৫০ বছরে কী করতে পেরেছি জানি না, তবে চেষ্টা করেছি  নতুন প্রজন্মের মধ্যে সুস্থধারার গান ছড়িয়ে দিতে। আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে, যারা এখন ভালো কাজ করছে। তাদের দেখলে অনেক ভালো লাগে। এখন আর আগের মতো শক্তি পায় না। তবে আমি নতুনদের বলতে চায়, অধ্যবসায়টা ছাড়া ভালো শিল্পী কখনো হওয়া যায় না।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

৫০ বছরের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক কিছুই আজ মনে পড়ে যায়। এই সময়টুকুর মধ্যে প্রায় ৪১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই গান লিখেছি। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় আমার লেখা গান হয়েছে তিনটি। এর মধ্যে ছয়বার পেয়েছি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০০২ সালে একুশে পদক আর এই বছর (২০২১) স্বাধীনতা পুরস্কার আমাকে দেওয়া হয়। আর কী চায় একটি মানুষের জীবনে। এখনো প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি নতুন কিছু গান লেখার জন্য। আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। অনেক তৃপ্তি নিয়েই চিরবিদায় নিতে চাই।

শেখ সাদী খান

স্বাধীন দেশের স্বপ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধে। শব্দসৈনিক হিসেবে দিন-রাত একাকার করে কাজ করে গেছি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সেই সময়ের সৃষ্টি ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘নোঙর তোলো তোলো’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’সহ অসংখ্য গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার। স্বাধীনতার পর আমরাও তাই প্রত্যাশার জাল বুনেছিলাম সংগীত ভুবনের বাঁকবদলের। সত্তর, আশি থেকে শুরু করে নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গানের ভুবনে এসেছিল নতুনত্বের জোয়ার। যুদ্ধ করেই আমরা বাংলা গানের প্রতিষ্ঠা করি।

আলম খান

আমাদের বাংলা গানের স্বর্ণালি সময় ছিল ৭০ থেকে ৮০ দশক। সেই সময় অনেক মনে রাখার মতো গান তৈরি হয়েছে। এরপর ’৯০-এর দিকে বাদ্যযন্ত্রে প্রভাব বাড়তে থাকে। তখন গানের কথা থেকে বাদ্যযন্ত্রের প্রভাব প্রাধান্য পেতে থাকে। আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে কথার সৌন্দর্যতা। তখন গানটা আর গান থাকছে না। তার মধ্যেও ভালো কিছু গান তৈরি হচ্ছে। আর আমি চাওয়া-পাওয়ার হিসাব করে কোনো দিন কাজ করিনি। 

সৈয়দ আবদুল হাদী

চাওয়া-পাওয়ার হিসাব করে আমি কোনো দিন গান গায়নি। আমি যদি বলি, আমার জীবনে অনেক চাওয়া ছিল। কিছুই পাওয়া হয়নি। তবে তা মিথ্যা বলা হবে। এই ৫০ বছরে অনেক গুণী মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রাণ থেকে গান গায়বার চেষ্টা করেছি। এখনো চেষ্টা করি ভালো কিছু গাইবার। আর পাওয়ার কথাটা বলতে গেলে চলে আসে তৃপ্তির কথা। আমি মনে করি, কোনো শিল্পীই তৃপ্ত হয় না। কারণ, তৃপ্ত হয়ে গেলে তো সবই শেষ হয়ে গেল। বরং উল্টো করেই বলি, আমার তেমন অতৃপ্তি নেই। আমার কাছে সবচেয়ে বড় হলো মানুষের ভালোবাসা।

সুজেয় শ্যাম

এই ৫০ বছরের সংগীতাঙ্গনে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে মনে করতে ইচ্ছা করে না, কষ্ট হয়। একাত্তরে যুদ্ধ করে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার কথা এখন তেমন কেউ মনে রাখে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে কিন্তু স্বাধীনতা তো সবার জন্য। আমরা মুখে বলি দেশকে ভালোবাসি কিন্তু কাজের বেলায় তার বিপরীত। আমরা সব সময় কাজ করেছি দেশের জন্য, সংস্কৃতির জন্য। এখন মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমাদরে এই সৃষ্টিকর্ম কাদের ওপর রেখে যাব। তারা কি পারবে আমাদের এই সৃষ্টি ধরে রাখতে।

খুরশীদ আলম

৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গানের জগতের সঙ্গে আছি। সত্যি কথা বলতে জীবন থেকে অনেক বছর কেটে গেল। পেছনে ফিরে তাকালে কত কথাই তো মনে পড়ে। এত লম্বা একটা জার্নি, মনে তো পড়বেই। বিশেষ করে আমার এই বয়সটাই আসলে পেছনের কথাগুলো বেশি মনে করিয়ে দেয়।

দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে চেষ্টা করেছি শ্রোতাদের ভালো কিছু গান উপহার দিতে। জীবনের এই সময়ে এসে এখনো মুখিয়ে থাকি ভালো একটি গান করতে। তবে এখন যখন দেখি চারদিকে প্রাণহীন গানের ছড়াছড়ি তখন খুব কষ্ট লাগে।

সর্বশেষ খবর