শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : কাজী হায়াৎ

ছবির ব্যবসা এখন শুধু সিনেমা হলের ওপর নির্ভরশীল নয়

ছবির ব্যবসা এখন শুধু সিনেমা হলের ওপর নির্ভরশীল নয়

দেশীয় চলচ্চিত্রের অবস্থা স্থিতিশীল থাকছে না। কখনো আশার আলো দেখা দিলে পরক্ষণে আবার তা নিরাশায় পতিত হয়। কেন এই অবস্থা। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ।  তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

প্রথমেই জানতে চাইব, কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি, তবে চলচ্চিত্র জগতের ভঙ্গুর অবস্থা দেখে মানসিকভাবে ভালো নেই। এই শিল্পের এমন দুরবস্থা হওয়ার কথা নয়। অপরিপক্ব কাজ ও চিন্তাই এর জন্য দায়ী বলে মনে করি।

*অপরিপক্ব কাজ বলতে আসলে কি বোঝাতে চাইছিলেন?

আমি বলব একটি ছবি নির্মাণ করতে গেলে ক্যারেক্টার অনুযায়ী প্রপার আর্টিস্ট নিতে হবে। অথচ এখন তা হচ্ছে না। অনেক নির্মাতা এখন এমন সব আর্টিস্ট নিয়ে কাজ করছেন যাঁরা সেই চরিত্রটি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারছেন না। একই সঙ্গে এসব নির্মাতাও তাঁদের কাছ থেকে প্রপারলি কাজটি আদায় করে নিতে পারছেন না। এ ছাড়া আরও কারণ আছে, যেমন গল্প ও ভাষা যথাযথ হচ্ছে না। নাটকে ব্যবহার করা আঞ্চলিক ভাষার মতো ভাষা ছবিতে ব্যবহার করে দর্শকের মনে বিরক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে চলচ্চিত্র ও নাটকের ভাষা কিন্তু এক নয়। এখন অল্প শিক্ষিত আনকোরা নির্মাতাদের হাতে পড়ে সিনেমার ভাষা হয়ে গেছে ‘সোজা ভাষা’, যা দর্শক গ্রহণ করতে পারছে না বলেই এসব ছবি চলছে না। দর্শকেরও দেশীয় ছবির প্রতি অনাগ্রহ বাড়ছে। আগের মতো সাম্প্রতিক সময় একানাগাড়ে বেশকটি ছবির ব্যর্থতার কারণ এসবই।

এ অবস্থার উন্নতি কীভাবে সম্ভব?

উন্নতির পথ কঠিন কিছু নয়, চলচ্চিত্র সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান আহরণ করে প্রপারলি চলচ্চিত্রের ভাষায় ছবি নির্মাণ করতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বর্তমানে কি আসলেই শিল্পী সংকট রয়েছে?

মোটেও না, ভালো নির্মাতার হাতে প্রতিনিয়ত শিল্পী ও তারকা তৈরি সম্ভব। যা আগেও হয়েছে। এখন ভালো নির্মাতার বড়ই অভাব। যাঁরা উপযুক্ত সিনেমা ও তারকা নির্মাণ করতে পারেন তাঁদের হাতে এখন কোনো ছবি নেই।

কেন এ অবস্থা?

এর কারণ আসলে অনেক। চলচ্চিত্রের নানা প্রতিকূল অবস্থা দেখে প্রকৃত নির্মাতারা নির্মাণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া কোনো অর্থলগ্নিকারক এ খাতে বিনিয়োগ করতে এলে কিছু নামসর্বস্ব নির্মাতা তাঁদের মৌমাছির মতো ঘিরে ধরেন। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থলগ্নিকারকরা বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন আর যাঁরা লগ্নি করছেন তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লোকসানের কবলে পড়ছেন।

 

বিদেশি ছবি আমদানি করে ছবির সংকট কাটানো সম্ভব?

বিদেশি ছবি আমদানিতে কোনো ক্ষতি নেই। বরং লাভ আছে, কারণ এতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে প্রকৃত নির্মাতারাই টিকে থাকবেন এবং মানসম্মত ছবি নির্মাণ হবে। তবে এর আগে নিজেদেরই বিগ বাজেটের ভালো ছবি নির্মাণের চেষ্টা করতে হবে। শুধু বিদেশি ছবির ওপর নির্ভরশীল হলে তো সংকট কাটবে না।

 

কিন্তু সিনেমা হল খুবই স্বল্প, বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণ কীভাবে সম্ভব?

বর্তমান সময় বিশ্বের কোথাও শুধু সিনেমা হলের ওপর চলচ্চিত্র শিল্প নির্ভর করে না। সিনেমা চালানোর অনেক পথ তৈরি হয়েছে। যেমন- স্যাটেলাইট রাইট, অনলাইন প্ল্যাটফরম এবং ইউটিউব। এ ছাড়া আরও অনেক পথ রয়েছে, যেখান থেকে সিনেমা হলের পাশাপাশি বড় অঙ্কের আয় করা সম্ভব। একই সঙ্গে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের ছবিও যদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণ করে লোকসান কেন গুনতে হবে। বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণে এ দেশের করপোরেট হাউসগুলো এগিয়ে এলে বড় মাপের বিনিয়োগের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

 

সরকারি অনুদানের ছবি সংকট কাটাতে কতটা ভূমিকা রাখছে?

সরকারি অনুদান অবশ্যই সংকট কাটাতে ভূমিকা রাখে। তবে যাঁরা অনুদান নিয়ে ছবি নির্মাণ করেন তাঁরা যেন সত্যজিৎ রায় হতে না চান,  তাঁদের হতে হবে মহেশ ভাট। তাহলে এ ক্ষেত্রে সরকার, নির্মাতা, প্রদর্শক সবাই উপকৃত হবে। কারণ বাণিজ্যিক ধাঁচের সুস্থ ধারার ছবি নির্মাণ করলেই দর্শক অবশ্যই তা দেখে।

সর্বশেষ খবর