কাজী হায়াৎ, একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকার। চলচ্চিত্রের এই অভিভাবক সাম্প্রতিক সময়ে এই জগতের নানা খবরে যেমন আশার আলো দেখছেন তেমনি আবার উৎকণ্ঠিতও। তাঁর আশা-নিরাশার কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ
চলতি বছর মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ছবি দুটি দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন পর বাংলা ছবির এমন সাফল্য কীভাবে দেখছেন?
দেশীয় চলচ্চিত্রের দীর্ঘ খরার মাঝে এমন সুখবর সত্যিই আশার সঞ্চার করে। তবে এই ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে বজায় থাকে না বলে দুঃখ হয়। এতে প্রমাণ হয় ওই ছবি দুটির মান ভালো ছিল। আরও বোঝা যায় মানসম্মত ছবি নির্মাণ করলে দর্শক দেশীয় ছবি দেখে এবং দেশের চলচ্চিত্রের প্রতি তাদের সত্যিকারের প্রেম আছে। যা কোনো দিনই কমবে না।
মানসম্মত ছবির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না কেন?
আসলে মানসম্মত ছবি নির্মাণের জন্য গুণী নির্মাতার প্রয়োজন। যেমন রায়হান রাফি ও মেজবাউর রহমান সুমনের মতো দুটি তরুণ এবং মেধাবী নির্মাতা যে অসাধারণ ছবিগুলো নির্মাণ করল তার প্রশংসা করতেই হয়। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে ভালো ছবি নির্মাণের শিক্ষা সবার নেওয়া উচিত। বেশির ভাগ নির্মাতাই গল্প ও নির্মাণশৈলী সর্বোপরি মানের দিকে লক্ষ্য রাখে না বলেই মানসম্মত ছবির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না।
মানসম্মত ছবি নির্মাণে প্রধান উপাত্ত কী?
ছবির মান বজায় রাখতে প্রধান উপাত্ত হচ্ছে গল্প ও নির্মাণশৈলী। তবে শুধু ভালো গল্প হলেই চলবে না। নির্মাণও মানসম্মত হতে হবে। এর জন্য নির্মাতাকে অবশ্যই মেধাবী হতে হবে।
মানসম্মত ছবি নির্মাণে শিল্পীর দায়বদ্ধতা কতখানি বলে মনে করেন?
অবশ্যই একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতা অনেক। একজন শিল্পীকে চরিত্র অনুযায়ী অবশ্যই সেই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার গুণ থাকতে হবে। শিল্পীকে চরিত্রটি নিজের মধ্যে ধারণ করে ওই চরিত্রের সঠিক মানুষ হয়ে ওঠতে হবে। তাহলেই সেই শিল্পী ও চলচ্চিত্রটি উৎরে যাবে।
মানসম্মত ছবি নির্মাণে একজন নির্মাতার জন্য কী ব্যবস্থা থাকা দরকার?
আমি দুঃখ করে বলব, চলচ্চিত্র সমিতিগুলোর কী কাজ আমি জানি না। আমি যদি পরিচালক সমিতির প্রধান হতাম তাহলে এই যে দুটি তরুণ ও মেধাবী ছেলে রায়হান রাফি এবং মেজবাহর রহমান সুমন, যারা এমন দর্শকগ্রহণযোগ্য ছবি নির্মাণ করে অভাবনীয় ঘটনা ঘটিয়ে দিল তাদের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করতাম। এতে ভালো কাজের প্রতি তাদের উৎসাহ বহুগুণ বেড়ে যেত। আমার জানামতে আমার নির্মিত চলচ্চিত্র দিয়ে সিনেমা হলের ব্ল্যাকাররাও লাভবান হতো। এতে একটি সিনেমা হলের ব্ল্যাকাররা আমাকে সংবর্ধনা দিতে চেয়েও আমার আপত্তির কারণে পারেনি কিন্তু আমাকে একটি স্বর্ণের চেইন গিফট করেছিল। আরেকবার সিনেমা হলের কয়েকজন প্রতিনিধি মিলে আমাকে সংবর্ধনা দিতে আমার অফিসে আমার জন্য ফুলের মালা নিয়ে এসেছিল। অন্য আরেকটি ঘটনা হলো প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালক সমিতির সভাপতি থাকাকালে আমার ‘ইতিহাস’ ছবিটির সাফল্যের জন্য আমাকে ও আমার ছেলে এই ছবির নায়ক কাজী মারূফকে এফডিসিতে সব পরিচালকের উপস্থিতিতে বিশাল সংবর্ধনা দিয়েছিল। এভাবে যদি যারা ভালো কাজ করে, তাদের সম্মানিত করা হয়, তাহলে কেউ ছোট হয় না। বরং গুণী নির্মাতারা উৎসাহিত হয় এবং কাজের প্রতি তাদের ডেডিকেশন বহুগুণে বেড়ে যায়। সিনেপ্লেক্স এবং সিনেমা হলের মালিকরাও চলচ্চিত্রের চরম খরার মধ্যে বহুদিন পর আবার বড় অঙ্কের মুনাফার মুখ দেখল। এতে কী প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে এই দুই সফল নির্মাতাকে উৎসাহিত করতে সংবর্ধনা দেওয়া উচিত ছিল না।
এবার অন্য প্রসঙ্গ। বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে প্রেম, পরিণয় ও বিচ্ছেদের কিছু ঘটনা দর্শক-ভক্তদের মনে চলচ্চিত্রের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম দিচ্ছে, এ বিষয়ে কী বলবেন?
আমি বলব এগুলো অবশ্যই স্বাভাবিক ঘটনা। বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে তালাকের ব্যাপারটি নানা কারণে অনেক বেড়ে গেছে। তবে সাধারণ মানুষের এমন ঘটনা তেমনভাবে প্রকাশ পায় না। কিন্তু শোবিজ জগতের সেলিব্রেটিদের প্রতি মানুষের অসীম আগ্রহ থাকায় তাদের ঘটনাগুলো বেশি প্রকাশ পায়। আর সেলিব্রেটিদের এমন নেতিবাচক ঘটনায় দর্শক-ভক্তরা আঘাত পায়, তারা কষ্ট পায়, ব্যথিত হয়। চলচ্চিত্রের মানুষ সম্পর্কে তাদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। তাই এ ধরনের কাজ থেকে খ্যাতিমান সেলিব্রেটিদের দূরে ও সতর্ক থাকা উচিত। না হলে আমাদের বর্তমান সময়ের খরাকবলিত চলচ্চিত্র আরও দুর্দশায় পতিত হবে।