শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
আশার আলো দেখছেন প্রদর্শকরা

ঈদে একাধিক তারকাবহুল ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঈদে একাধিক তারকাবহুল ছবি

আসন্ন ঈদুল আজহায় কি ছবি মুক্তি আর প্রদর্শনের খরা কাটবে? দর্শক কি সব নিরাশার দোলাচল কাটিয়ে আবার সিনেমা হলে ফিরবে? এমন হিসাবনিকাশ কষতে এখন ব্যস্ত প্রদর্শক-প্রযোজকরা। ঈদে ছবি মুক্তি  নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করছেন তাঁরা। এর যথেষ্ট কারণও আছে। এই ঈদে মুক্তি পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত বড় বাজেট আর সুপারস্টারদের বেশ কটি ছবি। এর মধ্যে যেসব ছবি মুক্তি পেতে পারে তার মধ্যে নাম শোনা যাচ্ছে শাকিব খান অভিনীত ‘অন্তরাত্মা’, ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’, এম এ জলিল অনন্তর ‘দিন : দ্য ডে’, আরিফিন শুভর ‘মিশন এক্সট্রিম’, বিদ্যা সিনহা মিমের ‘পরাণ’, পূজা চেরীর ‘জিন’, নুসরাত ফারিয়া, সিয়াম, রোশান, তাসকিন ও রিয়াজ অভিনীত মাল্টিস্টার কাস্টিংয়ের ছবি ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’সহ বেশ কটি ছবি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি চাই। আমাদের নির্মাতারা যদি ভালো ছবির অভাব পূরণ করে দিতে পারেন তাহলে বিদেশি ছবি আনার দরকার নেই। প্রযোজকরা বলছেন সিনেমা হলের মালিকরা যদি হলের পরিবেশ দর্শক উপযোগী করে সিনেমা হলে দর্শক ফেরাতে পারেন তাহলে আমরা আশায় বুক বেঁধে উন্নত বাজেটের মানসম্মত ছবি উপহার দিতে পারব। কারণ চলচ্চিত্র শিল্প হলেও এর সঙ্গে ব্যবসায়িক দিকটিও যুক্ত আছে। কেউ চাইবে না জেনেশুনে লোকসান গুনতে। প্রদর্শকদের কথায়, দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে লোকসানের ঘানি টানতে গিয়ে চলচ্চিত্রের ব্যবসা লাটে উঠেছে। এ কারণে কয়েক দশক ধরে চলচ্চিত্র আইসিইউতে রয়েছে। এমন দাবি বরাবরই করে আসছেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার মাসুদ পারভেজ। তাঁর এই দাবি যথার্থ। কারণ নব্বই দশকের শেষ ভাগে যখন আচমকা চলচ্চিত্রের ওপর অশ্লীলতা জেঁকে বসে তখন গুণী নির্মাতা ও শিল্পীরা মানসম্মান বাঁচাতে চলচ্চিত্র অঙ্গন ছাড়েন। তাঁদের স্থান মহাসমারোহে দখল করে নেয় নর্দমার কীট-পতঙ্গরা। তাদের উলঙ্গপনায় মানমর্যাদাসম্পন্ন দর্শকও সিনেমা হলবিমুখ হয়ে পড়েন। অশ্লীলতার সঙ্গে যুক্ত হয় পাইরেসি আর নকল। চলচ্চিত্রশিল্প হয়ে পড়ে অসহায়। নামিদামি প্রযোজনা সংস্থা আর সিনেমা হল বন্ধের দুঃখজনক অধ্যায় শুরু হয়। যা এখনো অব্যাহত। একসময় চলচ্চিত্রশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন নবাব-জমিদাররা, তা এসে পড়ে দুর্বৃত্তদের হাতে। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। ধস নেমেছে এই শিল্পে। এতে দেশি ছবির নাম শুনলে মানসম্পন্ন দর্শক নাক সিটকাতে শুরু করেন। এসব অবস্থা এখনো কমবেশি চলছে বলে দেশীয় চলচ্চিত্র আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও কিছু মানসম্মত নির্মাতা-শিল্পী মাঝেমধ্যে আশার আলো দেখালেও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে না। গত বছর এসব সমস্যার সঙ্গে বৈশ্বিক মহামারী করোনা যোগ হওয়ায় চলচ্চিত্র শিল্প বলতে গেলে চলে গেছে কোমায়। ১৮ মার্চ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৭ মাস করোনার কারণে সিনেমা হল ও চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ থাকে। এতে আটকা পড়ে যায় প্রচুর ছবি। গত বছরের ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুললেও বেশির ভাগ প্রযোজক ছবি মুক্তি দিতে রাজি হননি। তাঁদের কথায় করোনার ভয়ে সিনেমা হলে দর্শক কতটা আসবে তাতে সন্দেহ থেকেই যায়। তার ওপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হলের অর্ধেক আসন খালি রাখতে গিয়ে চলচ্চিত্রে লগ্নিকৃত অর্থ কতটা ফেরত আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রযোজকরা টাকা ফেরত দেওয়ার গ্যারান্টি চেয়েছেন প্রর্শকদের কাছে আর প্রদর্শকরা বলেছেন ছবি যে মানসম্মত এই গ্যারান্টি আগেই দিতে হবে প্রযোজকদের। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে অক্টোবরে সিনেমা হল খোলার পরও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ছবি মুক্তি পায়নি। এতে হতাশ প্রদর্শকরা। অন্যদিকে প্রযোজকরা অনুকূল পরিবেশের অভাবে ছবি মুক্তি দিতে না পেরে হা-পিত্যেশ করছেন। এদিকে গত ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে অনেক নির্মাতা ও শিল্পী আশায় বুক বেঁধে ছবি নির্মাণে নেমে পড়লেও শেষ পর্যন্ত করোনার কারণে ছবি মুক্তি দিতে না পেরে চরম হতাশায় পড়েন। এদিকে করোনার লকডাউনের কারণে প্রায় ৭ মাস বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১৬ অক্টোবর সরকারি ঘোষণায় সিনেমা হল খুললেও এরপর আর কোনো লকডাউনের সরকারি প্রজ্ঞাপনে সিনেমা হল বন্ধের কোনো নিদের্শ ছিল না বলে জানিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, সিনেমা হল বন্ধে সরকারি নির্দেশ না থাকলেও জেলা প্রশাসক ঈদে পুলিশ দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে অনেক সিনেমা হল বন্ধ করে দেন। এতে প্রযোজক-প্রদর্শকরা চরম আর্থিক লোকসানের কবলে পড়েন। প্রদর্শকদের প্রত্যাশা বছরের দুই ঈদ যেহেতু চলচ্চিত্র ব্যবসার প্রধান মৌসুম, তাই আসন্ন ঈদুল আজহায় যেহেতু অনেক নির্মাতা মানসম্মত ছবি মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাই এখন আমরা চলচ্চিত্র ব্যবসা নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছি। এ ক্ষেত্রে সরকারসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সর্বমহলের সহযোগিতা কামনা করছি, একই সঙ্গে দর্শকদের প্রতি অনুরোধ আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হলে আসুন চলচ্চিত্রকে বাঁচান। এদিকে দেশে বর্তমানে ৬০টিরও কম সিনেমা হল চালু আছে বলে জানিয়ে প্রদর্শক সমিতি জানায়, ঈদে যদি একাধিক তারকাবহুল মানসম্মত  ছবি মুক্তি পায় তাহলে কমপক্ষে তিন শতাধিক সিনেমা হল নতুন করে চালু হবে।

সর্বশেষ খবর