বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : সামিনা চৌধুরী

জঘন্য পলিটিক্সের শিকার হয়েছিলাম

জঘন্য পলিটিক্সের শিকার হয়েছিলাম

সামিনা চৌধুরী। তাঁর পরিচয়ের জন্য নামটাই যথেষ্ট। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান।  গানের সব মাধ্যমেই কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন এই সুকণ্ঠী গায়িকা। সম্প্রতি রিয়েলিটি শো ‘সেরাকণ্ঠ’ বিচারক হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন? মনে হচ্ছে বাসায় আছেন

মোটামুটি ভালো আছি। আর হ্যাঁ, এখন বাসায় রয়েছি।

 

রুনা লায়লা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পাশাপাশি আপনাকেও চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ সিজন- এর বিচারকের আসনে দেখা যাবে...

হ্যাঁ, বিচারক হিসেবে আছি। তবে আমি বিচারক হিসেবে কিছুটা কঠিন, এটা সবাই জানে। যখন আমি বিচারকের আসনে বসি তখন কাউকে চিনি না। আসলে বিচারের কাজটা খুবই কঠিন। অনেক সময় মন খারাপ লাগে প্রতিযোগীদের কেউ বাদ পড়লে। কিন্তু কিছুই তো তখন করার নেই... হাহাহা। এসব ক্ষেত্রে নিউট্রাল থাকাটাই জরুরি। সেভাবে থেকে এবারও কাজ করার চেষ্টা করে যাব। আশা করছি, এই প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে জেনুইন শিল্পী বের হয়ে আসবে। তবে আমি এই আসরে বিশ্বজিৎদাকে খুবই মিস করব। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাইকেও। আমি, বিশ্বজিৎদা ও বুলবুল ভাই একসঙ্গে ‘ক্লোজআপ ওয়ান’-এর বিচার কাজ করেছিলাম। সেগুলো সুন্দর স্মৃতি। এরপর তো সেরাকণ্ঠের বিচারক ছিলাম। আমার সঙ্গে বিশ্বজিৎদাও ছিলেন। সত্যিই এবার এই আসরে বিশ্বজিৎদাকে খুবই খুবই মিস করব। তিনি এই সময় ব্যস্ততার মধ্যে আছেন। তাই আমরা যাঁরা আছি তাঁরা এই অনুষ্ঠানকে সুন্দর করে সাজাতে চাই। আমার যা বলার থাকবে তা হলো, প্রতিযোগী যারা অংশ নেবে তারা যেন সর্বদা হাসি-খুশি থাকে। টেনশনে যেন না থাকে। খুশি খুশি মনে গান গাইবে, এরপর খুশি মনে চলে যাবে।

 

অন্য প্রসঙ্গে আসি, নতুন কোনো গান আসছে?

নতুন নতুন অনেক গানই তো ঝুলে আছে। অনেক গান করেছি। প্রস্তুত আছে কিছু। তবে নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে চেষ্টা থাকবে প্রতি মাসে অন্তত একটি করে গান করার। সামনের মাসে সফিক তুহিনের সুরে মাজহারুল ভাইয়ের কথায় একটি গান আসবে।

 

কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গে কয়টি কাজ করেছেন?

কেউ বিশ্বাস করবে না যে, আমি তাঁর কোনো গানই করিনি! তাঁর সঙ্গে একটাও গান নেই। অবশ্য এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে কাজ হয়নি। আমার এত বছরের সংগীত জীবনে আমি মাত্র একটি গান করেছি শ্রদ্ধেয় আলম খানের সুরে।

 

বাবার গান নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

বাবার গান তো সবসময়ই করি। সবাই বাবার গান শুনে। গাইতে বলে। সারা বছরই স্টেজেও তাঁর গান করি। সামনেও অব্যাহত থাকবে।

 

নচিকেতাসহ অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছেন সংগীতের ক্ষেত্রে ওপারের শিল্পীরা কতটা প্রফেশনাল?

প্রফেশনাল বিষয়টি একেক দেশের শিল্পীর ক্ষেত্রে একেক রকম। ওপারের শিল্পীরা একটু প্রফেশনাল বেশি। তবে এ দেশের শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, মিউজিক ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করে আমি বেশি আরাম পাই। তাঁরাও সংগীত ভালো বোঝেন। আগে একটা গান হলে সবাই সেটি নিয়ে বসতাম, গাইতাম। এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। বাংলাদেশের সবার সঙ্গে কাজ করাটা আনন্দের। শুধু নচিকেতাই নয়; আমি ওপারের জয় সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। আরেকজন আছেন আশুতোষ। অনেক সুন্দর মিউজিক ডিরেকশন দেন তিনি। এরপর রুপোজ্জল মজুমদারের কথা বলতেই হবে। দুই বোন মিলে বাবার ‘ওগো মোর মধুমিতা’ গানটি নতুন করে গেয়েছি। সে কিন্তু নন্দিত সুরকার প্রবীর মজুমদারের ছেলে। তবুও বাংলাদেশকেই প্রেফার করি।

 

গান গাওয়া ছাড়া আপনাকে অভিনয়েও দেখা গেছে...

আমার আম্মু পছন্দ করেন না। জানি না সামনে আর করা হবে কি না!

 

সামনে বাইরের কোনো স্টেজ শো করছেন?

বাইরে? না। শীতকালে বাইরে তো শো কম হয়। আমিও তেমন করে করি না।

 

পুরনো গান আর এখনকার গান কোনটা ভালো?

শ্রোতারা যা বলবে সেটিই আসল। তবে এখন অনেক ভালো ভালো গান হচ্ছে। আগেকার দিনের গানে যেসব কারুকাজ ছিল, এখনকার দিনের গানে সেগুলো খুব কম ব্যবহার হয়।

 

দীর্ঘদিন আপনাকে সংগীত জগতের বাইরে রাখা হয়েছিল বিষয়টি একটু খোলাসা করবেন কি?

জঘন্য পলিটিক্সের শিকার হয়েছিলাম। ১০-১৫ বছর গান গাইতে দেয়নি কোনো এক শিল্পী। আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল সব জায়গা থেকে। তার নাম বলতে চাই না, সবাই তাহলে জেনে যাবে। আর নাম বললে সে লজ্জা পাবে।

অন্য আরেকটি কারণ ছিল ভারতের গানের সুর নকল করে গাওয়ার বিরুদ্ধে। আমি তখন পত্রিকায় বলেছিলাম এটা উচিত নয়। তখন অনেকেরই গায়ে এটা লেগেছিল। এরপর বিভিন্ন পলিটিক্স শুরু হয়ে যায়। দীর্ঘ বছর গান গাইতে দেয়নি তারা। লবিং না করার কারণেই পিছিয়ে ছিলাম- এখন তা বুঝতে পারি। সেটি তখন করতে পারলে এক ধরনের ক্যারিয়ার তৈরি হতো ঠিকই, তবে মানসিক শান্তি আসত না।

তবে আমি মানসিকভাবে শান্তি পাই এখনো যে, লবিং ছাড়াও এতদূর আসতে পেরেছি। জীবনের শেষে এসে মনে শান্তি নিয়ে বলতে পারি, পলিটিক্স কখনো করিনি। শুধু গান দিয়ে কিছু মানুষের মনে এখনো রয়েছি ভালোবাসায়।

 

ভালো সংগীতশিল্পী হতে হলে কী কী গুণ থাকা দরকার?

ভালো কণ্ঠ থাকতে হবে, এর সঙ্গে ব্যক্তিত্ব। আর থাকতে হবে গান নিয়ে কঠোর সাধনা। গলাটাকে আরও কীভাবে দিন দিন সুমধুর করা যায়, তার সাধনা করা।

সর্বশেষ খবর