মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার

যুদ্ধের সময়কার জন্মদিনটার কথা মনে পড়ছে

তারিক আনাম খান

যুদ্ধের সময়কার জন্মদিনটার কথা মনে পড়ছে

বিশেষ সাক্ষাৎকার । তারিক আনাম খান

= যুদ্ধের সময়কার জন্মদিনটার কথা মনে পড়ছে

তারিক আনাম খান। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের একজন দাপুটে অভিনেতা এবং নাট্যনির্দেশক। অভিনয় জগতে পথচলা দীর্ঘদিনের। ক্যারিয়ারে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, এখনো করছেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও। আজ এই নাট্যজনের জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে অভিনয় জীবনের জানা-অজানা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তঁঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

শুভ জন্মদিন! কেমন আছেন? বিশেষ এই দিনটি কীভাবে কাটবে?

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। ভালো ও সুস্থ আছি। আর বিশেষ দিন বলে তেমন কিছু নেই। এটা তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই দিনটি পালনের জন্য আমার তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে না। এটা পরিবারের ওপরই ছেড়ে দেই। তারা আমাকে কীভাবে চমকে দেবে, তার পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রাখে। নানারকম সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তারা মুখিয়ে থাকে। রাত ১২টার পর থেকেই নিমা, ছেলে ও ছেলের বউ আমাকে চমকে দেয় ফুল দিয়ে, কেক কেটে। এরপর সারা দিন পরিবারের সবাই মিলে  ঘোরাঘুরি করি ও আড্ডা দেই। সত্যিই বিষয়গুলো আনন্দের। আর আমার দল নাট্যকেন্দ্রে যখন কাজ থাকত, নিয়মিত যেতাম-তখন সবাই ফুল দিয়ে, কেক কেটে জন্মদিনটা বিশাল করে উদযাপন করত। এখন তো গ্রুপে তেমন করে যাওয়া হয় না। আসলে জন্মদিনটা অন্য মানুষরাই স্মরণ করে থাকে, নিজের কোনো পরিকল্পনা থাকে না কারও। তবে আজ ৭১-এর যুদ্ধের সময়কার জন্মদিনটার কথা মনে পড়ছে। আমি যেসময় যুদ্ধের ট্রেনিংয়ে যাব, সে সময় ভয়ংকর রকম অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন আমার চিকেন পক্স হয়। প্রায় এক মাস অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কি যে কষ্টের জীবন, সেই উত্তাল মুক্তিযুদ্ধের সময় বলে বোঝানো যাবে না। অনেকেই মনে করে, একটি স্টেনগান নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেই হলো, ব্যস! আসলে কিন্তু তা নয়। এক মাস ধরে আমি শুধু একটি লুঙ্গি আর একটি খদ্দরের পাঞ্জাবি পরে থেকেছি। সুস্থ হলে এরপর ঠিক করলাম, সবাই তো মুক্তিযুদ্ধ করছে, আমাদের কিছু করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে এরপর গান-নাটক করেছি।

 

মা-বাবার সঙ্গে কাটানো শৈশবের জন্মদিনের কথা মনে পড়ে?

মা-বাবার কথা খুব করে মনে পড়ে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার জন্মদিন নিয়ে বাবাই বেশি উদগ্রীব থাকতেন। আর মা পায়েস-সেমাইসহ কিছু রান্না করতেন। দিনগুলো কেমন করে চলে যায়! তবে সেই সময়গুলো ভেবে এখনো স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। শৈশবের জন্মদিন আর এখনকার জন্মদিন পালনের মধ্যে কত বিস্তর ফারাক! সময়ের সঙ্গে সব বদলে যায়।

 

হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে আপনার ছিল সখ্য তাঁকে নিয়ে মজার কিছু স্মৃতি জানতে চাই...

হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তো প্রতিটি মুহূর্তই মজার। তাঁর সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হতো। ফরীদির সঙ্গে ক্রিয়েটিভ আলোচনা ছিল খুবই ইন্টারেস্টিং। তাঁর কথায় ছিল মুগ্ধতা। এমনো হয়েছে সে এক ঘণ্টা ধরে জোকস বলছে কেউ বিরক্ত হয়নি, সবাই হেসেই যাচ্ছিল। তাঁর কথায় সময় কীভাবে যে চলে গেছে কেউ টেরই পেত না। আমার নাট্যকেন্দ্র করার পেছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। অ™ভুত স্বভাবের ছিল সে। সে সবসময় আউট অব দ্য ফ্রেম থাকতে চাইত। আমরা তিন-চার বছর একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি। ও ওর ইচ্ছামতো চলত। ভালো লাগলে চাকরি করত, না লাগলে ছেড়ে দিয়ে চলে আসত। ছবি দেখা, আবৃত্তি করা, আড্ডা দেওয়া, জোকস করা তাঁর খুবই পছন্দ ছিল। ফিল্মে সে লেট করে যেত, লেট করে আসত। ভালো লাগলে করেছে, না লাগলে করেনি। আমি মনে করি, ফিল্মে হুমায়ুন ফরীদি টোটালি নিজেকে ওয়েস্টেড করেছে। ও মোটামুটিভাবে নিজেকে কমার্শিয়ালাইজড বেশি করেছে।

 

ব্রিটিশ কাউন্সিলে শেকসপিয়রের নাটক ম্যাকবেথে কাজ করতে গিয়ে নিমা রহমানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁকে কি আগে থেকেই চিনতেন?

হুমম... আগে থেকেই চিনতাম। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাস করে আসার পর নিমার মামা মুস্তফা মনোয়ারের সঙ্গে কাজ করতাম। তখন নিমাও পাপেটে ভয়েজ দিত। তখন থেকে চিনি।

 

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম দিককার কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন...

হুমম... তবে ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে কাজ করতে গিয়ে একটু মনোমালিন্য হয়। তাঁর শেষ কাজ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র জমিদার চরিত্রেও কাজ করেছি। তিনি অসাধারণ ছিলেন তাঁর লেখায়।

 

আপনাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং বৈচিত্র্যময় চরিত্রে খুঁজে পাওয়া যায় অভিনয়ের কোনো সূত্র বিশ্বাস করেন?

অভিনয়ের কিছু কনসেপ্ট বিশ্বাস করি। মানুষের টেনডেনসি হলো স্বাভাবিক মানুষকে দেখা। আমি যে কয়টা চরিত্র করেছি, চিন্তা করেছি সেটা যেন মানুষের জীবনের সঙ্গে মেলে, দেখে, বিশ্বাস করে। গ্রহণযোগ্য অভিনয়ই সবার করা উচিত। আই অলওয়েজ লার্ন। এটা খুবই ইমপোর্টেন্ট। ফরীদি, আসাদ, বাচ্চু ভাই, আলী যাকের, সারা যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত- এদের সঙ্গে মিশে কিন্তু আমি অনেক ঋদ্ধ হয়েছি; অনেক কিছু শিখেছি। সবারই শেখার অ্যাটিচিউড রাখাটা কিন্তু খুবই জরুরি। মানুষ আসলে একটি কূপমণ্ডূক জায়গার মধ্যে মানে একটি হাঁড়ির মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। এটিকে ভাঙতে হবে। আর একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, আমি এখনো হাতে লিখি। আমার মস্তিষ্ক আর কলমের আগার মধ্যে সংযোগ না হলে কিছুই লিখতে পারি না।

 

এবার বেশ কিছু কাজ করেছেন ঈদে কিছু প্রচারও হয়েছে সেগুলো নিয়ে অভিমত কী?

আমাদের তো কাজ করার সুযোগ কম। তবুও নির্মাতারা নতুন নতুন চরিত্রে যে আমাকে নিয়ে ভাবেন, তা সত্যিই আনন্দের। যেটুকু করি, ঠিকঠাকমতো করতে চাই। কাজগুলো করে তৃপ্তির জায়গা থাকে। তবে অতৃপ্তির জায়গাটা বেশি থাকে। এবার ঈদে টফিতে আমার অভিনীত ‘মৃধা বনাম মৃধা’ দেখানো হয়েছে। বঙ্গটিভিতে বঙ্গ বব সিজনে ‘সাদা প্রাইভেট’ অবমুক্ত হয়েছে। রাজের ‘নয়া লাইলী নয়া মজনু’, ‘লাইক ফাদার লাইক সন’, প্রসূন রহমানের ওয়েব ফিল্ম ‘জিরো পয়েন্ট’, হইচইয়ের ‘দৌড়’ করেছি। এগুলো নিয়ে সবার রেসপন্স অনেক ভালো।

 

মাইকনামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সব মিলিয়ে কেমন হলো?

সম্প্রতি কাজটি শেষ করেছি। ‘মাইক’ নামের এই সিনেমাটি ভালোই হবে মনে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সিনেমাটি। আসলে নতুন কোনো কাজ ভালো মনে হলে করি, না হলে করি না। আগামী বছর ভালো কাজ করতে হবে।

 

এবার ঈদে সিনেমা হল জেগে উঠেছে এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কতটা আশাবাদী?

শুনে ভালোই লাগছে। ভালো কিছু সিনেমা দেখতে দর্শক হলে ফিরছে। এটা ইতিবাচক। আমি আশাবাদী সবসময়। এখন তো নতুন অনেক নির্মাতা ভালো ভালো কাজ করছেন। নতুন কনসেপ্ট নিয়ে সিনেমা-ওয়েব ফিল্ম তৈরি করছেন। এটা সুখের বিষয়। চাই দেশ ভালো থাকুক। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ হোক।

সর্বশেষ খবর